যশোরের চৌগাছায় মৃত মায়ের আত্মার শান্তির জন্য ২ হাজার ফলজ চারা বিতরণ করেছেন এক প্রবাসি শিক্ষিত যুবক। প্রবাসি যুবকের ধারনা যদি অল্প কিছু চারাও পরিপূর্ণ গাছে পরিনত হয়ে ফুল ফল দেয় তাহলে পৃথিবীর প্রাণীকুল উপকৃত হবে। আর এ থেকে সদকায়ে জারিয়া হিসেবে তার মৃত মাসহ আত্মীয় স্বজনরা শান্তি পাবে।
চীনা প্রবাসি শিক্ষিত যুবকের নাম সাইফুল্লাহ (৩০)। তিনি উপজেলার সিংহঝুলি ইউনিয়নের গরিবপুর গ্রামের কৃষক তবিবর রহমানের ছেলে। কয়েকবছর আগে লেখাপড়ার জন্য চীন দেশে যায়। বর্তমানে লেখা পড়া শেষ করে সেখানে একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন।
সাইফুল্লার পিতা তবিবর রহমান জানান, তার এক ছেলে ও এক মেয়ে। দুই ভাইবোনের মধ্যে সাইফুল্লাহ বড়। তিনি বলেন ছেলে মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে সুখেই কাটছিল তার সংসার। কিছুদিন পূর্বে আমার পিতা মতিয়ার রহমান সারা যান। এরপর পরই আমার স্ত্রী নুরজাহান ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। সুখের সংসারে নেমে আসে কালো মেঘের ছায়া। অনেক চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারেনি প্রাণের প্রিয়তমাকে। সাইফুল্লাহ তখন চীনে লেখাপড়া করছিল। ছেলে এখন চাকরি করে। মেয়ে মাদ্রাসায় লেখা পড়া করে। তার পরামর্শে ও অর্থে নার্সারী করেছিলাম। এখন ছেলে বলছে তার মা ও দাদার আত্মার শান্তির জন্য চারাগুলো বিতরণ করে দেওয়ার জন্য।
তার নার্সারীতে ২ হাজার ৩’শ মাল্টা চারা ছিল। যার সবগুলোই তিনি উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করেছেন। তিনি বলেন ২ হাজার ৩’শ চারার বর্তমান বাজার মূল্য কম পক্ষে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
তবিবর রহমান ও তার ছেলের বক্তব্য কর্মজীবনের পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতাও রয়েছে। তাছাড়া সমাজ ও পরিবেশের উপকার হবে অন্য দিকে সদকায়ে জারিয়া হিসেবে দান হবে।
বৃহস্পতিবার চৌগাছা পৌরসভার চৌগাছা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাল্টা ও লেবুর চারা মিলে প্রায় চারশো চারা বিতরন করা হয় তবিবর রহমানের দেওয়া চারা। ছাত্রছাত্রীরা খুবই আগ্রহের সাথে চারাগুলো বাড়িতে নিয়ে যান। জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সামছুন নাহার বলেন, আমরা ইতিপূর্বে সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন সংস্থা থেকে কিছুকিছু চারা পেয়েছি যার পরিমান হাতেগোনা কয়েকটি, তবে এ বছর তবিবর রহমান ভাইয়ের দেওয়া বিপুল পরিমান চারা প্রতিটি শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দিতে পেরে খুবই ভাল লাগছে। তিনি বলেন গাছ লাগানো প্রতিটি ধর্মেই একটি পূণ্যের কাজ সেকারণে আমার বিশ্বাস তবিবর রহমানের পুরো পরিবারই এর সুফল পাবেন।
একই দিন চৌগাছা কামিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মাঝেও প্রায় সাড়ে তিনশো চারা বিতরণ করা হয়। জানতে চাইলে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাও.আব্দুল লতিফ বলেন, গাছ লাগানো ইসলামে একটি সদকায়ে জারিয়া। কোন মানুষ গাছ লাগালে সেই গাছের ফল মানুষ,পশু-পাখি যেই খাবে তার প্রতিদান দানকারী দুনিয়া আখেরাতে পাবে। তিনি আরো বলেন আমরা দোয়া করি দানকারীর পরিবারের মৃত মানুষগুলো যেন কবরে শান্তিতে থাকে।
চীন থেকে সাইফুল্লাহ মোবাইল ফোনে বলেন আমার মৃত মা ও দাদার জন্য আপনারা সবাই দোয়া করবেন। তিনি আরো বলেন একদিন সবাইকে চলে যেতে হবে, কিন্তু তার মাঝে কিছু কর্ম রেখে যেতে পারলে মানুষ উপকৃত হবে, সেই সাথে আমার মৃত মা ও দাদার আত্মা শান্তি পাবে। এজন্যই আমি আমার পিতাকে চারাগুলো বিতরণ করতে বলেছি।