মূমুর্ষূ রোগীকে হাসপাতালে নেয়া বা মরদেহ বহন করার জন্য এ্যাম্বুলেন্সই একমাত্র ভরসা। মানুষের বিশেষ বিপদের সময় তাদের সেবা দিয়ে থাকে এ্যাম্বুলেন্স সেবা দানকারীরা। কিন্তু এই সেবা খাতের বাস্তব চিত্র একেবারেই উল্টো। এ্যাম্বুলেন্স ও লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়ি নিয়ে রাজধানী ঢাকার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চলছে সিন্ডিকেট বাণিজ্য। এ ছাড়া সরকারি হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সের সুবিধা সাধারণ মানুষ পায় না। অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালের কর্মচারীদের যোগসাজশে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স বসিয়ে রাখা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা বিশেষ বিশেষ রোগী পরিবহন করে এবং বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সচালকেরা রোগীর জরুরি কোনো পরিস্থিতি দেখলে জিম্মি করে বাড়তি ভাড়া আদায় করেন। এছাড়াও ঢাকায় সাড়ে ৪ হাজার এবং বিভিন্ন জেলায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার এ্যাম্বুলেন্স নিয়ন্ত্রণ করছে একটি অদৃশ্যশক্তি। যাদের হাতে জিম্মি সাধারণ মানুষ। মাঝে-মধ্যে এদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় হলেও অজ্ঞাত কারণে তা থেমে যায়। শক্তিশালী এই চক্রের কবলে পড়ে রোগীদের স্বজনদের গুনতে হচ্ছে নির্ধারিত ভাড়ার কয়েকগুন বেশি। সিন্ডিকেটের দালালদের শর্তে রাজি না হয়ে কোন উপায় নেই রোগীর স্বজনদের। বাইরের কোনো এ্যাম্বুলেন্স এনে রোগী আনা নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। ঢাকার প্রতিটি হাসপাতালের নিয়ন্ত্রনকারী প্রভাবশালী ব্যক্তির হাতে জিম্মি এ্যাম্বুলেন্স চালক এবং মালিকরাও। কর্তৃপক্ষের সঠিক পরিকল্পনার অভাবে কমছে না চিকিৎসা নিতে আসা মানুষের দুর্ভোগ। তাই অ্যাম্বুলেন্স সেক্টরে নীতিমালা থাকাটা অত্যান্ত প্রয়োজন। এতে হয়তো সাধারন মানুষ কিছুটা হলে ক্ষতির মুখ থেকে বাঁচবেন। তবে অধিক ভাড়া আদায়ের অভিযোগে বাস মালিক ও চালকরা অস্বীকার করে জানান, পরিস্থিতির কারণে অনেক সময় তারা কমিশন দিতে বাধ্য হন। দেশের বিভিন্ন স্থানে এ্যাম্বুলেন্স যাতায়াতের সময় লাগে অনেক। তাছাড়া সেতু ও ফেরির টোল দিতে হয়। অথচ অ্যাম্বুলেন্সের কাছ থেকে টোল নেওয়ার কোন বিধান নেই। কিন্তু ইজারাদাররা এই নির্দেশনা মানছে না। এরও আর্থিক প্রভাব পড়ে রোগী বা তাদের স্বজনের ওপর। অ্যাম্বুলেন্সের মতো একটি জরুরি পরিবহনসেবাকে ঘিরে এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি চলছে বছরের পর বছর। অথচ মানুষের জন্য অ্যাম্বুলেন্সসেবা সহজ করতে সরকার কর ছাড় দিয়ে রেখেছে। তারপরেও চলছে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে নৈরাজ্য। ‘অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়ার কোনো তালিকা এবং সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা না থাকায় এ সিন্ডিকেট বেড়েছে। এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগী পাওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে হাসপাতালগুলোর কর্মচারীদের (ওয়ার্ডবয় ও আয়া) ওপর। এজন্য তাদের ভাড়ার অন্তত ২০ শতাংশ কমিশন দিতে হয়। এই কমিশন-বাণিজ্যর কারনেও ভাড়া অনেকটাই বেড়েছে। তবে এভাবে আর চলতে দেয়া যাবেনা। আমরা এর অবসান চাই, আর এর অবসান ও রোগীদের ভোগান্তি দূর করতে হলে সরকার ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিষয়টির ওপর দ্রুত পদক্ষেপ বা একটা বড় উদ্যোগ কার্যক্রম করতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশে বৈধ অ্যাম্বুলেন্সচালকদের একটা ডেটাবেজ বা তথ্যভান্ডার গড়ে তুলতে হবে এ সিন্ডিকেট বন্ধে।