পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় জলবায়ু পরিবর্তন এবং ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ, যথাযথ পুনর্বাসন, বিকল্প কর্মসংস্থান ও কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতা নিরসন-প্রতিকারের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন করেছে বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ ও জনসুরক্ষা ফোরাম এবং কলাপাড়া পরিবেশ ও জনসুরক্ষা মঞ্চ।
শনিবার সকাল ১১ টায় কলাপাড়া প্রেসক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার তৌহিদুর রহমান মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ ও জনসুরক্ষা ফোরাম'র সমন্বয়কারী শুভংকর চক্রবর্তী।
লিখিত বক্তব্য তিনি বলেন, কলাপাড়ার চম্পাপুর ইউনিয়নের দেবপুর গ্রামে পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট সুপার থার্মাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের (আশুগঞ্জ) জমি ভরাটের কাজ করার জন্য দেবপুর খালের উপর একটা বাঁধ দিয়ে রাস্তা নির্মান করা হয়েছে। পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র (আরএনপিএল) নির্মাণ কাজের জন্য ফুলতলী বাজার এলাকায় ভারানী খাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও অসংখ্য ছোট ছোট খাল ও জলাশয় ধ্বংস হয়ে গেছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদী ভাঙন, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, সমুদ্র উপকূলে লবণাক্ত পানি প্রবেশ পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের ফলে কলাপাড়া উপজেলায় বাস্তুচ্যুত পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাঁচ্ছে।
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, কলাপাড়ায় সরকার বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি এবং হাজার হাজার পরিবারের বসতবাড়ি। বিগত দশ বছরে চলমান এই অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। অধিগ্রহণকৃত জমির মূল্য এবং ক্ষতিপূরণ অনিশ্চয়তা ছাড়াও আছে দালাল ও কিছু সংখ্যক কর্মকর্তার উৎপাত। সম্প্রতি ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কানুনগো কর্তৃক অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদ ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়ার দাবিতে বালিয়াতলী ইউপি'র চর বালিয়াতলী মৌজার বাসিন্দারা মানববন্ধন করেন। দালালের সহায়তায় প্রকৃত জমির মালিকের বিরুদ্ধে ঠুকে দেওয়া হয় মামলা। অনেক জমির মালিকের ক্ষতিপূরণের টাকা আটকে গেছে এমন ভুয়া মামলায়। এতে মিলছে না ক্ষতিপূরণ, ঠাঁই হচ্ছে না পুনর্বাসন কেন্দ্রে। আশ্রয়ের ব্যবস্থা না করেই উচ্ছেদ করা হয়েছে বহু পরিবারকে। আবার অনেককে পুনর্বাসন করা হলেও সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। কৃষক ও জেলে পরিবার হঠাৎ হারিয়েছে মাছ ধরার জলাশয় এবং কৃষিজমি। তাঁরা এখন বেকার ও মানবেতর জীবন যাপন করছে।
তাদের দাবি দাবি কলাপাড়ায় জলবায়ুর পরিবর্তন এবং ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ, যথাযথ পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থানের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক। সেই সাথে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতি করে না এমন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হোক। সর্বোপরি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের পূর্বে সংশ্লিষ্ট যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সমীক্ষা পরিচালনা করে ইতিবাচক উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত।
বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ ও জনসুরক্ষা ফোরামের সদস্য অধ্যাপক গাজী জাহিদ হোসেন'র সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলন উপস্থিত সংগঠনের সদস্য সুশান্ত ঘোষ, অ্যাডভোকেট সুভাষ চন্দ্র দাস, সহকারী অধ্যাপক টুনু রানী কর্মকার ও বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ ও জনসুরক্ষা ফোরামের সহ সমন্বয়কারী তৌহিদুল ইসলাম শাহজাদা প্রমূখ।