দেশে আবারও নতুনভাবে তৎপর হয়ে উঠছে জঙ্গীগোষ্ঠী। পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) দাবি করছে, সংস্থাটি তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ (আল-জিহাদী) নামে নতুন একটি জঙ্গি সংগঠনের সন্ধান পেয়েছে। এ সংগঠনের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর এ তথ্য জানা গেছে। এটিইউর পক্ষ থেকে জানানো হয়, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে পুলিশের এই বিশেষায়িত তদন্ত সংস্থা। এটিইউ দাবি করে, ‘তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ (আল-জিহাদী)’ নামে একটি নতুন উগ্রবাদী সংগঠন সদস্য সংগ্রহের তৎপরতা চালাচ্ছে, এমন তথ্য ছিল। সংগঠনটি সশস্ত্র উগ্রবাদী মতবাদের ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা ও নানামুখী সন্ত্রাসী হামলার ছক এঁকে উসকানিমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। পরে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের বেশ কিছু নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। উদ্ধার করা হয়েছে অস্ত্র ও বিস্ফোরক। দেশে জঙ্গি তৎপরতার দীর্ঘ ও ভয়ংকর অভিজ্ঞতা রয়েছে। সারা দেশে একযোগে পাঁচ শতাধিক বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। আদালত, জনসমাবেশ, সিনেমা হলসহ জনবহুল অনেক স্থানে হামলা হয়েছে। শত শত মানুষ হতাহত হয়েছে। নিষ্ঠুরতা প্রদর্শনের জন্য জঙ্গিরা মানুষ মেরে উল্টো করে গাছের ডালে ঝুলিয়ে রেখেছে। তাদের সঙ্গে বিদেশি জঙ্গিদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তাদের পেছনে কিছু রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তির সম্পৃক্ততাও দেখা গেছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অভিযানে জঙ্গি তৎপরতা স্তিমিত হলেও জঙ্গিরা হারিয়ে যায়নি। বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, তারা গোপনে সংগঠিত হচ্ছে। তারা সময় ও সুযোগের অপেক্ষায় আছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তারা আবারও মাঠে নামতে পারে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর শুধু জঙ্গি নয়, নির্বাচনের আগে আগে সন্ত্রাসী-অপরাধীরাও তৎপর হয়ে ওঠে। বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে পাঁচার হয়ে আসা আগ্নেয়াস্ত্রের বেশ কিছু চালান এরইমধ্যে আটক করা হয়েছে। ধরা পড়েছে অবৈধ অস্ত্রের বেশ কিছু ক্রেতা ও বিক্রেতা। রাজনৈতিক সংঘাত-সংঘর্ষে এসব অস্ত্র ব্যবহারের আশঙ্কাও রয়েছে। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, জঙ্গিরা সাধারণত উঠতি বয়সের কিশোর-তরুণদের বাছাই করে। ধর্মের নানা রকম অপব্যাখ্যা দিয়ে তাদের মগজ ধোলাই করে। দাওয়াতি কর্মকাণ্ড বা হিজরতের কথা বলে তাদের ঘরছাড়া করে। একসময় তাদের জঙ্গি কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করে। জঙ্গিবিরোধী অভিযানে পুরো প্রক্রিয়াটিকে আমলে নিতে হবে। গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সাফল্যের জন্য সমাজকে বেশি করে সম্পৃক্ত করতে হবে। অভিভাবকদের সচেতন করতে হবে। শিক্ষক, ধর্মীয় নেতা, জনপ্রতিনিধি, সমাজকর্মীসহ সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের অভিযানের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। আমরা চাই না, বাংলাদেশে আবারও জঙ্গি সন্ত্রাসের সেই ভয়াবহ দিনগুলো ফিরে আসুক।