২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলায় বদলী হন লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সারওয়ার ইউসুফ জামাল। চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলা থেকে বদলী হয়ে লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের দায়িত্ব নেন অজন্তা ইসলাম। তাঁর দায়িত্বের পর থেকেই পাল্টে যায় অফিসের সকল চিত্র। নেমে আসে চরম ¯'বিরতা। উপজেলা সমন্বয় মিটিং, জাতীয় দিবস কিংবা স্কুল পরিদর্শন কোথাও দেখা যায় নি অজন্তা ইসলামকে। এই প্রতিনিধি একাধীকবার তাঁর কার্যালয়ে গেলেও তাকে পাওয়া যায় নি। এমনকি তাঁর বিষয় অফিসের অন্য স্টাফরাও কোনো কথা বলতে চান নি। যোগদানের তারিখ, ছুটি নিয়েছেন কিনা এমন কোনো তথ্যই দিতে পারেনি অফিস কর্তৃপক্ষ। গত ২৮ আগস্ট লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে গেলে অ্যাকাডেমিক সুপারভাইজার প্রনব পোদ্দারকে পাওয়া গেলেও দেখা যায় নি মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার অজন্তা ইসলামকে। জানতে চাইলে স্যার নেই, এর বেশি আর কিছুই বলতে চান নি। সংবাদের প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে চাইলে অফিস সহায়ক মো: রুহুল আমিনকে ডাকা হলেও আলমারীতে সমসাময়িক অফিসিয়াল চিঠিপত্র ছাড়া আর কিছুই নেই বলে জানান।
তথ্যানুসন্ধান করে জানা যায়, চলতি বছরের জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে কোনো একদিন এসে চলে গেলেও আর আসেন নি কর্ম¯'লে। এর আগেও মাসে একবার কিংবা ২ মাসে একবার লক্ষ্মীছড়িতে দেখা গেছে।
জানা যায়, লক্ষ্মীছড়ি সরকারি কলেজ ও লক্ষ্মীছড়ি মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়সহ মোট ১৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে দেখভাল করার মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রনে। সরকার শিক্ষা ব্যব¯'ার মান উন্নয়নে সারাদেশে পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশেষ পরামর্শ ও নির্দেশনা দিয়ে থাকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসগুলোকে। সূত্র জানায়, মাসে কম পক্ষে ৩ থেকে ৫টি স্কুল পরিদর্শন করার সরকারি নিদের্শেও বাধ্যবাদকতা রয়েছে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি কার্যক্রম, শিক্ষা সপ্তাহ পালন, বছর জুড়ে নানা বিষয়ে রচনা, চিত্রাঙ্কনসহ কর্মসূচি রয়েছে। তাঁর সময়কালে এসব কোনো কর্মসূচিতেই দেখা যায় নি অজন্তা ইসলামকে। লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস এক্ষেত্রে কতটুকু ভূমিকা রাখছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা বলেই সচেতন মহল মনে করে।
লক্ষ্মীছড়ি মেডল সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার অজন্তা ইসলামকে গত এক বছরেও আমার প্রতিষ্ঠানে আসতে দেখিনি, যদিও আমি দাওয়াত দিয়েছি। এমপিও ভুক্তির যাবতীয় কাজসহ উপবৃত্তি সংক্রান্ত ক্রীড়ার উন্নয়নে মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকে প্রতিনিয়িত। পরিচ্ছন্ন সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে অফিসারের ভূমিকা অনেক বেশি এ ক্ষেত্রে কর্মকর্তার অনুপস্থিত থাকার কারণে শিক্ষা ব্যবস্থার মান উন্নয়নে অবনতিসহ নানা জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন প্রধান শিক্ষক।
এবিষয়ে জানতে চাইলে খাগড়াছড়ি জেলা শিক্ষা অফিসার (অ.দা.) এস এম মোসলেম উদ্দিন জানান, অফিসের জরুরী কার্যক্রম পরিচালনা না করা, দীর্ঘ দিন ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত এবং দায়িত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগ পাওয়ার পর যথাযথা কর্তৃপক্ষকে লিখিত আকারে জানিয়েছি। ইতঃপূর্বে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হলেও তার কোনো জবাব মিলেনি। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, নি:সন্দেহে জরুরী এবং গুরুত্বর্পূণ চিঠির জবাব যথাসময়ে না পেলে অফিস কিংবা প্রতিষ্ঠানের বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের যেমন সুপারিশ করা হয়েছে, তেমনি সংকট নিরসনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুলতানা রাজিয়া বলেন, কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন সেটা আমি জেনেছি। মাসিক সমন্বয় মিটিং এ পাওয়া যায় নি। কোনো জাতীয় কর্মসূচিতেও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার অজন্তা ইসলামের অংশগ্রহণ চোখে পড়ে নি। এ বিষয়গুলো জেলা আইন-শৃঙ্খলা সভায় এবং জেলা শিক্ষা অফিসারকে অবহিত করেছি।
মানুষের মৌলিক চাহিদা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ যতগুলো মৌলিক চাহিদা রয়েছে তার মধ্যে শিক্ষা অন্যতম। এমনিতেই শিক্ষা ব্যবস্থায় অনেক পিছিয়ে লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা। তার মধ্যে একজন কর্মকর্তার ধারাবাহিকভাবে দিনের পর দিন অনুপস্থিত যা দেশের নাগরিক হিসেবে শিক্ষাকে অবজ্ঞা ও অবহেলার সামিল বলেই মনে করেন এলাকাবাসী। কর্তৃপক্ষ দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এমনটাই দাবী লক্ষ্মীছড়িবাসীর।