খুলনার পাইকগাছায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একের পর এক অশ্লীল ভিডিও ভাইরাল হচ্ছে। এ তালিকায় রয়েছে জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ী ব্যক্তি। রীতিমতো অনেকে আতঙ্কে কখন কার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হবে, সে আশঙ্কায়। ইতোমধ্যে অচেনা নারীদের সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব। আর সেই বন্ধুত্ব খেকে ভালোবাসার অভিনয়ের ফাঁদে ফেলে রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিদের একান্ত পরিবেশে খোলামেলা কথপোকথনের ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হচ্ছে। ফলে বর্তমানে অনেকে সামাজিক ভাবে হেয়প্রতিপ্ন হওয়ার আশঙ্কায় প্রহর গুনছেন। ইতোমধ্যে অনৈতি অশ্লীল ভিডিও ভাইরালের শিকার হয়েছেন উপজেলার প্রথমে লতা ইউপি চেয়ারম্যান কাজল কান্তি বিশ্বাস, এরপর পাইকগাছা সরকারী কলেজের শিক্ষক মাসুদুর রহমান মন্টু, বিএনপি নেতা সামসুল আলম পিন্টু, ব্যবসায়ী লতা ইউনিয়নের মৃত কৃষ্ণ রায়ের ছেলে পার্থ রায়। কে বা কারা ব্যক্তিগত আপত্তিকর মূর্হুতে ভিডিও কলের ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িছে জানা যায়নি বা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনও জানাতে পারেনি। তবে ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় ব্যক্তিগত গোপনীতা লঙ্ঘিত হয়েছে বলে প্রশাসন বলছে। ইউপি চেয়ারম্যান কাজল কান্তি বিশ্বাসের আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় তাকে গত ২০ জুন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ সাময়ীক বহিষ্কার করেছেন। বহিস্কার আদেশে আরো জানানো হয়, যেহেতু লতা ইউপি চেয়ারম্যান কাজল কান্তি বিশ্বাসের উল্লিখিত অভিযোগে তার দ্বারা ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষমতা প্রয়োগ প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণে সমীচীন নয় মর্মে সরকার মনে করে। সেহেতু, চেয়ারম্যান কাজল কাস্তি বিশ্বাস কর্তৃক সংগঠিত অরাধমূলক কার্যক্রম ইউনিয়ন পরিষদসহ জনস্বার্থের পরিপন্থী বিবেচনায় স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯-এর ৩৪ (৪) (খ) (ঘ) ধারার অপরাধ সংগঠিত করায় উল্লিখিত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে স্বীয় পদ হতে সাময়ীক বহিষ্কার করা হল। পাইকগাছা সরকারী কলেজের ইংরেজি প্রভাষক মাসুদুর রহমান মন্টুর ব্যক্তিগত অশ্লীল নগ্ন ভিডিও ভাইরাল হয়। তার এ কৃতকর্মের জন্য গত ১৯ জুলাই কলেজ অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাকে কলেজের অ্যাকাডেমিক সকল কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। বিএনপি’র খুলনা জেলা নেতা ও কপিলমুনি প্রেসক্লাবের সভাপতি সামছুল আলম পিন্টুর ব্যক্তিগত ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়েছে। ফলে গত ১ সেপ্টেম্বর প্রেসক্লাবের অনুষ্ঠিত সভায় তাকে নৈতিকতা স্খলনের দায়ে গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ-১০(ঝ) ধারা মতে প্রেসক্লাবের সভাপতি পদ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এবং কেন তাহাকে সদস্য পদ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না এ মর্মে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জবাব দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ী লতা ইউনিয়নের পার্থ রায়ের আপত্তিকর ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়েছে। এ বাদেও একাধিক জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ীর আপত্তিকর ভিডিও ক্লিপ ভাইরালের গুনঞ্জন শুনা যাচ্ছে। কারা এ ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল করছে মিলছে না তার কোন হদিস। যার ফলে এক ধরনের মানসিক চাপের মধ্যে উপজেলার রাজনৈতিক, সামাজিক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। কার কখন ভিডিও ভাইরাল হবে তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ কেউ পোষ্ট দিচ্ছে এরপর কার ভিডিও আসছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, উপজেলার একটি চক্র রাজনৈতি নেতা ও সামাজিক ব্যক্তিদের টার্গেট করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয় হয়। সেই পরিচয়ের মাধ্যমে ভিডিও কলে ভালোবাসার অভিনয় করে অন্তরঙ্গ দৃশ্যের ভিডিও কল রের্কড করে রাখছে। চাহিদা পুরণে ব্যর্থ হলে ভিডিও ক্লিপ ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। একাধিক সূত্র জানায়, ভিডিও ক্লিপের ভয় দেখিয়ে তাদের জিম্মি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। টাকা দিতে ব্যর্থ হলে ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল করছে। এর ফলে আতঙ্কে রয়েছে বিভিন্ন পেশার মানুষসহ অভিভাবক মহল। ভাইরালের শিকার একজন বলেন আমি প্রতারণার শিকার হয়েছি। তবে ভাইরালের শিকার অন্যরা এ ব্যাপারে মুখ খুলতে নারাজ। এ ব্যাপারে পাইকগাছা সরকারী কলেজের প্রভাষক গাজী মো. মিজানুর রহমান বলেন, অশ্লিল ভিডিও সমাজের জন্য মরণ ব্যাধি। এটা আমাদের সমাজকে কুড়ে কুড়ে ধ্বংস করে দেবে। এটা বন্ধ করতে হলে সামাজিক ও রাষ্টীয়ভাবে এগিয়ে আসতে হবে। এবং ধমীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে। মানবাধিকার ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক অ্যাড. এফএমএ রাজ্জাক বলেন, গোপণ ভিডিও ভাইরালের শিকার ব্যক্তিরা আইনের আশ্রয় নিতে পারবেন। আইনের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। পাইকগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, অচেনা মানুষের সাথে বন্ধুত্ব হলে সর্তক থাকতে হবে। বন্ধুত্বের সুযোগে অনৈতিক কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। তিনি আরো বলেন, আমরা পুরো ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করছি। তদন্ত শেষে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।