আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রস্তুতি শুরু করেছি ক্ষমতাশীল আওয়ামী লীগ। নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকতে জেলা-উপজেলায় পাঠানো হয়েছে বার্তা কিন্তু মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে সম্মেলন হয়নি আওয়ামী লীগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ সংগঠন যুবলীগে। মারা গেছেন সাবেক কমিটির অনেক নেতাকর্মী। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগ চলছে পকেট কমিটি দিয়ে এতে হতাশা প্রকাশ করেছে নেতা কর্মীরা। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গজারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কতটুকু প্রস্তুত এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা। খবর নিয়ে জানা যায়, সর্বশেষ ২০০১ সালে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলা যুবলীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হয়েছিল। সম্মেলনে মাহবুবুল হক মজনু সভাপতি এবং আওলাদ হোসেন মীম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ৭১ সদস্যের সেই কমিটির সভাপতিসহ অনেক নেতা কর্মী মারা গেছেন যারা জীবিত রয়েছেন তাদের অধিকাংশ নিষ্ক্রিয়। তিন বছরের সেই কমিটির মেয়াদ ১৯ বছর আগে পেরিয়ে গেলেও সম্মেলনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অন্যদিকে কোন প্রকার সম্মেলন ছাড়া ২০২১ সালে ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের ভাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের গজারিয়া উপজেলা শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয় হাবিবুর রহমান হাবিব ও ইউনুস প্রধানকে। ৬০ দিনের মধ্যে তাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে জমা দিতে বলা হলেও পেরিয়ে গেছে প্রায় দুই বছর। এদিকে চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি ১০ বছর পরে গজারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে সভাপতি পদে আমিরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক পদে মনসুর আহমেদ খান জিন্নাহ, সহ-সভাপতি পদে রেফায়েত উল্লাহ খান তোতা এবং যুগ্মসাধারণ সম্পাদক হিসেবে আবুল খায়ের মোহাম্মদ আলী খোকনের নাম ঘোষণা করা হলেও এখনো করা যায়নি পূণাঙ্গ কমিটি। বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান নেকী খোকন বলেন, আমরা যারা ছাত্রলীগ করে এসেছি আমাদের সবারই ইচ্ছে ছিল যুবলীগ করে তারপর আওয়ামী লীগের ঢুকবো। আগের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে দীর্ঘ ১৯ বছর আগে এরপর আর কোন সম্মেলন হয়নি। আমরা যারা ছাত্রলীগ করেছি তাদের অধিকাংশের বয়স এখন প্রায় ৫০ বছর। এখনো পর্যন্ত যুবলীগের কমিটি না হওয়ায় আমার মতো অধিকাংশ সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কর্মীর মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমরা গজারিয়া উপজেলা যুবলীগের ব্যানারে উপস্থিত হলেও দলীয় কোন পদ পদবী না থাকায় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।এমতাবস্থায় আমি দ্রুত গজারিয়া উপজেলা যুবলীগের সম্মেলনের দাবি জানাচ্ছি। মুন্সীগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আজিজুল হক পার্থ বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলে দলের শক্তি বাড়াবে বহুগুণ আসন্ন জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্রিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যা সহায়ক হবে। আশা করি আমাদের নেতৃবৃন্দ এ বিষয়ে সুদৃষ্টি দিবেন। বিষয়টি সম্পর্কে ছাত্রলীগ কর্মী তাফসীরুল কোরআন শান্ত বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে মাঠে পরিশ্রম করেছি। আশা ছিল কমিটিতে ভালো কোন পদ পাবো যা আমার ভবিষ্যত রাজনীতির জন্য সহায়ক হবে কিন্তু নতুন কমিটির দীর্ঘ দুই বছর সময় পার করলেও এখনো পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করতে না পারায় আমি হতাশ। বয়স ত্রিশ হতে চললো এমতাবস্থায় আমার মত অসংখ্য নেতাকর্মীর মনে হতাশা বিরাজ করছে। মাঝে মাঝে মনে হয় আমাদের মনে হয় কোন অভিভাবক নাই। ছাত্রলীগের কমিটির বিষয়ে সংগঠনটির গজারিয়া উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ইউনুস প্রধান বলেন, আমরা ইতোমধ্যে কমিটি করে জেলা নেতৃবৃন্দের কাছে জমা দিয়েছি। শোকের মাস চলায় কমিটি অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না। আশা করছি সেপ্টেম্বর মাসেই কমিটি ঘোষণা হবে। গজারিয়া উপজেলা যুবলীগের কমিটি বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলা যুবলীগের সভাপতি শাহ জাহান খান বলেন,আমরা অনেক বার গজারিয়া উপজেলা আওয়ামী যুবলীগকে গতিশীল করার জন্য কমিটি দিতে চেয়েছি কিন্তু কেন্দ্রীয় যুবলীগের দিক নির্দেশনায় বারবার হোচট খেয়েছি,আমরা সেপ্টেম্বর থেকে ওয়ার্ড কমিটি করবো। আওয়ামী লীগের কমিটি বিষয়ে গজারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনসুর আহমেদ খান জিন্নাহ বলেন, আমরা ইতোমধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে জেলা নেতৃবৃন্দের কাছে জমা দিয়েছি। আশা করছি দ্রুতই তারা অনুমোদন দিবেন। যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের কমিটির বিষয়ে আমার বিশেষ কিছু জানা নেই। উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৮ জুন সম্মেলনের পর গত ২৯ জুলাই গজারিয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হলেও পদ বঞ্চিত হওয়ায় এবং কাঙ্খিত পদ না পাওয়ায় নিষ্ক্রিয় অনেক নেতাকর্মী। অন্যদিকে শ্রমিক লীগে পাল্টাপাল্টি কমিটি থাকায় সৃষ্টি হয়েছে সাংগঠনিক জটিলতা, দক্ষ নেতৃত্বের অভাবে নিষ্ক্রিয় কৃষকলীগ নেতা কর্মীরা।অন্যদিকে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগে পকেট কমিটি এবং যুবলীগে দীর্ঘদিন ধরে সম্মেলন না হওয়ায় সাংগঠনিকভাবে গজারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ দুর্বল হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন অনেক নেতা কর্মী।