বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে স্বীকৃত। মাঠ ফসলের বহুমুখিতা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশ আজ পৃথিবীর অন্যতম শস্য ভার। আধুনিক জাতের ফল ও সবজি উৎপাদন বাংলাদেশকে দিয়েছে অনন্যমাত্রা। কিছুকিছু মৌসুমি সবজি এখন প্রায় সারা বছর পাওয়া যাচ্ছে। কৃষি বহুমাত্রিক রূপ পেয়েছে এবং খোরপোষ কৃষি থেকে বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তর পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। তাই কাজেই কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পকে এখনই এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কৃষিপণ্য রপ্তানি উন্নয়নে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহকে একযোগে কাজ করতে হবে। করণীয়সমূহকে চিহ্নিত করে পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন করা গেলেই আমরা কৃষিপণ্য রপ্তানি খাতকে সম্মানজনক পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারব। আমাদের এখন নজর দিতে হবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের সক্ষমতা ও দক্ষতা উন্নয়ন করে দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার উপর। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ফসলের সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ অবকাঠামো নির্মাণ করা প্রয়োজন। দেশের পাইকারি ও খুচরা বাজার ব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন করা, প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যকে বন্ড লাইসেন্সের সুবিধা প্রদান করা এবং দূতাবাসের বাণিজ্যিক কাউন্সিলরকে বাণিজ্য সম্প্রসারণে তৎপর হতে হবে। ফল ও সবজির প্যাকেজিংকে শুল্কমুক্ত করে অন্য দেশের সাথে মূল্য প্রতিযোগিতামূলক করার পাশাপাশি সমুদ্রপথে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জাহাজ প্রবর্তন করা যেতে পারে। কৃষিপণ্য হতে বৈচিত্র্যময় খাদ্যসামগ্রী উন্নয়নে গবেষণা জোরদার এবং কৃষিপণ্যের জন্য নিবেদিত পরিবহন ব্যবস্থার প্রচলন করাও দরকার। সে সাথে উত্তম কৃষি চর্চা ও ফসলের সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের মাধ্যমে নিরাপদ ও গুণগত মানসম্পন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদন করা যেতে পারে। ‘কৃষি উৎপাদন দ্বিগুণ করতে হবে এবং সেই সাথে বিদেশে আমাদের পণ্যের সুনাম বৃদ্ধি করতে হবে’। তাহলে আমরা কাক্সিক্ষত সফলতা অবশ্যই অর্জন করতে পারবো। দীর্ঘমেয়াদি নীতিকৌশল গ্রহণ করে কৃষি খাতকে টেকসই করার উদ্যোগ প্রতিটি বাজেটেই নেওয়া উচিত। বিদেশ থেকে এত দামে রাসায়নিক সারের চাপ কমাতে জৈব সার তৈরির জন্য প্রণোদনা দেওয়া যেতে পারে। অজৈব ও জৈব সারের মিশ্রণের মাধ্যমে শুরু করে ধীরে ধীরে জৈব সারের ব্যবহার বাড়াতে বেশি বেশি বিনিয়োগ করা যেতে পারে। একইভাবে সেচে প্রচলিত জ্বালানি থেকে সৌরশক্তির ব্যবহার বাড়ানো। কৃষিঋণের নানা সুবিধাসহ সরকারকে আসন্ন বাজেট অব্যাহত রাখতে হবে। যুক্তরাজ্য বা অন্যান্যে দেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যদি যৌথ বিনিয়োগের মাধ্যমে কন্ট্রাক্ট ফার্মিং করা যায়, তাহলে সব ধরনের প্রটোকল মেনে উন্নত দেশে কৃষি পণ্য রপ্তানি করা সহজ হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত এইখাতে আমরা বিদেশী বিনিয়োগ না আনতে পারব, ততক্ষণ যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য উন্নত দেশের মূলধারার বাজারে আমাদের কৃষি পণ্য পৌঁছানো সহজ হবে না। বিশ্ব অর্থনীতির এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে কৃষি আমাদের অর্থনীতির সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য রক্ষাকবচ। তাই কৃষির দিকে দৃষ্টি নিবন্ধ রাখার কোনো বিকল্প নেই।