পানির অপর নাম জীবন। জীবন ধারণ করতে প্রতিদিন পানি পান করতে হয়। কিন্তু এই পানিই যদি নিরাপদ না হয় সেটি উল্টো জীবনহানির কারণ হতে পারে। ঢাকা ওয়াসার সরবরাহকৃত পানির মান নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন রয়েছে। সাম্প্রতিককালে এই প্রশ্ন গুরুতর আকারে দেখা দিয়েছে। বেশ কিছু এলাকায় পানিতে ময়লা ও দুর্গন্ধজনিত সংকট চলছে। এসব এলাকার গ্রাহকেরা বাড়ির পানির বিল পরিশোধ করার পরও ওয়াসার পাম্পস্টেশন থেকে পানি কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। সব মিলিয়েই ঢাকায় দেখা দিচ্ছে তীব্র বিশুদ্ধ পানির সংকট। ঢাকায় পানি চাহিদা দৈনিক ২৫০ কোটি লিটার। ঢাকা ওয়াসার এক প্রতিবেদনে দেখা যায় ঢাকায় প্রায় ২ কোটি মানুষের জন্য দৈনিক গড়ে ২৭৫ কোটি লিটার পানি উত্তোলন করা হয় যার ৮৭ ভাগ আসে ভূগর্ভ থেকে আর বাকি ১৩-১৪ ভাগ আসে নদী থেকে। কিন্তু অতিরিক্ত ২৫ কোটি লিটার পানি উত্তোলনের পরেও দেখা যাচ্ছে পানির সঙ্কট কমছেনা। এই সঙ্কটের প্রধান কারণ গুলোর মধ্যে একটি হলো ওয়াসার ত্রুটিপূর্ণ পাইপলাইন। ওয়াসার লাইনগুলোর বেশীরভাগ পাইপেই রয়েছে লিকেজ। ফলে দৈনিক চাহিদার বড়ো একটি অংশ গ্রাহকের হাতে পৌঁছাবার আগেই অপচয় হয়ে যায়। আবার দেখা যায় ময়লা-আবর্জনা ও দুর্গন্ধময় পানি সরবরাহের কারণে রাজধানীবাসী আক্রান্ত হচ্ছে চর্মরোগ, ডায়রিয়া ও পেটের পীড়ার মতো নানা রোগে। এর মধ্যে দারিদ্র্য পীড়িতরা উচ্চবিত্তের চেয়ে তিনগুণ বেশি পীড়ায় ভুগছে। এর কারণ হিসেবে দেখা যায় শহরের পয়ঃনিষ্কাশন লাইন আর ব্যবহার যোগ্য পানির লাইন পাশাপাশি প্রবাহিত হচ্ছে। ভারী বৃষ্টিপাতের সময় লিকেজ লাইনগুলোতে সহজেই মিশে যাচ্ছে পয়ঃনিষ্কাশনের পাইপের পানি। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন, পাইপলাইনে সংস্কার কাজ চলার সময় পানির লাইনে ময়লা ঢুকে যায়। এতে করেও পানি দূষিত হয়ে থাকে। ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত হওয়ায় ওয়াসার পানি পান করতে হয় ফুটিয়ে এতে করে প্রতিবছর অপচয় হচ্ছে মূল্যবান গ্যাসের। পাশাপাশি শিল্পবর্জ্য এবং পাতাল থেকে অতিরিক্ত পানি উত্তোলনের কারণে পানির গুণগত মানে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ অবস্থায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এর জন্য প্রথমেই ত্রুটিপূর্ণ পাইপলাইন গুলো মেরামত করতে হবে। নিরাপদ পানির জন্য বাজেট বাড়াতে হবে। বাজেটের বরাদ্দকৃত অর্থের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। এ ক্ষেত্রে দুর্নীতি অবশ্যই বন্ধ করা হবে। ঢাকার পার্শ্ববর্তী নদণ্ডনদীর দূষিত পানি শোধন করে ব্যবহারের পথ খুঁজতে হবে। পাশাপাশি নগরবাসীকে অতিরিক্ত পানির ব্যবহার বন্ধ করা অর্থাৎ শুধু যতটুকু পানি দরকার ততটুকু পানি ব্যবহার করতে হবে। একমাত্র সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে রাজধানীর বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে।