সর্বজনীন শিক্ষা অবশ্যই নাগরিকের অধিকার। কিন্তু সেই ব্যবস্থার গুণগত মান আমরা কতটা ধরে রাখতে পারবো তা বলা মুশকিল। হু হু করে বাড়ছে শিক্ষার বিভিন্ন সামগ্রীর দাম। উপকরণের মূল্য বৃদ্ধিতে বিপাকে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। সন্তানের শিক্ষার খরচ জোগাতে অভিভাবকদের আয়ের বড় একটি অংশই চলে যাচ্ছে। দেশজুড়ে অনেক অভিভাবকের অবস্থাই এখন আয় কম, খরচ বেশি। তারপরেও শহরের বাইরে উপজেলাগুলোর অনেক অভিভাবক সন্তানকে উন্নত শিক্ষায় শিক্ষিত করতে তাদের আবাসিক স্কুলে ভর্তি করান। যদিও এজন্য শহরে অনেক আবাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেছে। তবে বাংলাদেশের প্রায় ৭ শতাংশ পরিবারকে তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে ঋণ নিতে হয়। দেশে উল্লেখযোগ্য হারে শিক্ষার খরচ বেড়েছে, অতিরিক্ত খরচ বহন করতে অভিভাবকদের নিজেদের দৈনন্দিন প্রয়োজন সংকোচন করতে হচ্ছে। গলাকাটা স্কুল ফি ছাড়াও আরেকটি বড় খরচের খাত প্রাইভেট টিউশন ফি এবং "গাইড বই, স্কুল কপি ও স্টেশনারির দাম বেড়েছে। হোম টিউটরদেরও বেশি বেতন দিতে হচ্ছে। শুধু অভিভাবকদের বেতনই বাড়েনি, অনেকের উল্টো কমেছে," তাই নিত্য দৈনন্দিন খরচ মিটিয়ে শিক্ষা খরচ মেটানো হয়ে পড়েছে খুবি কষ্টের। কাগজের দাম বেড়েছে, এছাড়াও পূর্বে একটি কলমের দাম ছিল ৫ টাকা এখন নিতে হচ্ছে ১০ টাকা। চলতি অর্থবছর ২০২৩-২৪ সালের বাজেটে কলমের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। পরবর্তীতে তা বাজেট আলোচনায় কমিয়ে ৫ শতাংশে চূড়ান্ত করা হয়। এতে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের পরিবারের অনেক শিক্ষার্থী। এমনকি কাগজের দাম ও বেড়েছে। অনেক অভিভাবক সন্তানদের পড়াশোনার খরচ চালাতে পারছেন না। অনেক অভিভাবক এ কারণে ঋণ নিচ্ছেন। কিন্তু এভাবে তারা খুব বেশিদিন চলতে পারবেন না। একারণে সরকারের শিক্ষার পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া উচিৎ। যেমন টিউশন ফি ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট খরচের কিছু অংশ কমিয়ে দেওয়া উচিত সরকারের। সব বিশ্ববিদ্যালয়ে বাড়তি টিউশন ফি পরিশোধ করতে গিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন অভিভাবকরা। তাই আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে যে কোনো পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক রাখা যায়, তার জন্য একটি সমন্বিত জাতীয় শিক্ষা পরিকল্পনা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। সরকার মেয়েদের মতো ছেলেদের জন্যও উপবৃত্তির ব্যবস্থা করতে পারে। পাশাপাশি শিক্ষা উপকরণের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ভয়ানক অপরাধ হিসাবে গণ্য হওয়া উচিত। ওই ধরনের কর্মের জন্য অসাধু ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের শাস্তির আওতায় আনার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। মূলত সরকারি সংস্থাগুলো সক্রিয় হলেই শিক্ষা উপকরণের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।