ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে বরজু মিয়া (২৫) মিয়া নিহতের ঘটনায় মামলা হয়েছে। বুধবার বেলা ১টা ৫ মিনিটে নিহতের বড় ভাই মো. ফজলু মিয়া (৩৩) বাদী হয়ে ৩৮ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলার ২৬ নম্বর আসামি গৃহকর্তী হাজেরা বেগমকে গতকাল গ্রেপ্তার করেছেন পুলিশ।
মামলায় বলা হয়, গত সোমবার হাজেরা বেগমের ঘর হইতে একটি মুঠোফোন সেট চুরি হয়। সেট চুরির সাথে জড়িত সন্দেহে রাত ৯ টার দিকে সুজন মিয়াকে বাড়ি থেকে ডেকে এনে হাজেরার বাড়িতে আটক করেন। চুরির বিষয়ে জিজ্ঞাসার নামে হাজেরার লোকজন লোহার রড ও লাঠিসোটা দিয়ে প্রহার করে সুজনকে হাড়ভাঙ্গা গুরূতর জখম করে। সুজন নিজেকে রক্ষার জন্য কৌশল হিসেবে বরজু মিয়ার নাম বলে। সোমবার দিবাগত গভীররাতে অর্থাৎ মঙ্গলবার রাত ২টা ৩০ মিনিটে ছায়েম ও আবদু মিয়া সহ একদল লোক দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বরজুকে বাড়ি থেকে ধরে আনে। আসামি ছায়েমসহ কয়েকজনে মিলে সাবেক মেম্বার বয়েত উল্লাহর বিছড়া বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে সিমেন্টের একটি খুঁটির সাথে দাঁড় করাইয়া বরজুকে বাঁধে। বরজুর হাত পা রশি দিয়া বাঁধে। ছায়েম মিয়ার হুকুমে আসামিরা লোহার রড, লাঠি ও ছুড়া দিয়ে বরজুর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় এলোপাতাড়ি আঘাত করে। বরজুর আহাজারি সহ্য করতে না পেরে ফজলু ২/৩ জনকে নিয়ে ভাইকে বাঁচাতে গেলে হত্যার হুমকি দেয়। যন্ত্রণায় চিৎকার করতে থাকলে নজরূলসহ কয়েকজন মিলে বরজুর মুখ ও গলায় গামছা পেঁছিয়ে শ্বাসরোধ করে ফেলে। একসময় ঘটনাস্থলেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে বজলু। বজলুর মৃতদেহ ফেলে হত্যাকারীরা বীরদর্পে ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। বরজুকে সেখান থেকে উদ্ধার তার স্বজনরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আর গুরূতর আহত অবস্থায় সুজন জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।
হাজেরার পরিবার ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, গত সোমবার দিবাগত রাত ৩ টার দিকে চুন্টা ইউনিয়নের লোপাড়া গ্রামের প্রয়াত আলফাজ বসতঘরে একদল চোর প্রবেশ করে। ঘরে ছিলেন হাজেরা বেগম। টের পেয়ে বাড়ির লোকজন ঘেরাও দিয়ে হাতেনাতে বজলু মিয়া ও সুজন মিয়া নামের দুই চোরকে ধরে ফেলেন। বজলু একই গ্রামের আফজল মিয়ার ছেলে। সুজনের পিতার শফিকুল ইসলাম। জনতার গণপিটুনিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় বজলু। গুরূতর আহত হয় শফিকুল ইসলামের ছেলে সুজন মিয়া। পরে পুলিশ সুজনকে গ্রেপ্তার করেন। সুজন জানায়, তাদের দলে পাঁচজন সদস্য ছিল। ৩ জন দ্রƒত পালিয়ে গেলেও তারা পারেনি। সুজন বলে, হাফসা, শাহিন, সুমন, শাহজাহান, আবদু, ছাইম ও শরীফ আমাদেরকে মারধর করেছে। তাদের মারধরেই নিহত হয়েছে বজলু। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, নিহত বজলু ও আহত সুজন এলাকায় চুরি মাদকসহ নানা অপকর্মের সাথে জড়িত। তাদের বিরূদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে। সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, স্থানীয় রিপোর্টে দেখা যায় বজলু ও সুজন ভাল মানুষ নয়। তবে এভাবে প্রাণে হত্যা করা ঠিক হয়নি। গতকাল ২৬ জনের বিরূদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহত বরজুর বড় ভাই ফজলু। একজন আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। ঘটনার তদন্ত ও আসামি গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।