খুলনার পাইকগাছায় কপিলমুনি মৃত পিতার স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ছোট ভাইকে পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করায় আদালতে মামলা করা হয়েছে। বড়ভাই ও ভ্রাতুষ্পুত্র কর্তৃক মৃত পিতার স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগে আদালতে মামলা করেছেন ভুক্তভাগী ছোটভাই লৌহজাত পণ্য ব্যবসায়ী পঙ্কজ কর্মকার। ঘটনাটি উপজেলার কপিলমুনি বাজারের। এদিকে মামলার খবরে আরো বেপরোয়া বড়ভাই সুকুমার ও তার ছেলে পলাশ কর্মকার পঙ্কজ ও তার পরিবারকে নানাভাবে হয়রানি করতে প্রতিবেশি ব্যবসায়ীসহ স্বগোত্রীয়দের তাদের পেছনে লেলিয়ে দিয়েছেন। এমনকি মিথ্যা নাটক মঞ্চস্থ করে থানায় সাধারণ ডায়েরী পর্যন্ত করাচ্ছেন। একের পর এক এসব হয়রানি থেকে পরিত্রাণ পেতে ইতোমধ্যে পঙ্কজ সংবাদ সম্মেলনও করেছেন। অভিযোগে বলা হয়, কপিলমুনির শহরতলী উত্তর সলুয়া গ্রামের মৃত গোষ্ট কর্মকার তার জীবদ্দশায় কপিলমুনি সহচরী বিদ্যামন্দিরের মালিকানাধীন সম্পত্তিতে নির্মিত মার্কেটের মধ্য থেকে গত ১৯৯৫ সালে ১০ ডিসেম্বর স্কুল কমিটির অনুকূলে অগ্রীম ৫০ হাজার টাকা প্রদানপূর্বক সকল প্রকার বিধি মেনে নিজ নামে স্বর্ণপট্টির একটি পজিশন (দোকান) বন্দোবস্ত নেন। ১৫০ টাকার ননজুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পে লিখিত চুক্তিপত্রে গোষ্ট কর্মকার দ্বিতীয় পক্ষ হিসেবে নিজ নাম জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী গোষ্ট কর্মকার হিসেবে স্বাক্ষর করেন। এরপর ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি জীবদ্দশায় নিয়মিত ভাড়ার টাকা পরিশোধপূর্বক রশিদ সংগ্রহে রাখেন। এরপর ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি গোষ্ট কর্মকারের মৃত্যু হলে ব্যাগ ডেটে গত ১৯৯৯ সালে ১৬ সেপ্টেম্বর তার স্বাক্ষর জাল করে সুকুমার কর্মকার তার নিজ নামে পিতার কাছ থেকে একটি তঞ্চকতাপূর্ণ ভাড়া চুক্তিপত্রে স্বত্ত্ব প্রকাশ করে। এরপর তার বড় ছেলে সুকুমার কর্মকার ঐ পজিশন দখলে নিয়ে সেখানে ছেলে পলাশ কর্মকারকে দিয়ে জুয়েলারীর ব্যবসা করাচ্ছেন। অভিযোগে আরো বলা হয়, মালিকানা হস্তাস্তরে স্কুল কর্তৃপক্ষের দেওয়া শর্তাবলী সমূহের ৫নং শর্ত পজিশন বা দোকানঘর হস্তান্তর করিতে প্রথম পক্ষকে জানিয়ে নতুন ভাড়াটিয়া এগ্রিমেন্ট ফিস বাবদ ১০ হাজার টাকা প্রদানপূর্বক স্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে পৃথক চুক্তিতে আবদ্ধ হইবেন। তঞ্চকতাপূর্ণ ঐ চুক্তিপত্রে স্কুল কর্তৃপক্ষের শর্ত মানা হয়নি। তাছাড়া গোষ্ট কর্মকার জীবদ্দশায় ১৯৯৯ সালে