বরগুনা-ঢাকা নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ

এফএনএস (মোঃ হাফিজুর রহমান; বরগুনা) : : | প্রকাশ: ২৩ আগস্ট, ২০২৩, ০৪:৪১ এএম

বরগুনা-ঢাকা নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে লঞ্চ মালিক কর্তৃপক্ষ। হঠাৎ লঞ্চ বন্ধ করে দেওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে যাত্রীরা। 

মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়। এতে করে পণ্য পরিবহনে ব্যয় বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। লঞ্চ মালিকপক্ষ বলছেন, জ¦ালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে গত এক বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকার লোকসান হয়েছে তাদের। তাই বাধ্য হয়ে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। 

সরেজমিনে মঙ্গলবার বরগুনা লঞ্চ ঘাটে গেলে দেখা যায় জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ঢাকাগামী যাত্রীরা এসে ফিরে যাচ্ছেন। এ সময় আহসান হাবীব নামে এক যাত্রী বলেন, জরুরী প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাসে না গিয়ে লঞ্চে যাতায়াত করত। কিন্তু অনির্দিষ্টকালের জন্য লঞ্চ চলাচল বন্ধের খবরে চরম ভোগান্তিতে পড়েছি আমরা।

লঞ্চ যাত্রী রফিকুল ইসলাম  বলেন, লঞ্চে যাত্রা তুলনামূলক ভাবে  আরামদায়ক। নিরাপদ যাতায়াতের জন্য মানুষ এখনো লঞ্চে যাতায়াত করে। কিন্তু বরগুনায় লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যাত্রীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। অসুস্থ রোগীদের কম খরচে লঞ্চে ঢাকা নেওয়া যেত। এখন আর এ উপায় নেই। 

ঢাকা-বরগুনা রুটে চলাচলরত এম কে শিপিং লাইন্স কোম্পানির বরগুনা ঘাটের ম্যানেজার এনায়েত হোসেন বলেন, আগে এই পথে চলাচলকারী একেকটি লঞ্চে বরগুনা নদীবন্দর ঘাট থেকেই প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ যাত্রী হতো। বর্তমানে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ২০০-৩০০ যাত্রী হচ্ছে। যাত্রী সংকট দেখা দিয়েছে।

বরগুনা ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি জহিরুল হক পনু বলেন, এই পথের লঞ্চ চলাচল অব্যাহত থাকা প্রয়োজন। প্রাচীন এই নৌপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বরগুনার ব্যবসা-বানিজ্য হুমকির মুখে পড়বে। পণ্য পরিবহনের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। যার প্রভাব পড়বে বাজারে। এতে করে ক্রেতারাও ক্ষতির মুখে পড়বেন। 

বরগুনা জেলা যাত্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সঞ্জীব দাস বলেন, বরগুনা জেলার ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে লঞ্চ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শুধু কম ভাড়াই নয়, লঞ্চ ভ্রমণ নিরাপদ ও আনন্দদায়ক। এভাবে লঞ্চ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘোষণায় আমরা ব্যথিত হয়েছি। লঞ্চ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয় আমরা আলোচনায় বসব।

বরগুনা নদী বন্দর কর্মকর্তা নিয়াজ মোহাম্মদ খান বলেন, লঞ্চ চলাচল বন্ধ করার পর আমি এম কে শিপিং লাইন্স কোম্পানির মালিককে বেশ কয়েক বার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এরপর আমি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।

এম কে শিপিং লাইন্স কোম্পানির স্বত্বাধিকারী  মাসুম খান বলেন, আমরা ঢাকা-বরগুনা রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রেখেছি। আগে ৬ হাজার লিটার দিয়ে আসা-যাওয়া করতাম। জ¦ালানির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সেখানে এখন ৩ হাজার লিটার দিয়ে আসা-যাওয়া করি। তাতেও প্রতিটি ট্রিপে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার লোকসান হয়। গত মাসে ৩৮ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। তার ওপর চার হাজার কোটি টাকা তেলের দাম বাকি রয়েছে আমার। এত লোকসান দিয়ে আর লঞ্চ চলাচল করাতে পারছি না। জ¦ালানির দাম কিছুটা কমলে হয়তো পুষিয়ে থাকতে পারবো।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW