উন্নয়ন ও জনকল্যাণে সরকার নানা ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করে, কিন্তু সেসব প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি, স্বচ্ছতা ও মান নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন থাকে। অনেক সময় প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীরগতি জনদুর্ভোগের কারণ হয়ে ওঠে। ধীরগতির কারণে প্রকল্পের খরচও বাড়ে। রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়। এ নিয়ে গণমাধ্যমে বহু আলোচনা-সমালোচনা হয়। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি ও মান কোনোটারই উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয় না। দেশে প্রথমবারের মতো নির্মিত হচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বা উড়াল মহাসড়ক। উদ্দেশ্য, ওপর দিয়ে ঢাকা শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যাওয়া। আগামী ২ সেপ্টেম্বর প্রকল্পের আংশিক পথ চালু হতে যাচ্ছে। খুলে দেওয়া হবে কাওলা থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত অংশ। ১৩ বছর পর চালু হচ্ছে প্রকল্পের সাড়ে ১১ কিলোমিটার পথ। প্রকল্পের মূল সড়কের বাকি থাকবে আরো প্রায় ৯ কিলোমিটার। জানা যায়, দেশে অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পগুলোর মধ্যে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি অন্যতম ধীরগতির প্রকল্প। ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি এর চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। অন্যদিকে খুলনার ‘ভৈরব সেতু’ নির্মাণ প্রকল্প নির্ধারিত মেয়াদে শেষ হয়নি। সেতুর জন্য প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণের কাজও বাকি রয়েছে। ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর ভৈরব সেতু প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদন পায়। ২০২০ সালের ২৭ জুলাই সেতু নির্মাণে দরপত্র আহ্বান করা হয়। একই বছরের ১২ নভেম্বর ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি কাজের অনুমোদন দেয়। তবে সেতুর জন্য কোনো জমি অধিগ্রহণ ছাড়াই ২৬ নভেম্বর নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সালের ২৪ মে সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তে সরকারি খাসজমিতে ২৪ নম্বর পিলারে টেস্ট পাইলিংয়ের মাধ্যমে সেতুর কাজ শুরু করে। ২০২২ সালের নভেম্বরে মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সেটি ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে বলে জানা গেছে। ধীরগতিতে চলছে কাজ। অবধারিতভাবেই এই প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে সরকারি অর্থ নষ্ট হবে। বাংলাদেশে কোনো সরকারি প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শুরু হওয়ার উদাহরণ খুব কম। কোনো প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে শেষও হয় না। দফায় দফায় সময় বাড়ানো হয়, আর তাতে ব্যয়ও বেড়ে যায়। বড় প্রকল্পে ব্যয় বাড়ার বিষয়টি লক্ষণীয়। অথচ উন্নত দেশগুলোতে প্রকল্প বিশেষ ব্যতিক্রম না ঘটলে নির্ধারিত সময়েই শেষ হয়। কখনো আগেই শেষ হয়। বাংলাদেশে কোনো সরকারি প্রকল্পের কাজ সময়মতো শুরু বা শেষ হয় না। এ নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। মেয়াদ বাড়িয়েও কেন প্রকল্পের কাজ শেষ হয় না, এ নিয়ে আগেও অনেকবার অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্পের কাজ কেন নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় না? অনেকে মনে করেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব ঘটে। রাজনৈতিক স্বার্থের যোগসাজশও খুঁজে পান অনেকে। যে মাত্রায় বিলম্ব হয় ও খরচ বাড়ে তা স্বাভাবিক নয়। রাষ্ট্রের অর্থের ও সময়ের অপচয় বন্ধ করতে সব প্রকল্পে কাজের গতি বাড়াতে হবে।