সুকুমার কর্মকারকে মালিকানা হস্তান্তর করলে ২০০৬ সাল পর্যন্ত নিজ নামে স্কুল কর্তৃপক্ষকে ভাড়া প্রদান করে রশিদ সংগ্রহ করবেন কি করে? কেননা, ঐসময় তো নতুন চুক্তিপত্র অনুযায়ী দোকান ঘরের মলিক সুকুমার! এ ছাড়া ১৯৯৯ সালে ১৬ সেপ্টেম্বর চুক্তিপত্র সম্পাদন হয় বলে দেখানো হলেও সেখানে ৩জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষরে তারিখ লেখা হয় যথাক্রমে ২০.০৯.৯৯ ও ২৫.০৯.৯৯। এরমধ্যে তিন জনের একজন ধনঞ্জয় সাধু ইতোমধ্যে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে এফিডেভিট করে দিয়েছেন যে, চুক্তিপত্রে সুকুমার কর্মকারের ছেলে পলাশ কর্মকার তার কাছে একটি ষ্টাম্প নিয়ে তাতে স্বাক্ষর করতে বলায় তিনি স্বাক্ষর করেছিলেন বটে তবে সেখানে গোষ্ট কর্মকার উপস্থিত ছিলেন না। প্রকাশ থাকে যে, গোষ্ট বিহারী কর্মকার নিজ নাম স্বাক্ষরে সবসময় গোষ্ট কর্মকার লিখতেন। এমনকি স্কুল কর্তৃপক্ষের গত ১৯৯৩ সালে ১৮ জুলাই চুক্তিপত্রে নিজ নাম গোষ্ট কর্মকার হিসেবে স্বাক্ষর করলেও সুকুমারের নামীয় তঞ্চকতাপূর্ণ চুক্তিপত্রে নিজ নাম গোষ্ট বিহারী কর্মকার হিসেবে দেখানো হয়েছে। উল্লেখ্য, ঐ চুক্তিপত্রে ব্যবহৃত ননজুডিশিয়াল ১০০ ও ৫০ টাকার ষ্ট্যাম্প দু’টি যথাক্রমে ১৫৩৮৬১৫ ও জ ৫৫৫৮৪৩২ নম্বরের। যেখানে পাশাপাশি সিরিয়াল অনুসরণ করা হয়নি। সর্বশেষ গোষ্ট কর্মকারের ছোট ছেলে পঙ্কজ কর্মকার তার বড়ভাই সুকুমার কর্মকারের কাছে গত ২০২২ সালে ২৭ নভেম্বর বাবার রেখে যাওয়া ঘরের অর্ধাশের ভাগ চাইলে সুকুমার ঐ ১৯৯৯ সালে ১৬ সেপ্টেম্বর তঞ্চকতাপূর্ণ চুক্তিপত্রটি দেখিয়ে তাকে অশ্লীল ভাষায় গালি-গালাজ ও খুন জখম করতে উদ্যত হয়। বাধ্য হয়ে পঙ্কজ গত ২০২২সালে ২০নভেম্বর বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সুকুমারকে প্রধান করে তিন জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে গত ৮.১২.২২ তারিখে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সিআইডি খুলনাকে নির্দেশ দিয়েছেন। যার স্মারক নং ৬৭০/২২। এদিকে মামলার পর থেকে সুকুমার কর্মকার ও তার ছেলে পলাশ কর্মকার বেপরোয়া হয়ে ছোটভাই পঙ্কজ ও তার ছেলে রাম প্রসাদ কর্মকারসহ তার পরিবারকে হয়রানি করতে বিভিন্নজনকে দিয়ে হয়রানি ও হুমকি-ধামকি অব্যাহত রেখেছে। এ ঘটনায় পঙ্কজের ছেলে রাম প্রসাদ কর্মকার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। যার নং ৮১৭। এ ছাড়া প্রকৃত ঘটনা তদন্তে প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনায় ইতোমধ্যে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন ছোটভাই পঙ্কজ কর্মকার।