‘নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠছে কেন’- সংসদে প্রধানমন্ত্রীর তোলা এমন প্রশ্ন শুনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর এমন কথা শুনে অবাক হয়ে গেছি। মানুষ জানে বাংলাদেশে ভোট হয় না, তারা ভোট দিতে পারে না। আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার রাতে সংসদের ২৪তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী ওই প্রশ্ন রেখেছিলেন। ফখরুল বলেন, দুটি নির্বাচন তাদের (আওয়ামী লীগ) অধীনে হয়েছে। একটি ২০১৪ সালে, আরেকটি ২০১৮ সালে। ২০১৪ সালে ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছিল। আর কোনো রাজনৈতিক দল সেই নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তিনি বলেন, নির্বাচনের মূল বিষয় হলো- ভোটাররা ভোট দেবেন। ভোটে জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটবে। আমাদের সংবিধান অনুযায়ী সেই মতামতের ভিত্তিতে পার্লামেন্ট গঠন হবে। সেই পার্লামেন্ট দেশ চালাবে। ২০১৮ সালে কী দেখাল তারা? আগের রাতে ভোট করল। তিনি আরও বলেন, শিডিউল ঘোষণার কয়েকদিন পর থেকে সরকার বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে। এমনকি ২৯ প্রার্থীকেও গ্রেপ্তার করে। তারা নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) কাজে লাগায়। এমনকি বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে সেই ফল তাদের পক্ষে নিয়ে যায়। বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখনো নির্বাচন সংক্রান্ত ৫০টি মামলা হাইকোর্টে আছে। সেগুলোর বিচার এখন পর্যন্ত হয়নি। তাহলে গোটা ব্যবস্থাটা কী? এটি হলো- একটি দলকে নির্বাচিত করা। একটি দলের জন্য সুব্যবস্থা করা, যাতে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে। এমন একটি প্রেক্ষাপটে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন আসছে। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি, এই নির্বাচনে তখনই যাওয়া সম্ভব হবে, যখন একটি নিরপেক্ষ সরকার থাকবে। কারণ, আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, বাংলাদেশের রাজনৈতিক যে সংস্কৃতি, তাতে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়। বিশেষ করে, আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতায় থাকে, তাহলে সেই নির্বাচন কখনই সুষ্ঠু হতে পারে না। তিনি বলেন, আমরা রাজনৈতিক দলগুলো একত্র হয়ে এক দফা দিয়েছি। এতে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে, নির্বাচনের আগেই এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে। সংসদকে বিলুপ্ত করতে হবে এবং নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন করতে হবে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশের মানুষের যে আশা-আকাক্সক্ষা, তা পূরণ করার জন্যই এখানে একটি নিরপেক্ষ অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দরকার। এটি শুধু আমরা নই, সমগ্র বিশ্ব বলছে। তাই তিনি (প্রধানমন্ত্রী) যখন বলেন, এত ভালো নির্বাচন করছেন। সেখানে আজ প্রশ্ন ওঠে কেন? আওয়ামী লীগকে পুনরায় নির্বাচিত করে ক্ষমতায় আনার আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য দেওয়া জামালপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. ইমরান আহমেদের প্রত্যাহারের বিষয়টিকে মির্জা ফখরুল বলছেন আইওয়াশ। অবিলম্বে মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের সম্পাাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিনের মামলা প্রত্যাহারসহ তাদের মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানান বিএনপির এই নেতা। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ ধারার মামলায় গত বৃহস্পতিবার তাদের পৃথকভাবে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এদিকে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এখন দলীয় কোনো নির্দেশনা দেন না বলে জানান মির্জা ফখরুল। হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা দেখা করার পর মঞ্চের শরিক দল নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছিলেন, আওয়ামী সরকারের নির্বাচনে ফাঁদে পা না দিয়ে বেগম খালেদা জিয়া আন্দোলন চালিয়ে নিতে বলছেন। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, কে কী বলেছেন জানি না। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আছে, স্ট্যান্ডিং কমিটি আছে। সেভাবেই সিদ্ধান্ত হয়। তিনি আরও বলেন, চেয়ারপারসন অসুস্থ। তিনি কোনো দলীয় নির্দেশনা দেন না। এসবের মধ্যে টানবেন না। এর আগে সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে সরকারের প্রতি যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানান। এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে মানবাধিকার সংগঠন অধিকার-এর সম্পাদক আদিলুর রহমান খান শুভ্র ও সংগঠনটির পরিচালক এসএম নাসিরউদ্দিন এলানকে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব। অবিলম্বে দুই মানবাধিকার কর্মীর মুক্তি দাবি জানান তিনি। বিএনপির নতুন কর্মসূচির বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, একদফা দাবি এবং তরুণদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে আগামী ১৬ ও ১৭ সেপ্টেম্বর রংপুর এবং রাজশাহী বিভাগে তারুণ্যের রোডমার্চ ঘোষণা করবে আমাদের তিন সংগঠন। আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর একদফা দাবিতে ধারাবাহিক যুগপৎ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সংবাদ সম্মেলনের আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী প্রমুখ।