আওয়ামী লীগের পদণ্ডপদবীধারী নেতাদের নাম দিয়ে সদ্য ঘোষণা করা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে তীব্র সমালোচনার পাশাপাশি ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। ঘোষিত কমিটি নিয়ে সর্বমহলে ব্যাপক হাস্যরসের খোরাক হয়েছে বিএনপি। ঘটনাটি জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতাদের নাম দিয়ে বিএনপির এক নেতার অনুসারীদের নিয়ে গঠণ করা আগৈলঝাড়া উপজেলার চারটি ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিকে মৌসুমী কমিটি আখ্যায়িত করে বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
বিএনপির ঘোষিত ওই আহ্বায়ক কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করে শনিবার সকালে লিখিত বিবৃতি দিয়েছেন সদ্য ঘোষিত বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে নাম উঠে আসা আওয়ামী লীগের পদণ্ডপদবীধারী নেতৃবৃন্দরা। অপরদিকে সাংগঠনিকভাবে বৈধতা হারানো আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যরা কিভাবে ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন করেছেন তা নিয়েও খোদ বিএনপির উপজেলা আহ্বায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দের মধ্যে চলছে ব্যাপক সমালোচনা।
বিএনপির একাধিক ত্যাগী নেতারা অভিযোগ করে বলেন, সদ্য ঘোষিত ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি হচ্ছে বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনের সাবেক এমপি ও বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপনের অনুসারীদের নিয়ে একটি পকেট কমিটি। যারা আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে নেই। যারা “স্বপন আছে যেখানে’ ‘আমরা আছি সেখানে” শ্লোগানে বিশ্বাসী। তাদের নিয়েই বির্তকিত ওই কমিটি গঠণ করা হয়েছে। এ কমিটিতে দীর্ঘদিন থেকে রাজপথে থাকা বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বরিশাল-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবাহানের অনুসারীদের স্থান মেলেনি। অনুমোদিত ইউনিয়ন বিএনপির আহাবায়ক কমিটিকে অবৈধ আখ্যা দিয়েছেন বিএনপি নেতারা।
সূত্রমতে, গত ২৩ আগস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আগৈলঝাড়া উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের মধ্যে রাজিহার, বাকাল, গৈলা ও রত্নপুর ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত ওই কমিটি অনুমোদনে স্বাক্ষর করেছেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক হিসেবে কবির হোসেন তালুকদার ও সদস্য সচিব হিসেবে মোল্লা বশির আহম্মেদ পান্না।
বিএনপির ওই দুই নেতার স্বাক্ষরিত কমিটিতে তাদের নিজের ইউনিয়ন গৈলার আহ্বায়ক কমিটিতে স্থান দিয়েছেন ওই ইউনিয়নের ৫নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মনির তালুকদারকে বিএনপির ২৪ নম্বর সদস্য। রত্নপুর ১নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য তিন বারের সাবেক ইউপি সদস্য সুরেশ বিশ্বাসকে দেয়া হয়েছে ১৪ নম্বর যুগ্ম সম্পাদক পদে।
শনিবার সকালে মনির তালুকদার ও সুরেশ বিশ্বাস লিখিত বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন, তারা দীর্ঘদিন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে পারিবারিকভাবে জড়িত। বিএনপির একটি গ্রুপ অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করতেই তাদের নাম বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করেছে। বিএনপির ২৩ আগস্ট ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটি প্রত্যাখ্যান করে তাদের নাম ব্যবহার করায় তারা তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ওই বিবৃতিতে তারা ভবিষ্যতে বিএনপি এহেন কাজ করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথাও উল্লেখ করেছেন।
আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপির ৩ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক ও বরিশাল জেলা উত্তর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করা সিনিয়র সহ-সভাপতি ডা. মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, সদ্য ঘোষিত কমিটি একটি অবৈধ পকেট কমিটি। কারণ উপজেলা আহ্বায়ক কমিটি ঘোষনার ৬০ দিনের মধ্যে সকল কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার নির্দেশনা ছিল। ৬০ দিন পরে আহ্বায়ক কমিটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিলুপ্ত হবে। তারপরেও ফেব্রুয়ারি মাসে ঘোষনা করা আগৈলঝাড়া উপজেলা আহ্বায়ক কমিটি প্রত্যাখ্যান করে কমিটির সদস্যরা জেলা সদরে ঝাড়- মিছিল পর্যন্ত করেছে। ইউনিয়নের আহ্বায়ক কমিটিতে যাদের নাম এসেছে তার সবাই মৌসুমী রাজনীতি করা লোক। কোন ত্যাগীরা এখানে স্থান পায়নি। এটা সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপনের পকেট কমিটি।
এ ব্যাপারে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক দাবিদার কবির হোসেন তালুকদার বলেন, যদি আওয়ামী লীগের কোন লোকের নাম বিএনপির কমিটিতে এসে থাকে তাহলে সেটা সংশোধন করে বাদ দেয়া হবে। কমিটির বৈধতা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি একটি বড় দল এখানে দুই মাসের মধ্যে সকল কাজ করা সম্ভব হয়না। তাই কমিটি গঠনে একটু দেরী হলে তাতে অসাংগঠনিক হবার কিছু নেই। সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপনের অনুসারীদের নিয়ে অর্থ বাণিজ্যের মাধ্যমে পকেট কমিটি করা প্রসঙ্গে কবির তালুকদার বলেন, বড় দলে গ্রুপিং থাকেই। যারা এসব কথাবার্তা বলে তারা অসাংগঠনিক কথা বলছেন।