যানজট নেই এমন কোনো রাস্তা রাজধানীতে খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে যারা মতিঝিল থেকে ফার্মগেইট হয়ে মিরপুর বা অন্যান্য স্থানে যাতায়াত করেন, তারাই বুঝেন যানজটের দুর্ভোগ আসলে কাকে বলে! এই পাঁচ কি.মি. রাস্তা পাড়ি দিতে দুই থেকে তিন ঘণ্টা কখনো বা তার চেয়েও বেশি সময় লাগে। যিনি এ রাস্তায় নিয়মিত চলাচল করেন, সারাদিন কর্মব্যস্ততায় ক্লান্ত মানুষগুলোর অবস্থা তখন কেমন হয়, সেটা ভুক্তভোগী এবং প্রত্যক্ষদর্শী ছাড়া আর কারো পক্ষে অনুধাবন করা অসম্ভব। শুধু অফিস ছুটির পরেই এই অবস্থা হয় এমন নয়, বরং সারাদিনই এই রাস্তায় যানজট লেগেই থাকে। এ রাস্তার অবস্থা আরো করুণ হয়েছে মেট্রোরেলের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে। তার ওপর যেদিন ভিভিআইপি মুভমেন্ট থাকে সেদিন যাত্রীদের কাছে এই রাস্তাটি এককথায় নরকযন্ত্রণায় পরিণত হয়। যত দিন যাচ্ছে যানজট সমস্যা ততই বাড়ছে। বাড়তে বাড়তে তা আজ এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যেখান থেকে উত্তরণ ক্রমেই অসম্ভব হয়ে পড়ছে। ত্যাক্ত-বিরক্ত হয়ে মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকে গাড়িতে, গাড়িগুলোও জ্বালানি পুড়িয়ে অপেক্ষায় থাকে একটু সুযোগ পেলেই যাতে সামনের দিকে সামান্য হলেও এগুতে পারে। এই অবস্থায় অনেক যাত্রীই গাড়ি থেকে নেমে হাঁটা শুরু করেন। যে যতটুকু পারেন হেঁটে গিয়ে সামনের গাড়িতে উঠেন। তাতে একেক জনকে দুই বা তিনবারও ভাড়া গুনতে হয়, ভিন্ন ভিন্ন গাড়িতে উঠার কারণে। তাদের যন্ত্রণার কথা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। এই করুণ অবস্থার পরিবর্তনে অবশ্যই কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন। যদিও সরকার যানজট নিরসনে মেট্রোরেল ও উড়াল সড়কের মতো বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু উদ্বোধন করাও হয়েছে। মেট্রোরেল ও উড়াল সড়কের পরিকল্পনা নেয়া হয় যাতে যানবাহনগুলো কোথাও না থেমে এক প্রান্ত থেকে সরাসরি আরেক প্রান্তে পৌঁছতে পারে। এর মধ্য দিয়ে যানজট পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে সরকার আশা করছেন। তবে ঢাকা শহরে স্বাভাবিকভাবে চলতে-ফিরতেই মানুষের অনেক দুর্ভোগ হয়। এর মধ্যে একসঙ্গে অনেকগুলো সড়কের ওপর উন্নয়নকাজ চলার কারণে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। উচিত ছিল একটা প্রকল্পের কাজ শেষ হলে আরেকটির কাজ শুরু করা ও সড়ক আইন কঠোরভাবে কার্যকর করা এবং ঢাকার যানজট নিরসনে বাস ব্যবস্থার উন্নয়ন, পর্যাপ্ত ফুটপাতের সংস্থান করা সবচেয়ে জরুরি। কারণ ঢাকার বেশিরভাগ মানুষ হয় বাসে চড়ে, না হয় হেঁটে যাতায়াত করে। মেট্রোরেল বিআরটির মতো গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু ঢাকায় প্রতিদিন যত মানুষ চলাচল করে তার সামান্য অংশই এসব গণপরিবহন কভার করবে। তাই ঢাকামুখী মানুষের স্রােত কমাতে সরকারের জরুরী পদক্ষেপ প্রয়োজন।