বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শিল্প খাত হচ্ছে বস্ত্র ও পোশাক খাত। পোশাক কারখানা বা এর সংশ্লিষ্ট কারখানাতেই দূষণ বেশি। ক্রমবর্ধমান বর্জ্য নিয়ে নাকাল পুরোবিশ্ব। স্থলভাগের পাশাপাশি সাগর, মহাসাগর, নদী ও অন্যান্য জলাশয় বিপুল পরিমাণ বর্জ্য বহন করে চলছে, যা প্রাণীকূলের বেঁচে থাকার জন্য হুমকিস্বরূপ। সারা দেশে প্রায় ২০০০টি শিল্প কল-কারখানা আছে। এ শিল্পবর্জ্যরে বড় শিকার হচ্ছে রাজধানী বা শিল্প এলাকার নদীগুলো। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা, বালু, হালদা, কর্ণফুলী, সুরমা, রূপসা কিংবা ব্রহ্মপুত্র কোনো নদণ্ডনদীয় রেহাই পাঁচ্ছে না এ দূষণের হাত থেকে। ফলে বিপন্ন হয়ে পড়েছে জীববৈচিত্র্য। বেকার হয়ে পড়েছে জেলে পরিবার। একটা সময় ছিল জেলেরা নদীতে মাছ ধরে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতেন। এখন আর নদীতে তেমন মাছ পাওয়া যায় না। শিল্পের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে দেশে দূষণের ভয়াবহতাও বাড়ছে। শিল্পণ্ডকারখানা থেকে নির্গত তরল বর্জ্য, বিষাক্ত রাসায়নিক এবং অন্যান্য মানুষের বর্জ্য ইত্যাদির মাধ্যমে নদী-খাল ইত্যাদি দূষণ হচ্ছে এবং শব্দদূষণ করছে। কল-কারখানার পরিমাণ দিন দিন বাড়ার কারণে শিল্পবর্জ্যরে পরিমাণও বাড়ছে। কিন্তু সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে কারো বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট শিল্প মালিকের তেমন মাথাব্যথা নেই। বর্ষাকালে বা বন্যার সময় খাল বেয়ে হালদার পানিতে পড়ছে এসব বর্জ্য, এতে ফসল নষ্ট হচ্ছে। তাই শিল্পণ্ডকারখানা স্থাপনের সময় বা এখন শিল্পের বর্জ্যব্যবস্থাপনা নিয়ে কঠোর হতে হবে। সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকলে কোনো শিল্প স্থাপনা করার অনুমোদন না দেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অধিক কঠোর হতে হবে। নগরায়ণে মাস্টারপ্ল্যানের কোনো বিকল্প নেই। শিল্পণ্ডকারখানা বা আবাসিক স্থাপনা বা হাটবাজার স্থাপনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। শুধু আইন করে বা আইন প্রয়োগ করেই এ সমস্যার সমাধান করা যাবে না। সরকার-শিল্পপতি-জনগণ সবাইকে সচেতন হতে হবে। যার যার ক্ষেত্র থেকে আন্তরিক হলেই এ সমস্যার সমাধান করা যাবে। আমরা চাই রাজধানীর নদী-খাল বর্জ্যমুক্ত হোক, দূষণমুক্ত হোক। এজন্য দরকার সম্মিলিত উদ্যোগ ও সচেতনতা। কেননা বর্জ্য মিশ্রিত পানি মিশে পরিবেশ বিপন্ন করে তুলছে। তাই শিল্পণ্ডকারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ওপরও গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। তবে শিল্পকারখানা পুরোপুরি বন্ধ করা যাবে না। কারখানায় বর্জ্যগুলো পরিশোধন করে তারপর তা ফেলতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনকে নিয়মিত কারখানা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।