বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। কিন্তু দখল-দূষণে আমাদের নদণ্ডনদীর অবস্থা বড় করুণ। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারভিত্তিক বিভিন্ন মেগাপ্রকল্পের আওতায় বিলুপ্ত নদী ও নৌপথ পুনরুদ্ধার কার্যক্রম এক যুগেও শেষ হয়নি। কার্যত নৌপথ পুনরুদ্ধারে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। খনন ও পলি অপসারণের মাধ্যমে ১০ হাজার কিলোমিটার (কিমি.) নৌপথের নাব্যতা ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা থাকলেও ২০১০ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত সাত হাজার কিমি. নৌপথ সচল হয়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৮০০ কিমি. আগেই সচল ছিল। এই হিসেবে, বিলুপ্ত নৌপথ পুনরুদ্ধার হয়েছে মাত্র ৩ হাজার ২০০ কিমি.। ৫৩টি অভ্যন্তরীণ নৌপথ খনন মহাপরিকল্পনার আওতায় প্রথম পর্যায়ে ২০২৫ সালের মধ্যে ২৪টি নৌপথের ১০ হাজার কিলোমিটার পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। অভ্যন্তরীণ নৌপথ ব্যবহারকারী নৌযান মালিকদের বিভিন্ন সংগঠন বলছে, বিআইডব্লিউটিএ সাত হাজার কিমি. নৌপথ সচল করার দাবি করলেও তা হয়েছে কাগজে-কলমে। ৩৮ হাজার কিমি. নৌপথ আগেই সচল ছিল। বরং যথাযথভাবে খনন ও পলি অপসারণ না করায় অনেক নৌপথ পরিত্যক্ত হয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ২০১৭ সাল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত সাড়ে ছয় বছরে আরো প্রায় ২ হাজার ৪০০ কিমি. নৌপথ খনন করা হয়েছে। অর্থাৎ সাড়ে ১২ বছরে উদ্ধার বা খনন হয়েছে মোট ৩ হাজার ২০০ কিমি.। তবে দীর্ঘ এ নৌপথের অনেক স্থানে প্রয়োজনীয় খনন ও পলি অপসারণ করা হয়নি। কোনো কোনো স্থানে নামমাত্র খনন করা হয়েছে। ফলে গত সাড়ে ছয় বছরের খননকৃত ২ হাজার ৪০০ কিলোমিটারের সবগুলো নৌপথে নৌযান চলাচল করতে পারছে না। এ ছাড়া ২০১৭ সালের আগের ছয় বছরে যে ৮০০ কিমি. নৌপথ খনন করে নাব্যতা উন্নয়ন করা হয়েছিল, তীব্র নাব্যসঙ্কটের কারণে সেসব নৌপথের কয়েকটি ইতোমধ্যে নৌযান চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। অনিয়ম-দুর্নীতি এ প্রকল্প বাস্তবায়নে বড় বাধা হয়ে দাঁরিয়েছে। তাই সরকারের উচিত, এই প্রকল্পের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনা। এসব কারণে রাষ্ট্রের প্রচুর অর্থ ব্যয় হলেও জনগণের প্রত্যাশিত কল্যাণ হচ্ছে না। তাই দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনা হলে হয়তো প্রকল্পের কাজে গতি আসবে। খনন ও পলি অপসারণ পদ্ধতিতে অনেক ত্রুটি রয়েছে।