‘ওষুধে বাত, ব্যাথা, গ্যাস-গ্যাস্টিক, আলছার, পেট ব্যাথা, যৌন দুর্বলতা থেকে শুরু করে মেয়েদের বাধক, সুতিকা, তল পেটে ব্যাথা, মাসিক ক্লিয়ার, ঘন ঘন প্রস্বাব, এমনকি শাস কষ্ট বা এজমার মতো কঠিন রোগও ভালো হয় আমার এ ওষুধে’। এ ভাবে বড় সাউন্ড বক্স থেকে আওয়াজ শুনে হাট-বাজারে আসা নারী-পুরুষ ছুটছেন ওই বানিয়াতী ওষুধের দোকানে। আবার কেউ কেউ দোকানের স্থান থেকে বের হওয়া, দুর্গন্ধের চোটে নাকে কাপড় দিয়ে ছুটছেন দোকানের দিকে। সারিয়াকান্দি পৌর এলাকার আবর্জনা ফেলা ও দুর্গন্ধময় স্থানে পশরা সাজিয়ে বসেছেন এমন একজন নামধারী চিকিৎসক। চিকিৎসকের নাম মোহাম্মদ মানিক রতন (৩৫) বাড়ি নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার চাঁচকৌর বাজার গ্রামে। সে ওই গ্রামের মৃত্য সোলেমান মন্ডলের ছেলে। সে লেখাপড়ায় এস এস সি পাস। তিনি দাবি করে বলেন, লেখাপড়া বেশি দূর করতে না পারায় চিকিৎসকের মত একটি মহৎ পেশাকে বেছে নিয়েছেন। চিকিৎসার জন্য প্রথমে তিনি ২’শ টাকার বিনিময়ে হাতে একটি টোকেন ধরিয়ে দিচ্ছেন। ৫ দিন পর দেওয়া হবে ১ মাস কোর্সের পুরো ওষুধ। এ সময় আরও রাখা হবে হাজার টাকা। এক মাসের কোর্স কমপ্লিট করলে, ওই সব রোগ আপনা আপনিই সেরে যাবে। গ্রামের সহজ সরল লোকজন তার এসব কথায় আকৃষ্ট হয়ে টোকেন নিচ্ছেন দেদারসে। মা নিবেদিতা দাওয়া খানার ব্যানারে এ পশরা বসিয়েছ ওই চিকিৎসক। এ ব্যাপারে মঙ্গলবার দুপুরে কথা ওই চিকিৎসক মানিক রতনের সাথে। তিনি বলেন, আমি তো অনেক দিন ধরেই এ চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছি। করোনার মধ্য তো ঢাকায় দোকানদারি করেছি, বিডিআর পুলিশ আর্মি কেউ তো আমার দোকানে মানা করেনি। তবে একটু আকঢাক করে চলতে হয়েছে আমাকে। আমার কাছে কোন ধরনের কাগজপত্র নেই। ট্রেড লাইসেন্সতো আছে আমার। তাতে কি? আমার কোন সমস্যা না হলেই তো হলো। এখানে (সারিয়াকান্দিতে) থানা পুলিশের একজন এ এস আই আমাকে এনে বসে দিয়েছেন। সে গার্লস স্কুল রোড তিনতলায় ভাড়া করা বাসার থাকেন। তিনি আমাকে এখন দেখভাল করছেন। আমার দোকানে ২শ চুয়াল্লিশ পদের গাছ গাছালি ফল ফলাদি রয়েছে। হরেক রকম বাহারি, গাছ- গাছালি, ফল ফলাদি, আমার চিকিৎসার মূল সম্বল। জয়তুন ফলের মতো দামী, দুষ্প্রাপ্য ফলও রয়েছে আমার কাছে। এসব গাছ-গাছালি, ফল-ফলাদী দিয়েই ওষুধ বানানো হয়। যা খেলে অসুখ শতভাগ ভালো হয় আশা করি। কাজলা ইউনিয়নের কুড়িপাড়া চর থেকে আসা সাদেক আলী মোল্লা বলেন, রোগ তো আমার একা হয়নি, বাড়ি আলীকেও অনেক চিকিৎসক দেখিয়েছি, কিন্তু মাসিক ক্লিয়ার হয় না। ওই হেকিমের কথা শুনে ২ টি টোকেন সংগ্রহ করেছি। ২ দিন পর আরও ২ হাজার টাকা দিয়ে পুরো মাসের ওষুধ নিয়ে নিবো। কনীবাড়ী ইউনিয়নের ডাকাত মারা চরের আশরাফুল আলম বলেন ‘শনিবার হাটে এসে তার প্রচারনা শুনে আমি একটি টোকেন নিয়েছি, আমার এ্যাজমা সমস্যা দীর্ঘদিনের। বড় বড় ডাক্তারের ওষুধ খেয়ে দেখলাম, রোগতো ভালো হয় না। শেষ চিকিৎসা মনে করে টোকেন নিয়েছি, ওষুধ নিবো বুধবার’। একই ইউনিয়নের তালতলাচর গ্রাম থেকে আসা মুকুল মন্ডল বলেন, ‘আমার স্ত্রীর অসুখের জন্য অনেক ওষুধ খাইয়েছি মাসিক ক্লিয়ার হলো না। তাই ভাবছি হাজার টাকা দিয়ে আগামী বুধবার পুরো মাসের ওষুধ নিয়ে নিবো’। পৌর এলাকার কৈয়ের পাড়ার গ্রামের সমদালী প্রামাণিক বলেন, ‘বড় বড় ডাক্তারের ওষুধে কাজ হয়না। ইন্ডিয়া থেকেও চিকিৎসা নিয়ে ঘুরে এসেছি আমি। কিন্তু তার গাছ নাকি কথা বলে? এজন্য আমি এবার তার গাছগাছালীর ওষুধ নিতে এসেছি’। এ ব্যাপারে সারিয়াকান্দী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) সবুজ কুমার বসাক বলেন, আমাকে তাদের ফোন নাম্বার থাকলে দেন। এছারাও তাদের তাদের সম্পর্কে ভালো করে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।