আমাদের দেশে বাড়ছে প্রসাধনের ব্যবহার। সেই সঙ্গে বাড়ছে প্রসাধন প্রতারণা! ‘ত্বক ফর্সাকারী’ বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রীর চটকদার বিজ্ঞাপনে বিভ্রান্ত হচ্ছেন বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ। ‘সৌন্দর্য বর্ধনকারী’ এসব প্রসাধন সামগ্রী কিনে ক্রেতা সাধারণ প্রতিদিনই প্রতারিত হচ্ছেন। অসাধু ব্যবসায়ীরা আসল ব্র্যান্ডের মোড়ক বা কৌটা সংগ্রহ করে তাতে নকল প্রসাধনী ঢুকিয়ে বাজারে সরবরাহ করছে। বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ কারখানায় তৈরি হচ্ছে নামিদামি ব্র্যান্ডের নকল পণ্য। এসব নকল বা ভেজাল পণ্য কিনে আমাদের স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। দেশ-বিদেশের বিখ্যাত কোম্পানির প্রায় সব পণ্য নকল বাজারে পাওয়া যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক খুললেই বিভিন্ন ধরনের রং ফরসা করা ক্রিম, পাউডার, সাবান, লোশন, জেল সব কিছুতেই থাকছে ত্বক ফরসা করার উপকরণ। যা ত্বক উজ্জ্বল করা ও সৌন্দর্য বাড়ানোর কাজে ব্যবহৃত হয়। ফেসবুক লাইফে এসে কেউ বা বলছেন, সাত দিন ব্যবহারে গায়ের রং ফরসা হয়ে যাবে, কেউ বা আবার বলছেন পাঁচ দিনেই মুখের রং ধবধবে ফরসা হয়ে যাবে। আবার অনেকে বিক্রি করছেন রং ফরসা করা কফি ও জুস। যা প্রতিদিন খেলে গায়ের রং ফরসা হবে বলেও প্রলোভন দেওয়া হয়। এতে আসক্ত হয়ে লাখ লাখ নারী টাকা খরচ করে এসব প্রসাধনী ব্যবহার করে প্রতারিত হচ্ছে। শপিং মল, ফুটপাত এবং ছোটখাটো সব বাজারে এসব নকল পণ্য বিক্রি হচ্ছে সস্তা দামে। এতে শুধু আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি না, বরং সরকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কিছু অসাধু ও ধান্দাবাজ লোক বিদেশ থেকে দামি ব্র্যান্ডের পণ্যের প্যাকেট দেশে নিয়ে আসে। এরপর ওই প্যাকেটে নকল পণ্য ঢুকিয়ে তা বাজারে বিক্রি করছে। কোন ভাবেই নকল পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ বন্ধ করা যাচ্ছে না। যদিও বেশকিছু ভেজাল প্রসাধনীর কারখানায় পুলিশ ও র্যাব অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন ব্যান্ডের ভেজাল প্রসাধনী ও প্রসাধনী তৈরির যন্ত্রপাতি-উপকরণ জব্দ করেছেন। এসব ভেজাল প্রসাধনী ব্যবহারের ফলে মানবদেহে ক্যানসার, অ্যালার্জি, ত্বকের প্রদাহ, স্কিন জ্বালা পোড়া, লাল হয়ে যাওয়া। আর শিশুদের জন্য এসব প্রসাধনীর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আরো বেশি মারাত্মক হয়ে থাকে। তাই স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রীর দাম ও মান নিয়ে ব্যাপক আইনি মনিটরিং দরকার। অন্যথায় পরিস্থিতি আরো মারাত্মক আকার ধারণ করবে। নকল পণ্য বন্ধে সরকারের ওপর শুধু দায়িত্ব দিলে হবে না। বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উচিত নকল প্রতিরোধে নিজস্ব সক্ষমতা বাড়ানো ও নিজস্ব টিম তৈরি করা। নকল ও ভেজাল পণ্য রোধ করতে দোকানে দোকানে অভিযান ও যেখানে উৎপাদন হয় সেই কারখানায় অভিযান চালিয়ে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলেই এর প্রতিরোধ সম্ভব হবে।