স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি লুইস রুবিয়ালেসের চুমু-কাণ্ডকে এক কথায় ‘অনুপযুক্ত’ বলেছেন আলেকসান্দের চেফেরিন। এ নিয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে নারাজ উয়েফা প্রধান। তার মতে, ফিফার সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে রুবিয়ালেসের ভবিষ্যৎ। নারী বিশ্বকাপের ফাইনাল জেতার পর স্পেন দলের জেনিফার এরমোসোকে ঠোঁটে চুমু দিয়ে বিতর্কের জন্ম দেন রুবিয়ালেস। তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে একপর্যায়ে ক্ষমা প্রার্থনাও করেন তিনি, কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। ওই কাণ্ডের জন্য গত শনিবার তাকে আপাতত তিন মাসের জন্য সাময়িক নিষিদ্ধ করে ফিফা। আলোচিত এই ঘটনা নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্তা সংস্থা। এরপরই আসবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। গত ২০ অগাস্ট ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ১-০ গোলে হারিয়ে প্রথমবার নারী বিশ্বকাপ ঘরে তোলে স্পেনের মেয়েরা। কিন্তু তাদের সেই প্রাপ্তি আড়ালে পড়ে যায় রুবিয়ালেসের বিতর্কিত চুমু কাণ্ডে। ফরাসি দৈনিক লেকিপের সঙ্গে আলাপচারিতায় এই কারণে হতাশা প্রকাশ করেন চেফেরিন। “আমি একজন আইনজীবী এবং ফিফার সহ-সভাপতিদের একজন। তার (রুবিয়ালেস) ঘটনাটি আন্তর্জাতিক ফেডারেশনের আইন-শৃঙ্খলা বিভাগের হাতে। আমি কোনো মন্তব্য করলে তা চাপ সৃষ্টি করবে।” “আমাকে বলতেই হবে, আমি খুবই হতাশ যে এই ধরনের ঘটনা স্প্যানিশ জাতীয় দলের জয়কে ছাপিয়ে গেছে।” বিশ্বকাপ জয়ের পর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে পদক পরিয়ে দেওয়ার সময়ে ওই বিতর্কিত কাণ্ড করেন রুবিয়ালেস। মঞ্চে স্পেন দলের সব ফুটবলারকেই তিনি আলিঙ্গন করেন, গালে ও কপালে চুমু এঁকে দেন অনেকের। তবে এরমোসোর ক্ষেত্রে ছাড়িয়ে যান সীমা। বেশ কিছুটা সময় আলিঙ্গনে জড়িয়ে রেখে পরে দুহাত দিয়ে মাথায় ধরে ওই ফুটবলারের ঠোঁটে চুমু দিয়ে বসেন তিনি। ৪৬ বছর বয়সী রুবিয়ালেস চাপের মুখে একপর্যায়ে দাবি করেন, ‘দুইজনের সম্মতিতে’ ঘটে ঘটনাটি। তবে তা অস্বীকার করেন এরমোসো। নারী ফুটবলারদের সংগঠন ফুটপ্রো ইউনিয়নের একটি বিবৃতিতে বার্সেলোনার এই ফরোয়ার্ড স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তার সম্মতি ছিল না এতে। স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের (আরএফইএফ) আঞ্চলিক প্রধানরা এরইমধ্যে রুবিয়ালেসকে পদত্যাগ করার অনুরোধ করেছেন। কিন্তু স্বেচ্ছায় দায়িত্ব ছাড়বেন না বলে আগেই ঘোষণা দিয়েছেন রুবিয়ালেস। চেফেরিনের আশা, কাজটি যে ঠিক হয়নি স্বীকার করে নেবেন রুবিয়ালেস। একই সঙ্গে বললেন, ফিফার সিদ্ধান্তকেই চূড়ান্ত বলে মেনে নেবে উয়েফা। “নিশ্চিতভাবেই, সে যে কাজটি করেছে তা ছিল অনুপযুক্ত। আমরা সবাই এটা জানি। আশা করছি, সেও জানে এটা যে অনুচিত ছিল।” “এই মুহূর্তে এটাই যথেষ্ট, কারণ আইন-শৃঙ্খলা কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে।” রুবিয়ালেসের ওই ঘটনার প্রতিবাদে স্পেনের ৮১ জন খেলোয়াড় জানিয়েছে, সভাপতিকে বিদায় করা না হলে দেশের হয়ে আর খেলবেন না তারা। ফুটপ্রো ইউনিয়নের ওই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা খেলোয়াড়দের মধ্যে আছেন জাতীয় দলের বিশ্বকাপ জয়ী ২৩ জন ফুটবলারও। শুধু তাই নয়, স্পেন নারী জাতীয় দলের প্রধান কোচ হোর্হে ভিলদা ছাড়া কোচিং স্টাফের বাকি সব এরইমধ্যে পদত্যাগ করেছেন। বিভিন্ন বয়স ভিত্তিক জাতীয় দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছয় জন কোচও ছেড়ে দিয়েছেন দায়িত্ব। রুবিয়ালেসের ঘটনাটি যৌন নিপীড়নের অপরাধ কিনা, তা নিয়ে এরইমধ্যে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করে দিয়েছে স্প্যানিশ প্রসিকিউটরা। তার বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছে স্পেন সরকারও। স্পেনের ন্যাশনাল স্পোর্টস কাউন্সিলের প্রধান ভিক্তর ফ্রাঙ্কোস গত শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ক্রীড়া আদালতে দোষী প্রমাণিত হলে সাময়িক নিষিদ্ধ হবেন রুবিয়ালেস।