পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন জানিয়েছেন, নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাতে নির্বাচন নিয়ে কোনো আলাপ হয়নি। মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এ কথা জানান। নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আলাচনার বিষয়ে জানতে চাইলে মোমেন বলেন, খুব ভালো ভালো আলাপ হয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী জো বাইডেনকে বলেছেন, ‘আমি বাবা-মা, ভাইদের হারিয়েছি; পরিবারের সব লোককে হারিয়েছি। এখন বাংলাদেশের জনগণই আমরা পরিবার। তাদের মুখে দুবেলা ভাত, জীবনমানের উন্নয়নের জন্য আমি কাজ করছি। আমার এখন বিরাট পরিবার, ১৭০ মিলিয়নের পরিবার। তাদের আমি সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করে দিতে চাই। আমাদের স্বপ্ন একটি সুন্দর বাংলাদেশ। আমার একটাই জীবনের কাম্য, আমার দেশবাসীর মঙ্গল করা। শেখ হাসিনার এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট কী বলেছেন-জানতে চাইতে মোমেন বলেন, তিনি (বাইডেন) বলেছেন, ‘আমি জানি।’ তাদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে কোনো আলাপ হয়েছে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সেগুলো নিয়ে কোনো আলাপ হয়নি। আরেক প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, আমরা কখনও চাপের মুখে ছিলাম না। আমরা চাপের মধ্যে নেই। আমরা আগামী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সুতরাং আমরা কোনো চাপের মধ্যে নেই। আপনারা (গণমাধ্যম) বরং চাপের মধ্যে আছেন। আর আপনারা আমাদের চাপের মধ্যে ফেলতে চান। এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন জানান, স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে রাশিয়ার দেওয়া প্রস্তাবে সুদের হার অনেক বেশি ছিল। সে কারণে রাশিয়ার সঙ্গে না হয়ে ফ্রান্সের সঙ্গে স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণের চুক্তি হয়েছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরকালে স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণের চুক্তি হয়েছে। তবে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে একটি এমওইউ সই হয়েছিল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, আমি শুনেছি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের যে আলাপ হয়েছে, সেখানে তাদের সুদের হার অনেক বেশি ছিল। সে কারণে রাশিয়ার সঙ্গে না হয়ে ফ্রান্সের সঙ্গে স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণের চুক্তি হয়েছে। তিনি বলেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট সুসম্পর্ক গড়তে ঢাকায় এসেছেন। তিনি বলেছেন, এখানে আসতে পেরে তিনি খুব খুশি। তিনি স্বীকার করেছেন, ইন্দো প্যাসিফিকসহ অত্র অঞ্চলে শান্তি স্থিতিশীলতা অব্যাহত রাখতে হবে। কেননা এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। তারা চাইছেন, ইন্দো প্যাসিফিকে বাংলাদেশসহ এ এলাকার সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করতে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট জলবায়ু ইস্যুতে আমাদের এক বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, টাকাণ্ডপয়সা নিয়ে চিন্তা করবেন না, যত লাগবে দেওয়া যাবে। প্রসঙ্গত, গত ১০-১১ সেপ্টেম্বর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ঢাকা সফর করেন।
এদিকে মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ: দ্য ইয়ুথ পার্সপেক্টিভ’ শীর্ষক সেমিনারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিয়ে আমাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই। ভিসা না দিলে সেটা যুক্তরাষ্ট্রের সরকারকে জিজ্ঞেস করেন। এটা আমাদের বিষয় না। মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণার পর অনেক শিক্ষার্থীর যুক্তরাষ্ট্রে স্কলারশিপ পাওয়ার পরও তাদের ভিসা বাতিল হচ্ছে। এ বিষয়ে মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সেটা যুক্তরাষ্ট্রের সরকারকে জিজ্ঞেস করেন। এটা আমাদের বিষয় না। এটা তাদের মাথাব্যথা, আমার না। আমাদের অধিকাংশ লোকজন এসব ভিসা-টিসা নিয়ে খুব চিন্তিত নয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, একসময় ভারতবর্ষ ছিল মূল আকর্ষণ। এখন আর সেই অবস্থা নেই। আমরা সেই বাংলাদেশ দেখতে চাই, যেখানকার দূতাবাসে গিয়ে ধর্ণা দিতে হবে না, ডেকে ভিসা দেবে। মানুষের ন্যায্য অধিকার বাড়িতে পৌঁছে যাবে। পাসপোর্ট পেতে তিন সপ্তাহের বেশি লাগবে না। এয়ারপোর্টে এসে কোনো অসুবিধা হবে না। আমরা সেই বাংলাদেশ দেখতে চাই। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেই তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ নয়, গত কয়েক বছরে স্থিতিশীলতা ও নেতৃত্বের পরিপক্কতার কারণে বাংলাদেশ অন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেছে।
এদিকে মঙ্গলবার টুইন টাওয়ার ধ্বংসযজ্ঞ নিয়ে এক বিবৃতিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মার্কিন নেতৃত্বের সঙ্গে আমাদের আলোচনা খুব উৎসাহজনক। বিবৃতিতে মোমেন বলেন, আমি দুঃখের সঙ্গে ৯/১১ টুইন টাওয়ার ধ্বংসযজ্ঞের কথা স্মরণ করছি। যে ঘটনায় দুই হাজার ৯৮৮জন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। যার মধ্যে ছয় জন বাংলাদেশি ছিলেন, এদের তিনজন আমার নিজের জেলা সিলেটের। এ ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না বলে আশা প্রকাশ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মোমেন বলেন, আমরা সন্তুষ্ট যে, মার্কিন নেতৃত্বের সঙ্গে আমাদের আলোচনা খুব উৎসাহজনক। সন্ত্রাস নির্মূলে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে তারা। বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সন্ত্রাসবাদের প্রতি জিরো টলারেন্স নীতির কারণে সন্ত্রাসী হামলার কারণে কোনো বোমা বিস্ফোরণ, গ্রেনেড হামলা এবং মৃত্যুর মতো ভয়ের ঘটনা ঘটেনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসবাদ দমনে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। কোনো অজুহাতে ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের মতো সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদের কুৎসিত চেহারা দেখতে চায় না বাংলাদেশ। গত ৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নবম নিরাপত্তা সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এতে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় বাংলাদেশের পাশে থাকার অঙ্গীকার করে যুক্তরাষ্ট্র। বেসামরিক ও সামরিক নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদার করতেও একমত হয় দুই পক্ষ। সংলাপে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকা শাখার মহাপরিচালক খন্দকার মাসুদুল আলম ও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনৈতিক-সামরিকবিষয়ক ব্যুরোর আঞ্চলিক নিরাপত্তাবিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মীরা রাশনিক দুই পক্ষের নেতৃত্ব দেন।