প্রায় এক মাস বন্ধ থাকার পর তেঁতুলিয়ার মহানন্দা নদীতে পাথর উত্তোলন চালু করায় শ্রমিক পরিবারের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। জানা যায় দেশের সর্বউত্তরের তেঁতুলিয়া উপজেলার বিপুল সংখ্যক পাথর শ্রমিকের অর্থনীতির মূল চাবিকাঠি হলো মহানন্দা নদীর নূড়ি পাথর সংগ্রহ করা। পঞ্চগড় জেলায় শুধু নয় পাশবর্তী নীলফামারী ও ঠাকুরগাঁও জেলার কয়েক হাজার মানুষ তেঁতুলিয়া উপজেলার বিভিন্ন জনের বাসা-বাড়িতে ভাড়া থেকে পাথর কুয়েরি ও পাথর সাইটে কাজ করে জীবীকা নির্বাহ করে। এই বিপুল সংখ্যক পাথর শ্রমিক এবং পাথর-বালি ব্যবসায়ী পাথর ক্রয়-বিক্রয়ের সংগে জড়িত। এছাড়াও পাথর সাইটে সটিং ও নেটিং কাজে আরও কয়েক হাজার নারী শ্রমিক সম্পৃক্ত রয়েছে। কিন্তু ভারত-বাংলাদেশ ঘেঁষা সীমান্ত জিরোলাইন দিয়ে প্রবাহিত মহানন্দা নদীতে পাথর উত্তোলন বন্ধের জন্য ভারতের সীমান্তবাহিনী বিএসএফ এর পক্ষ থেকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কে একাধিক পত্র প্রদান করেন। এনিয়ে গত ৩ আগস্ট পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক মোঃ জহরুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে উপজেলা পরিষদ তেঁতুলিয়া হলরুমে ‘‘মহানন্দা নদীতে অপরিকল্পিত ও ভারতীয় সীমানায় অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধ বিষয়ে এক মতবিনিময় সভা’’ অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মহানন্দা নদীতে পাথর উত্তোলন বন্ধের লক্ষ্যে করণীয় নির্ধারণে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরকারি-আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায় লে. কর্নেল মোঃ যুবায়েদ হাসান, অধিনায়ক, ১৮ বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) পঞ্চগড় সভায় সীমান্ত পরিস্থিতির ওপর বিগত ১০ বছরের একটি চিত্র প্রদর্শণ করেন এবং সীমান্ত সমস্যা এবং সমাধানের উপায় সম্পর্কে সকলের মতামত আহবান করেন। সভায় তেঁতুলিয়া উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগণ সহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ নদীর সীমানা সংক্রান্ত সমস্যা এড়াতে সীমান্ত পিলার/খুটির মাধ্যমে চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মনিটরিং পূর্বক বাংলাদেশ ভূখন্ডের অংশে বা নদীর মধ্যাংশে থেকে শ্রমিকরা যেনো পাথর উত্তোলন করতে পারে এজন্য পঞ্চগড় জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করেন। ওই সভার কার্যবিবরণী ও জেলা প্রশাসকের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে প্রায় এক মাস ধরে মহানন্দা নদীতে পাথর সংগ্রহ বন্ধ থাকে।
এদিকে মহানন্দা নদীতে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় পাথর শ্রমিকদের জীবীকা নির্বাহে অন্য কোন আয় না থাকায় নাভিশ্বাস উঠে। পাথর শ্রমিকরা পরিবার পরিজন অর্ধাহারে-অনাহারে দিনাপাত করে। অনেক পাথর শ্রমিক ও ব্যবসায়ী সরকারি-বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা এনজিও’র গৃহীত ঋণের টাকা দিতে না পেরে বিপাকে পড়ে। পরবর্তীতে পাথর শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা পাথর উত্তোলন চালুর দাবীতে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের কাছে প্রতিনিয়ত ঘুরাঘুরি করে। পরবর্তীতে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদুর রহমান (ডাবলু), উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা ইয়াছিন আলী মন্ডল যৌথভাবে পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদত স¤্রাট এবং পঞ্চগড়-১ আসনের এমপি আলহাজ¦ মজাহারুল হক প্রধানর জেলা প্রশাসনের সংগে আলোচনা করে মহানন্দা নদীতে পাথর উত্তোলন চালুর আশ্বাস দেন। দীর্ঘ এক মাস মহানন্দা নদীতে পাথর সংগ্রহ বন্ধ থাকার পর জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ সহ উপজেলা পরিষদ প্রশাসনের সহযোগিতায় চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশ ভূখন্ডের অংশে মহানন্দা নদীতে পাথর শ্রমিকরা নূড়ি পাথর সংগ্রহ করতে পারছে।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদুর রহমান (ডাবলু) বলেন, মহানন্দা নদীতে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকলে উপজেলার কয়েক হাজার পাথর শ্রমিক সহ পাথর ব্যবসায়ীরা বেকার হয়ে বসেছে। এবিষয়টি নিয়ে পঞ্চগড়-আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য আলহাজ মজাহারুল হক প্রধান ও পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সহযোগিতায় পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক এবং বিজিবি’র সংগে কযেক দফা আলোচনার পর মহানন্দা নদীর মধ্যবর্তী অংশে পাথর শ্রমিকরা নূঁড়ি পাথর সংগ্রহ করতে পারবে।