ইলিয়াস রাফায়েল'জন্ম নিয়েছিলেন তাঞ্জানিয়ার এক গোঁড়া খ্রিস্টান পরিবারে। সর্বশ্রেষ্ঠ জীবন বিধান হিসেবে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের ঘটনা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেছেন: ‘ইসলাম গ্রহণের আগে আমি ছিলাম খ্রিস্টান। কিন্তু যখন আমার বয়স ছিল ১৬ সে সময় আমার মাথায় এ প্রশ্ন জেগেছিল যে, কেন খ্রিস্ট ধর্ম ঈসা (আ.) -কে স্রস্টার পুত্র বলে মনে করে? কিন্তু আল্লাহর কি মানুষের মত স্ত্রী ও সন্তান আছে? কিংবা কেন খ্রিস্টান নারী সমাজের কথিত ধর্মপ্রাণ অংশও হিজাব বা পর্দা করে না? কখনও এইসব প্রশ্নের জবাব পাইনি। এমনকি খ্রিস্টান পাদ্রিদের কাছ থেকেও এইসব প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর না পেয়ে অন্য সূত্রগুলোর দ্বারস্থ হতে লাগলাম। খুঁজতে খুঁজতে বাইবেলের পুরনো সংস্করণ বা তৌরাতের মধ্যে একটি কথা দেখতে পেলাম যেখানে হযরত ঈসা (আ.) বলেছেন, আমার পরে একজন নবী আসবেন যার নাম হবে আহমাদ। তোমরা তাঁর আনুগত্য করবে। -এটা ছিল আমার জন্য খুবই উদ্দীপনাময় ঘটনা। তাই আমার কাছে এটা স্পষ্ট হয়ে গেল যে খ্রিস্ট ধমের্র পরবর্তী ধর্ম আগের ধমের্র চেয়ে বেশি উন্নত ও পরিপূর্ণ বলেই ঈসা (আ.) এই ধমের্র প্রধানের অনুসরণ করতে বলেছেন। তাই ইসলাম সম্পর্কে ব্যাপক গবেষণায় মশগুল হলাম। 'ইসলামী চিন্তাধারার মূল দিকগুলো জানতে পেরে রাফায়েল অভিভূত হন। এ ধমের্র মধ্যে তিনি পেতে থাকেন নানা প্রশ্নের জবাব। নবী-রাসূলদের জীবনী সম্পর্কে জানার পর হযরত ঈসা (আ.) সহ অন্যান্য নবী-রাসূলের প্রতি তার ভালবাসা, বিশেষ করে, হযরত মুহাম্মাদ (সা.) 'র প্রতি তার শ্রদ্ধা ও ভালবাসা গভীরতর হতে থাকে। রাফায়েল ইসলামের শিক্ষার মধ্যে খুঁজে পান জীবনের প্রকৃত অর্থ এবং জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। ফলে এই নারী ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন যাতে জীবনের সৌন্দর্যকে আরো ভালোভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম হন। ইসলামের মধ্যে জীবনের অর্থকে দেখতে পেলেও রাফায়েল এই ভেবে আতঙ্কিত হন যে মুসলমান হয়েছেন এটা টের পেলে তার পরিবার নিশ্চয়ই ক্ষুব্ধ হবে। তাই মুসলমান হওয়ার সিদ্ধান্ত মনের মধ্যেই গোপন রাখেন মিসেস রাফায়েল। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন: আমার বাবা-মা গোঁড়া খ্রিস্টান হওয়ায় আমার মুসলমান হওয়ার আগ্রহের বিষয়টি তাদের কাছে গোপন রাখতে বাধ্য হই। গোপনেই সব তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু একদিন আমার মা আমার হিজাব ও পোশাক দেখে বুঝে ফেললেন যে আমি মুসলমান হয়ে গেছি। তাই তিনি এর খুব বিরোধিতা করলেন যাতে আমি আবারও খ্রিস্টান হই। তার ধারণা ছিল এটা যে আমি আবেগের বশে ও অন্যান্যের প্রভাবে মুসলমান হয়েছি। তাই আমাকে ধমক দিয়ে ও তিরস্কার করে এই পথ থেকে ফেরাতে চাইলেন। কিন্তু আমার মায়ের সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়। তাই তিনি আমাকে বাবার কাছে সোপর্দ করেন। আমার বাবা ছিলেন খুব ধনী ও অন্য শহরে থাকতেন। তিনি যখন জানলেন যে আমি মুসলমান হয়েছি তখন আমাকে ঘরের মধ্যে ও ঘরের বাইরে খুব কঠিন কাজ দিতে লাগলেন। আমার অবস্থা হল এমন এক দাসীর মত যে কঠিন পরিশ্রম করবে এবং এ ব্যাপারে কোনো প্রতিবাদও করতে পারবে না। তিনি ভেবেছিলেন এইসব কষ্টের চাপে আমি ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করব। