জামালপুরের বকশীগঞ্জে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একাধিক মামলার আসামি হয়ে গ্রেপ্তার আতঙ্কে এলাকা ছেড়েছেন বিএনপি’র দলীয় নেতাকর্মীরা। ফলে বিএনপি এখন অনেকটাই মাঠ ছাড়া। তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে বকশীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র দলীয় কার্যালয়। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব দলটির নেতাকর্মীরা। মামলা প্রত্যাহার, গ্রেপ্তার বন্ধ, নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন,সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ডের সমালোচনাসহ নেতাকর্মীদের ঐক্যকদ্ধ থাকতে প্রচারনা চালাচ্ছেন তারা। একদিকে বিএনপি মাঠ ছাড়া অন্যদিকে প্রচারনায় সরব রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ। নির্বাচনকে ঘিরে প্রচার প্রচারনায় ব্যাস্ত সময় পার করছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে এলেও একাধিক মামলা ও গ্রেপ্তারের ভয়ে এলাকায় নেই বিএনপি’র অধিকাংশ নেতাকর্মীরা। এলাকায় যারা রয়েছেন তারাও রয়েছেন শঙ্কায়, ভোগছেন গ্রেপ্তার আতঙ্কে। বকশীগঞ্জ খাদ্যগুদাম, হাসপাতাল,পল্লীবিদ্যুৎ অফিস ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, জনমনে আতঙ্কসৃষ্টি সহ নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে গত এক মাসে বকশীগঞ্জ থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়েছে মোট ৬ টি। মামলায় নামীয় ১৯৮ জন আসামি প্রায় সাড়ে ৪ শতাধিক। সকল মামলার বাদী পুলিশ।
মামলায় পৌর বিএনপির আহ্বায়ক জাহিদুল ইসলাম প্রিন্স, যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল সাফী লিপন,সাবেক আহ্বায়ক হাফিজুর রহমান ফিরোজ,শ্রমিক দলের সভাপতি কায়ছার আমীন,যুবদলের আহ্বায়ক বিপ্লব সওদাগর,সদস্য সচিব মাহবুবুর রহমান লাভলু,সভাপতি হাফিজুর রহমান উজ্জল,ছাত্রদলের আহ্বায়ক জুবাইদুল ইসলাম শামীম,উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আশিকুর রহমান তোলন,সদস্য সচিব শহিদুল হক দুলাল,পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক শেখ রহমত আলী,সদস্য সচিব মিজানুর রহমানসহ বিএনপি-যুবদল-স্বেচ্ছাসেবকদল ও ছাত্রদলের প্রায় চারশতাধিক নেতাকর্মী আসামি হয়েছেন। এরমধ্যে নামীয় আসামি ১৯৮জন। অনেক নেতাকর্মীই আবার একাধিক মামলায় আসামি হয়েছেন। গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন ২০ জন। উচ্চ আদালত থেকে অনেকেই আগাম জামিন নিলেও ভয়ে এলাকায় ফিরেননি। মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি থাকায় বিএনপি’র কর্মী সমর্থকদের মধ্যেও রয়েছে গ্রেপ্তার আতঙ্ক। গ্রেপ্তারের ভয়ে মাঠ ছাড়া বিএনপি নেতাকর্মীরা।
কেন্দ্রীয় বিএনপির কোষাধ্যক্ষ সাবেক সাংসদ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত,তার ছেলে ব্যারিস্টার শাহাদাৎ বিন জামান শোভন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক আইজিপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাইয়ুম ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সাহিদা আক্তার রীতা দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। মনোনয়ন প্রত্যাশী একাধিক প্রার্থী থাকলেও বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা আইনগত ভাবে মোকাবেলাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়মিত খোঁজ খবর ও সার্বিক সহযোগীতা করছেন সাবেক সংসদ সদস্য এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত। এমনটাই জানিয়েছেন বকশীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক আলহাজ¦ মানিক সওদাগর।
অপরদিকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নৌকার জয় নিশ্চিত করতে আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামীলীগ। বর্ধিত সভা,আলোচনা সভা,কেন্দ্র কমিটি গঠন করছে দলটি। নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিটি ইউনিয়নে কেন্দ্র কমিটি গঠন করছে উপজেলা আওয়ামীলীগ।
মনোনয়ন নিয়ে দ্বিধাদ্বন্ধ থাকলেও দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই কাজ করে নৌকার জয় নিশ্চিত করবে দলীয় নেতাকর্মীরা এমনটাই জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন তালুকদার বাবুল।
সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন মাঠে। এদের মধ্যে বর্তমান সাংসদ আবুল কালাম আজাদ,জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ নূর মোহাম্মদ ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ব্যারিস্টার সামীর সাত্তার মনোনয়ন পেতে জোড় লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। ঘনঘন এলাকায় আসছেন এই তিন প্রার্থী। দলীয় নেতাকর্মী ও নিজস্ব কর্মী বাহিনী নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচার প্রচারনা। ভোট চাচ্ছেন নৌকায়।
এ বিষয়ে বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আশিকুর রহমান তোলন বলেন, গনতান্ত্রিক আন্দোলন বাধাঁগ্রস্থ করতেই নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দেয়া হচ্ছে। টার্গেট করেই মিথ্যা মামলায় হয়রানি করা হচ্ছে। তবে মামলার ভয়ে ভীত নন তারা। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন না দেওয়া পর্যন্ত মাঠে থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলেন জানান তিনি।
বকশীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব ফখরুজ্জামান মতিন বলেন, নির্বাচনের আগে বিএনপিকে চাপে রাখতে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা গায়েবী মামলা দেওয়া হচ্ছে। অবৈধভাবে ক্ষমতা ধরে রাখতে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে বিএনপি নেতাকর্মীদের। সব বাধা উপেক্ষা গনতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যে আন্দোলন তা চলবে এবং সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত বিএনপির সকল নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থাকবে বলে জানান তিনি।
বকশীগঞ্জ উপজেলা আ.লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক মোশাররফ হোসেন মিরাজ বলেন, আগামী নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র পুড়িয়ে দেয়া,ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের সুযোগ পাবে না বিএনপি-জামায়াত। ভোট কেন্দ্র ভিত্তিক কেন্দ্র কমিটি গঠন করা হচ্ছে। নাশকতার চেষ্টা করে পালানোর পথ নেই। উন্নয়নের কারনেই নৌকায় ভোট দিবে জনগন।
বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহীনা বেগম বলেন,আওয়ামীলীগ সরকারের উন্নয়নের চাপায় পড়ে এখন দিশেহারা বিএনপি। আওয়ামী লীগ অতীতের যে কেনো সময়ের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। যে কারণে জনশূন্য হয়ে মাঠ ছাড়া বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। তাছাড়া আগাম প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে কাজ করছি আমরা। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী যাকে মনোনয়ন দিবেন তার জয় নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ উপজেলা আওয়ামীলীগ।
বকশীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: সোহেল রানা বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া পুলিশ কাউকে হয়রানি বা গ্রেপ্তার করেনি,আর করবেও না। যাদেরকে গ্রেপ্তার এবং যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে।