নগরীর ব্যস্ততম সড়কে প্রকাশ্যে শত শত মানুষের সামনে বসে জাতীয় পার্টি (জাপা) নেতা ও শ্রমিক লীগ নেতার পিস্তল নিয়ে ধস্তাধস্তির ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তাপ ছড়াচ্ছে রাজনৈতিক মহলে। ইতোমধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগের পর এবার সংবাদ সম্মেলন করছে উভয়পক্ষ।
পাশাপাশি জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের একাধিকবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর মুরতজা আবেদীনের ওপর হামলা চালিয়ে তার লাইসেন্স করা পিস্তল ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন জাতীয় পার্টি মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এমপি। তিনি এ ঘটনার জন্য বিলুপ্ত মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ও সদ্য গঠিত মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক রইজ আহমেদ মান্নার বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি আইনের মুখোমুখি করার দাবি করেছেন।
অপরদিকে শ্রমিক লীগের সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দরা সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই তড়িঘড়ি করে সম্মেলন স্থান ত্যাগ করায় নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। সূত্রমতে, ৪ সেপ্টেম্বর সকালে প্রথমে বরিশাল প্রেসক্লাবের তৃতীয় তলার হলরুমে সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় পার্টি। একইদিকে বিকেলে একই হলরুমে সংবাদ সম্মেলন করেন জাতীয় শ্রমিক লীগের মহানগর শাখার নেতৃবৃন্দরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শ্রমিক লীগ বরিশাল মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক বেল্লাল হোসেন শিশির বলেন, নগরীর পোর্টরোডস্থ ভূমি অফিসের সামনে বসে ৮০ থেকে ৯০ দশকের দুর্র্ধর্ষ সন্ত্রাসী, এক সময়ের ক্রসফায়ারের তালিকাভূক্ত সন্ত্রাসী, অসংখ্য মামলার আসামি মুরতজা আবেদীন পরিকল্পিতভাবে শ্রমিক লীগ মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক রইজ আহম্মেদ মান্নাকে গুলি করে হত্যা চেষ্টার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত জনতা প্রতিহত করে। এ সময় মুরতজা আবেদীনকে পিস্তলসহ পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য মুরতজা আবেদীন প্রশাসন ও সংবাদ মাধ্যমসহ অন্যান্য মহলে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর মিথ্যা তথ্য দিয়ে রাজনৈতিক মহলে উত্তাপ ছড়ানোর অপচেষ্টা করছেন।
বেল্লাল হোসেন শিশির আরও বলেন, মুরতজা আবেদীন গত ১২ জুন অনুষ্ঠিত বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন চলাকালীন রইজ আহম্মেদ মান্নাসহ তার মা-বোন এবং তিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করিয়েছেন। এরপর ষড়যন্ত্রমূলকভাবে একটি মিথ্যা তথ্য সম্বলিত অডিও রেকর্ড প্রচার করেন। মূলত ধারাবাহিকভাবে বরিশাল পৌরসভা থেকে শুরু করে সিটি করপোরেশনের বর্তমান পরিষদসহ সর্বমোট পাঁচবারের কাউন্সিলর থাকার পরে গত ১২ জুনের নির্বাচনে রইজ আহম্মেদ মান্নার বড় ভাই মুন্নার কাছে পরাজয়ের বেদনা তাকে (মুরতজা) বিকৃত মস্তিস্কের মানুষে পরিণত করেছে।
রইজ আহম্মেদ মান্নাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে পুরো ঘটনার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মহানগর শ্রমিক লীগের সভাপতি পরিমল চন্দ্র দাস, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গাজী নঈমুল হোসেন লিটু, সদস্য অ্যাডভোটেক রফিকুল ইসলাম খোকন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ বাবু, অ্যাডভোকেট গোলাম সরোয়ার রাজিব প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকরা জাতীয় পার্টির নেতা ও শ্রমিক লীগ নেতার পিস্তল নিয়ে ধস্তাধস্তির বিষয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন করলে গুটি কয়েক প্রশ্নের উত্তর দিলেও বাকি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তড়িঘড়ি করে সংবাদ সম্মেলন স্থান ত্যাগ করেন শ্রমিক লীগের নেতৃবৃন্দরা। এতে করে সাংবাদিকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
শ্রমিক লীগের সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত সকল অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে জাপার প্রভাবশালী নেতা অ্যাডভোকেট মুরতজা আবেদীন বলেন, আমার লাইসেন্স করা পিস্তল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন মান্না ও তার সহযোগিরা। তিনি আরও বলেন, মান্না নিজেকে আওয়ামী লীগের লোক দাবি করলেও এই মান্না ও তার সহযোগিরা সদ্য সমাপ্ত সিটি নির্বাচনে প্রকাশ্যে নৌকার বিরোধীতা করে গ্রেপ্তারের পর দীর্ঘদিন কারাভোগ করেছে। আর মান্নার সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারণেই নির্বাচন চলাকালীন মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।
উল্লেখ্য, বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডে টানা ২৫ বছর ধরে জনপ্রতিনিধি অ্যাডভোকেট মুরতজা আবেদীন। গত ১২ জুনের সিটি নির্বাচনে তার এ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছিলেন তৎকালীন মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইজ আহমেদ মান্না। তবে দলীয় নৌকা মার্কার প্রার্থীর সমর্থকদের পিস্তল ঠেকিয়ে হুমকি ও মারধরের ঘটনায় মামলা দায়েরের পর গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন কারাগারে থাকতে হয় মান্নাকে। আর এ সময়েই মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে নির্বাচন কমিশন প্রার্থীতা বাতিল করলে মান্নার ভাই মুন্না হাওলাদার সেই নির্বাচনে মুরতজা আবেদীনকে হারিয়ে বিজয়ী হন। আর ওই নির্বাচন থেকেই উভয়ের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়।
মান্নাকে গ্রেপ্তারের দাবি জাপা মহাসচিবের ॥ বরিশাল জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক ও সিটি করপোরেশনের একাধিকবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর মুরতজা আবেদীনের ওপর হামলা ও তার লাইসেন্স করা পিস্তল ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এমপি। মঙ্গলবার সকালে এক প্রতিবাদ লিপিতে মুজিবুল হক চুন্নু এই ঘটনার জন্য বরিশাল মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক রইজ আহমেদ মান্নাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।