পরিবহন খাতে ওয়েবিলের প্রচলন বেশ পুরনো। মূলত গাড়ি কোন স্টেশন থেকে, কখন ছাড়লো, কতজন যাত্রী ছিল বা কোন ফি দিতে হয়েছে কিনা, সেগুলো জানতেই ওয়েবিল ব্যবহার করা হয়। একটি গাড়ির রুটকে কয়েকটি পয়েন্টে ভাগ করে ওই পয়েন্টগুলোতে কর্মী রাখা হয়। এই কর্মীরা দেখেন যে, ওই পয়েন্টে ওই সময়ে বাসে কত জন যাত্রী ছিল। যত জন যাত্রী থাকে সেই সংখ্যা দিয়ে ওই পয়েন্ট পর্যন্ত যে ভাড়া সেটি গুণ করেই যে সংখ্যা পাওয়া যায় সেটিই বাসের মালিককে বুঝিয়ে দিতে হয় চালকদের। এর ফলে একজন যাত্রীকে বাসে উঠে পরের স্ট্যান্ডে নেমে গেলেও পরবর্তী ওয়েবিল লেখার স্থান পর্যন্ত ভাড়া দিতে হয়। এভাবে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বাড়তি আদায় করে থাকেন পরিবহনমালিক ও শ্রমিকেরা। রাজধানীতে চলাচল করা বাসগুলোতে ওয়েবিল ও ‘চেকিং পদ্ধতি বন্ধ করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। ফলে বিভিন্ন পরিবহন এখনও চলছে ওয়েবিল ও চেকিং সিস্টেম। বর্তমানে ঢাকা মহানগরীতে বৈধ ও অবৈধ মিলিয়ে ২৫০টির মতো বাস রুট রয়েছে। এসব রুটে বিআরটিএর অনুমোদিত বাস রয়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার। তবে ঢাকায় নিয়মিত প্রায় সাত হাজার বাস চলাচল করে। সব বাসের বৈধ রুট পারমিট না থাকায় ভাড়ার তালিকাও নেই। রাজধানীর প্রতিটি রুটে এখন আধা কিলোমিটার পরপরই অবৈধ ওয়েবিল বসিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে বাসের মালিক-শ্রমিকরা মনগড়াভাবে ভাড়া আদায় করছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঢাকার গণপরিবহন খাতে শৃঙ্খলা নিয়ে আসার জন্য ই-টিকেটিং সিস্টেম চালু করা হয়। পরবর্তীতে কয়েক ধাপে ঢাকার অধিকাংশ বাসে এই সিস্টেম চালু করা হয়। প্রথম ধাপে, গত বছরের নভেম্বরে মিরপুর রুটের ৩০টি বাস কোম্পানিকে ই-টিকেটিং এর আওতায় নিয়ে আসা হয়। এরপরে দ্বিতীয় ধাপে চলতি বছরের জানুয়ারিতে আরও ১৫টি কোম্পানিকে এই সিস্টেমের আওতায় আনা হয়। কিন্তু বর্তমানে তা বেবহার হচ্ছে হাতে গোনা কয়েকটি পরিবহনে। বাস হেল্পারদের কাছে টিকিট চাওয়া হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পিওএস মেশিনে কাগজ ফুরিয়ে গেছে কিংবা মেশিন ফিলিং স্টেশনে রয়েছে ইত্যাদি অজুহাত দিয়ে টিকিট দেওয়া হয় না। ফলে প্রতিনিয়তই যাত্রীদের গুনতে হয় নির্ধারিত ভাড়ার থেকে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া। সড়ক পরিবহন আইন অনুসারে, ওয়েবিল প্রথা, সিটিং সার্ভিস, গেটলক সার্ভিস অবৈধ। বাড়তি ভাড়া আদায়ের দায়ে সংশ্লিষ্ট পরিবহন কোম্পানির চলাচলের অনুমতি বাতিল করারও বিধান আছে। আইন থাকলেও তা প্রয়োগের অভাবে গনপরিবহনের এই ওয়েবিল নৈরাজ্য বন্ধ হচ্ছেনা। গণপরিবহনে নগদ লেনদেন বন্ধ না হলে ভাড়ার নৈরাজ্য থামানো প্রায় অসম্ভব তাই প্রতিটি বাসে ই-টিকেটিং সিস্টেম বাধ্যতামূলক ভাবে চালু করতে হবে, প্রতিটি ওয়েবিল পয়েন্টে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসাতে হবে। যাত্রীদের আরো সচেতন হতে হবে, কোন বাস কন্ডাক্টর ই-টিকেট দিতে না চাইলে জাতীয় জরুরি সেবায় কল করে জানাতে হবে। সর্বোপরি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে প্রদত্ত আইন প্রয়োগের বেপারে আরো কঠোর হতে হবে।