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছিল আমার ইমান ততই দৃঢ়তর হচ্ছিল। কারণ, আমি অনেক গবেষণা করে এই দৃঢ়-বিশ্বাস অর্জন করেছিলাম। এভাবে দেখা যায় তাঞ্জানিয়ার নওমুসলিম নারী রাফায়েলের অন্তর ইসলামের নুরে আলোকিত হওয়ার পর তিনি অনেক কষ্টের শিকার হন। তিনি সব সময় আল্লাহর কাছে চান যে আল্লাহ যেন তার বাবা ও মাকেও সুপথ দেখান। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর রাবিয়া নাম ধারণ করেন রাফায়েল।
রাবিয়া মুসলমান হওয়ায় বাবা-মা’র কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও পবিত্র রমজান মাসে রোজা রাখতে চাইতেন। কিন্তু তার পরিবার এর বিরোধিতা করত। প্রথম রোজার অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন: 'প্রথম যেদিন রোজা রেখেছিলাম সেদিন মা ঘরে ছিলেন না। ফলে তিনি বুঝতে পারেননি যে আমি কিছু খাইনি। বিকেলে যখন ঘরে ফিরি তখন মা বললেন: আজ যে খাবার নিয়ে যাওনি, যাও রান্নাঘরে গিয়ে খাবার খেয়ে নাও। আমি বললাম, আমার এখন খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না, পরে খাব। কিন্তু মা আমাকে খেতে বাধ্য করার জন্য জোরাজুরি করছিলেন। আর আমি নানা বাহানায় সময় কাটাতে চাচ্ছিলাম যাতে মাগরিবের আজানের সময় রোজা ভাঙ্গতে পারি। মাগরিবের আজানের তেমন একটা সময় বাকি ছিল না। কিন্তু হঠাৎ মা বুঝতে পারলেন যে আমি রোজা রেখেছি। তিনি খুব ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে এত ঘুষি মারলেন যে নিজেই ক্লান্ত হয়ে আমাকে ছেড়ে দেন। আর এমন সময় আযান শুনলাম এবং ওই দূরবস্থার মধ্যেই রোজা খুলি। এইসব নির্যাতন খুব অসহ্য হওয়া সত্ত্বেও ইসলামের কথা ভেবে তা সয়ে নেয়ায় এ ধর্ম আরো মধুর হয়ে দেখা দেয় আমার কাছে। আজ আমি আনন্দিত যে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি, ফলে নিশ্চিন্ত মনে পরিপূর্ণতার দিকে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। 'অন্যদের কল্যাণ বা সেবা করা ও উপকার করা সব ধর্মেই পছন্দনীয় বিষয়। বিশেষ করে বাবা-মায়ের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করাকে ইসলাম খুবই গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তাঞ্জানিয়ার নও-মুসলিম রাফায়েলও ইসলাম ধর্ম গ্রহণের দায়ে বাবা-মায়ের পক্ষ থেকে কঠোর নির্যাতনের শিকার হওয়া সত্ত্বেও দৃঢ় মনোবল আর কঠিন ধৈর্য ধরে এবং মহান আল্লাহর ওপর আস্থা রেখে বাবা মায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ অব্যাহত রাখেন। ফলে একসময় তিনি এর সুফল দেখতে পান। প্রথমে তার বড় বোন ও পরে তার মাও ইসলামের প্রতি আগ্রহী হয়ে মুসলমান হন।