হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাস্টমসের ভল্ট থেকে ৫৫ দশমিক ৫১ কেজি স্বর্ণ গায়েবের ঘটনা ঘটেছে। কাস্টমস গুদামের একটি আলমারিতে বাক্সের মধ্যে এসব স্বর্ণ সংরক্ষিত থাকলেও তা সুরক্ষিত ছিল না। কারণ বাজার মূল্যে সাড়ে ৫৫ কোটি টাকারও বেশি এসব স্বর্ণ আলমারি ভেঙে লোপাট করা হয়েছে। এ ঘটনায় চার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজনকে চিহ্নিত করে মামলা হয়েছে। পাশাপাশি তদন্তের জন্য গঠন করা হয়েছে পাঁচ সদস্যের কমিটিও। জানা যায়, এ ঘটনার কিছুদিন আগেই অর্থাৎ ৩১ জুলাই নিরাপত্তাকর্মীদের অগোচরে বিমানবন্দরের লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড রুমে ঢুকে পড়েছিল চোর। তবে ছাঁদ বেয়ে উঠে ভেন্টিলেটরের ফাঁক দিয়ে ঢুকে পড়লেও বের হতে না পারায় কয়েক ঘণ্টা পর পুলিশের হাতে সে গ্রেপ্তার হয়। জানা গেছে, বিমানবন্দরের ভেতর ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ সেকশনের পাশেই কাস্টমসের গুদাম অবস্থিত। সেখানে এখন রক্ষিত সব স্বর্ণালংকার ও স্বর্ণের বারের হিসাব মেলানো হচ্ছে। হিসাব শেষে চুরি হওয়া স্বর্ণের পরিমাণ যদি আরও বাড়ে, তাহলে আশ্চর্যের কিছু থাকবে না। কথা হচ্ছে, চোর পালানোর পর কেন বুদ্ধি বৃদ্ধিতে কাজ করতে হবে? বিমানবন্দরের মতো কেপিআই এলাকায় বাইরের কোনো লোকের ছাঁদ পর্যন্ত পৌঁছানোই তো সন্দেহজনক। বিষয়টি নিয়ে তখনই সতর্ক এবং সুষ্ঠু তদন্তের প্রয়োজন ছিল। বিমানবন্দরের মতো স্পর্শকাতর জায়গার ভল্ট থেকে স্বর্ণ চুরি হওয়া একটি অস্বাভাবিক ঘটনা। এমনিতেই বিমানবন্দরের মতো কেপিআইভুক্ত এলাকায় চোর চক্রের তা-বে সাধারণত যাত্রীদের ভুগতে হয়। ভেতরের কর্মচারীদের যোগসাজশে ব্যাগ কেটে মালামাল চুরি কিংবা গোটা লাগেজই লোপাট হওয়ার নানা অভিযোগও রয়েছে। ২০১৯ সালে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন ভুলে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল পেরিয়ে গেলেও কেউ কিছুই টের পায়নি। পরে ইলিয়াস কাঞ্চন নিজেই কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান। এ ঘটনার কিছুদিন আগেই দুবাইগামী বাংলাদেশ বিমানের বিজি-১৪৭ ফ্লাইটে ‘খেলনা পিস্তল’ নিয়ে উঠে উড়োজাহাজ ছিনতাইচেষ্টার ঘটনা খবরের শিরোনাম হয়। এসব ঘটনায় বোঝা যায় বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর প্রয়োজনীয়তা কতটুকু। তারপরও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমরা দেখিনি। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এবং কঠোর বিধানের বিকল্প নেই। কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে, এটাই প্রত্যাশা। চুরি হওয়া স্বর্ণ উদ্ধারে সংশ্লিষ্টদের জোর প্রচেষ্টা কাম্য।