বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে ‘বীর নিবাস’ আবাসন বীর মুক্তিযুদ্ধার বাড়ি নির্মান না করে অনিয়মের মাধ্যমে অন্যত্র নির্মনা করা হচ্ছে। ওই মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আদালতে মামলা দায়ের করেছে। মামলায় আসামি করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব), আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বরিশাল জেলা প্রশাসক সহ ১০ জনের বিরুদ্ধে। গত ৫ সেপ্টেম্বর বরিশালের বিজ্ঞ আগৈলঝাড়া সহকারী জজ আদালতের একটি নালিশি দায়ের করলে ৭সেপ্টেম্বর শুনানি শেষে বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে বিবাদীদের বিরুদ্ধে শোকজ ও সমনজারি করেছে বলে জানিয়েছে মামলার বাদী পক্ষের কৌশলি অ্যাডভোকেট মো. আজাদ রহমান। মামলা ও আদালত সূত্রে জানাগেছে, অস্বচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মান প্রকপ্লের আওতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের সেরাল গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসলেম আলীর নামে এক খানা ‘বীর নিবাস’ আবাসন বরাদ্দা দেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি ‘বীর নিবাস’ নির্মান না করে অনিয়মের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধার মেয়ের শ্বশুর বাড়ি উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের ফুল্লাশ্রী গ্রামে বীর নিবাস নির্মান করা হচ্ছে। অনিয়মের মাধ্যমে বীর নিবাস নির্মানের অভিযোগে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসলেম আলীর ছেলে নাসির সেরনিয়াবাত ৫ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার বরিশালের বিজ্ঞ আগৈলঝাড়া সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছে। (মামলা নং ৮৮/২০২৩)। ওই মামলায় আসামি করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব), মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণারয় সচিব, বরিশাল জেলা প্রশাসক, আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহ অফিসার, সহকারী কমিশণার (ভূমি), উপজেলা প্রকৌশলী, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবয়ন কর্মকর্তা, বরিশাল জেলা সমাজসেবা অফিসার, উপজেলা সমাজসেব অফিসর ও বিউটি হককে। মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈল ইউনিয়নের সেরাল গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসলেম আলীর নামে ১১ মে ২০২৩ তারিখে মুবিম/ পিডি/ অ.বী. মু আ.নি.প্র/ম.-০২/২০২২/৬১১ নং স্বারকের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এম ইদ্রিস সিদ্দিকী স্বাক্ষরের অনুমদ দেয়ন। আগৈলঝাড়া উপজেলার ৬৬ খানা বীর নিবাস অনুমোদন হয় তার ভিতরে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসলেম আলীর ক্রমীক নং ৩৫। ওই বীর নিবাস নির্মানে স্থান দেখানো হয়েছে উপজেলার ফুল্লশ্রী মৌজার খতিয়ান ৪০১৮ ও দাগ ১৫১৯ জমির পরিমান ৫ শতাংশ। বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসলেম আলীর বাড়ির উপজেলার জে,এল ৭০ নং সেরাল মৌজার বিএস চুড়ান্ত ভাবে প্রকাশিত ৩৬০ নং খতিয়ান বিএস দাগ ৩৩৪,৩২৬ ও ৩২৮। মামলার বাদী নাসির সেরনিয়াবাত বলেন, আমার মরহুম পিতার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসলেম আলীর নামে বরাদ্দাকৃত ‘বীর নিবাস’ খানা অনিয়মেন মাধ্যমে আমার পিতার বাড়িতে তৈরি না করে আমার ছোট বোন বিউটি হক এর শ্বশুরে জমিতে নির্মান করছে। অনিয়মের মাধ্যমে আমার পিতার স্মৃতি মুছে ফেরতে চাইছে। আমি একটা দাবিত মামলা করেছি, আমার পিতার নামে বীর নিবাস খানা আমার পিতার কবর স্থানের কাছে নির্মান করার জন্য। বীর নিবাস দেখে মানুষ বলবে এই বাড়ি এক মুক্তিবোদ্ধার ছিলো। অ্যাডভোকেট মো. আজাদ রহমান বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসলেম আলীর নামে বরাদ্দকৃত বীর নিবাস তার বাড়িতে নির্মান না করে বেআইনি ভাবে অন্যত্র নির্মন করছে। আমরা আদালতে আবেদন করেছি যাতে মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে বীর নিবাস নির্মন করা হয়। ৭ সেপ্টেম্বর আদালতে শুনানি করেছি। শুনানি শেষে বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে বিবাদীদের বিরুদ্ধে সমনজারী করেছে। আদালতের কাছে আমরা ন্যাবিচার পাবো। আদালত মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে বীর নিবাস নির্মনের নির্দেশ দিবেন এটা আমাদের আশা। এ ব্যাপারে বিউটি হক বলেন, আমার ভাই ও বোনেরা মিলে আমাকে লিখিত ভাবে পাওয়ার দিয়েছে। তাই পিতার নামের বীর নিবাস খানা আমার শ্বশুর বাড়ি করার জন্য বরাদ্দ করিয়েছি। এব্যাপরে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবয়ন কর্মকর্তা মো.মোসারফ হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দেয়া কাগজপত্র অনুসানে আমরা ঠিকাদারকে ওয়ার্ক অর্ডার দিয়েছি। শুনেছি মামলা হয়েছে কিন্তু কোন আদেশ পাই নাই। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমি আদালতের কোন নির্দেশ পায়নি। আদালতের নির্দেশ পেলে আমি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে জানাবো। আমার ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষ যে নির্দেশ দিবেন আমি সেই নির্দেশ পালন করবো। এ ব্যাপারে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এম ইদ্রিস সিদ্দিকী সাথে যোগাযোগ করে পাও যায়নি বলে তার বক্তব্য দেয়া গেল না।