বাংলাদেশে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে এমন কিছু উপসর্গ দেখা যাচ্ছে যা ডেঙ্গুর প্রথাগত উপসর্গ নয়। ফলে ডেঙ্গু হয়েছে সেটি বুঝতে না পারার কারণে হাসপাতালে যেতে দেরি করছেন রোগীরা। এতে করে শেষ মুহূর্তে হাসপাতালে আসলেও মারা যাচ্ছেন অনেকেই। এখন ডেঙ্গু হলে আগের কোনো লক্ষণ আর দেখা যায় না। এবার ডেঙ্গু হলেই রোগীর হার্ট, কিডনি ও ব্রেইন আক্রান্ত হচ্ছে। যে কারণে রোগীর মৃত্যুঝুঁকি বেড়েছে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৭৩০ জনে। একই সময়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে নতুন করে রেকর্ড দুই হাজার ৯৯৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৯ হাজার ৮৭১ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ৪ হাজার ২৯৭ জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ৫ হাজার ৫৭৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। ডেঙ্গু হলে কী ধরনের চিকিৎসা নিতে হবে, বাসায় না হাসপাতালে থাকতে হবে তা নির্ভর করে এর ধরন বা ক্যাটাগরির ওপর। ডেঙ্গু জ্বরকে সাধারণত তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয় ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’। প্রথম ক্যাটাগরির রোগীরা স্বাভাবিক থাকে। তাদের শুধু জ্বর থাকে। অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগী ‘এ’ ক্যাটাগরির। তাদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কোনো প্রয়োজন পড়েনা। বাড়িতে বিশ্রাম নেওয়াই যথেষ্ট। ‘বি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ভালো তাদের সাধারণত পেটে ব্যথা, বমি, মাথা ব্যথার মতো কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। ‘সি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু রোগীরা থাকে সবথেকে ঝুঁকিতে। এই ক্যাটাগরিতে রোগীর ঘন ঘন বমি, মাড়ি বা নাক দিয়ে রক্ত পড়া, পায়খানা বা বমিতে রক্ত পড়া, নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ পেয়ে থাকে। ডেঙ্গু জ্বরকে ভয় না পেয়ে সঠিক চিকিৎসা নিলে দ্রুতই সেরে যায়। ডেঙ্গু জ্বরে একেবারে শুরু থেকেই চিকিৎসা নেওয়া জরুরি। চিকিৎসায় বিলম্ব হলে জীবন সংশয়ের কারণ হতে পারে ডেঙ্গু জ্বর। ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর প্রধান কারণ হাসপাতালে চিকিৎসকের কাছে দেরি করে আসা। তাই ডেঙ্গুর মৌসুমে জ্বর হলেই কালক্ষেপণ না করে রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। ডেঙ্গু কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। কেবল ভাইরাসবাহী এডিস মশার কামড়েই ডেঙ্গু হতে পারে। তাই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে। শরীরে ডেঙ্গু ধরা পড়লে সম্পূর্ণ ভাবে বিশ্রামে থাকতে হবে, প্রচুর পরিমাণে তরলজাতীয় খাবার পান করতে হবে। যেমন ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের জুস এবং খাবার স্যালাইন। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে বা বিশেষ করে শিশুদের ডেঙ্গু জ্বর হলে কোন কোন লক্ষণ দেখলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। কারণ এইবার শিশুদের ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার অনেক বেশি। সময়মতো চিকিৎসা করা হলে সাধারণ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত প্রায় ১০০ ভাগ রোগীই ভালো হয়ে যায়। তাই ডেঙ্গুর মৌসুমে জ্বর হলে অবহেলা করা যাবেনা।