তিন মাস নিষেধাজ্ঞার পর উম্মুক্ত হলে পূর্ব সুন্দরবনে তিন দিনের ব্যবধানে তিনটি বাঘের বিরল দৃশ্যের দেখা পেলেন পর্যটক ও বনরক্ষীরা। গত শুক্র, শনি ও রোববার শরণখোলা রেঞ্জের পৃথক পৃথক স্থানে এই বাঘের দেখা পান তারা। পর পর তিনদিন এভাবে বাঘের দেখা গত একযুগেও ঘটেনি বলে বন বিভাগ সূত্র জানায়। বিরল এ দৃশ্য দেখে পর্যটকরা উচ্ছাসিত হয়ে পড়েছে। এভাবে সুন্দরবনে ভ্রমণ করতে গেলেই রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দেখা মেলায় পর্যটকরা ভ্রমণে আকৃষ্ট হবে বলে বিভিন্ন মহল জানিয়েছে। এর আগে কচিখালি অফিসের সামনে একটি, চান্দেশ্বর অফিসের পুকুরপাড়ে জোড়া বাঘ ও ছিটা কটকা এলাকায় চারটি বাঘের দেখা মেলে। সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বাড়ছে বলে বন বিভাগের ধারনা।
বনবিভাগ জানায়, রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ৭টার দিকে ‘এমভি ক্রাউন’ নামে পর্যটকবাহী জাহাজ পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলার রেঞ্জের কটকা টাওয়ারের খালে প্রবেশ করলে একটি বাঘ সাঁতরে নদী পার হতে দেখেনে পর্যটকরা। আগেরদিন শনিবার সকাল ৮টার দিকে ‘এমভি বন সাম্পান’ নামে অপর একটি পর্যটকবাহী জাহাজের পর্যটকরা কচিখালী নদীতে আরো একটি বাঘরে সাঁতরে যাওয়ার বিরল দৃশ্য অবলোকন করেন।
এছাড়া, শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বনরক্ষীরা নিয়মিত টহলকালে শরণখোলা রেঞ্জ অফিস এবং আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রের মধ্যবর্তী এলাকার বনে আরো একটি বাঘের দেখা পান। পৃথক তিনটি স্থানে দেখা বাঘের এই দৃশ্য মোবাইলে ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন পর্যটক ও বনরক্ষীরা।
খুলনার পপুলার ট্যুরস এ- ট্রেড এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ জামাল খান পপলু জানান, তাদের পর্যটকবাহী বন সাম্পানে ৫০জন পর্যটক নিয়ে শনিবার সকালে কটকার উদ্যেশে যাচ্ছিলেন। সকাল ৮টার দিকে হঠাৎ একটি বাঘ সুপতি নদী পার হয়ে বনের এপার থেকে ওপার যাচ্ছিল। এ দৃশ্য দেখে পর্যটকরা উচ্ছাসিত হয়ে পড়ে। এ সময় পর্যটকরা মুঠোফোন থেকে ছবি ও ভিডিও করতে সক্ষম হয়। পর্যটকবাহী ওই জাহাজে পর্যটক হিসাবে ছিলেন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ব বিদ্যালয়ের প্রানিবিদ্যা বিভাগের প্রধান ড. মনিরুল ইসলাম। তার বরাদ দিয়ে খুলনার পপুলার টুরস এ- ট্রেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ জামাল খান জানান, বাঘিনী বাঘটি প্রজনেনর জন্য স্থান পরিবর্তন করার জন্য হয়তো নদী পার হয়েছে।
এর আগে গত ৮ আগস্ট সকালে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের কচিখালি অভায়ারণ্য কেন্দ্রের বন অফিসের সামনে একটি বাঘের দেখা মেলে। ওই অফিসের বনরক্ষী মোস্তাক আহম্মেদ বাঘটিকে ঘোরাফেরা করতে দেখে সাহস নিয়ে ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন। পরে লোকজনের টেরপেয়ে বাঘটি বনে চলে যায়। অপরদিকে গত ৩ ফেব্রুয়ারী দুপুরে শরণখোলা রেঞ্জের চান্দেশ্বর অফিসের পুকুড়পাড়ে একত্রে দুটি বাঘ দেখতে পান বনরক্ষীরা। প্রায় ২২ঘন্টা পুকুর পাড়ে অবস্থানের পর বাঘ দুটি বনে ফিরে যায়। গত বছরের ১২ মার্চ শরণখোলা রেঞ্জের ছিটাকটকা এলাকায় পর্যটকরা চারটি বাঘের দেখা পান। ২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর পশ্চিম বনবিভাগের সজনেখালী রেঞ্জ অফিসের চোরাগাজীখালির বনে চারটি বাঘ দেখতে পান পর্যটকরা। ওই বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারী কটকা এলাকার বনরক্ষীরা দেখতে পান তিনটি বাঘ। ১২ মার্চ শরণখোলা রেঞ্জের ছিটাকটকা এলাকায় চারটি বাঘের দেখা পান পর্যটকরা। এ ছাড়া ওয়াইল্ড টিমের শরণখোলা ফিল্ড ফ্যাসিলিটেটর মোঃ আলম হাওলাদার জানায় বাঘ সুমারির জন্য তার ৮ জন সদস্য শরণখোলা চাঁদপাই রেঞ্জের সকল খাল জরিপ করেছে। এ সময় তারা চাঁদপাই রেঞ্জের শেখের ট্যাক, চরাপুটিয়া ও শরণখোলা রেঞ্জের কোকিলমনি এলাকায় চারটি বাঘ দেখতে পেয়েছেন।
শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) শেখ মাহাবুব হাসান জানান, তিন মাস বন্ধ থাকায় সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র ইতিবাচক পরিবর্তণ হয়েছে। সুন্দরবন কোলাহল মুক্ত থাকায় বাঘসহ বিভিন্ন প্রাণীরা নির্বিগ্নে চলাচলের সুযোগ পেয়েছে। যার প্রমান হিসেবে প্রথমবার বনে ঢুকেই বাঘের দেখা পাওয়া সম্ভব হয়েছে। পর্যটকবাহী জাহাজ এমভি বন সাম্পান, এম ভি ক্রাউন ও বনরক্ষীদের বাঘ দেখার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বন বিভাগের কঠোর নজরদারীতে বন অপরাধ কমে যাওয়ায় বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া প্রজনন মৌসুমে তিনমাস বনে পর্যটক ও জেলেদের প্রবেশ বন্ধ থাকায় এখন পর্যটকরা প্রায়শই বাঘ দেখতে পাচ্ছে। ভবিষ্যতে সুন্দরবনে পর্যটকরা আরো বাঘের দেখা পাবে বলে তিনি জানান।