কোমল পানীয় বা কোক ও ফলের জুস দেশে বিদেশে জনপ্রিয় পানীয়। কোমল পানীয় বা সফট ড্রিংকসের ইতিহাস অর্ধশতকালের। পানি, চিনি, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, লেবুর জুস দিয়ে প্রথম তৈরি করা হয় সফট ড্রিকংস। কালের বিবর্তনে এতে এসেছে উপাদানগত পরিবর্তন। যোগ হয়েছে ক্যাফেইন, কখনো বা ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল, অপিয়েট। ক্যাফেইন যোগ করার কারণ হলো, এটি মস্তিষ্ক উত্তেজিত করে। ফলে পানকারী ব্যক্তির ভিতর একরকমের ভালো লাগা কাজ করে থাকে। চিনি দিয়ে বা কৃত্রিম মিষ্টি দিয়ে তৈরি কোমল পানীয় আগাম মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দিচ্ছে। এক গবেষণায় দেখা যায় এসব পানীয়ের কারণে হৃদরোগ এবং কয়েক ধরনের ক্যান্সারের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। অথচ এর না আছে পুষ্টিগুণ আর না আছে পানিশূন্যতা দূরীকরণের ক্ষমতা। এক প্রতিবেদনে দেখা যায় কোমল পানীয়ে রয়েছে ইথিলিন গ্লাইকল, কৃত্রিম রঙ, কার্বন-ডাই-অক্সাইড ফসফরিক এসিড, বেশি মাত্রার ক্যাফেইন, ঘন চিনি, অপিয়েট ও সিলডেনাফিল সাইট্রেট-এর মতো ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান। যা কিনা মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। অনেক সময় মনে করা হয় খাদ্য হজমে কৃত্রিম পানীয় ভূমিকা রাখে, কিন্তু এটি সাময়িক স্বস্তি দিলেও এটি প্রকৃতপক্ষে পাকস্থলীর ভারসাম্য নষ্ট করে। তাছাড়া এই ধরনের পানীয় শরীরের ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কমিয়ে দেয় যা পরবর্তীতে হাড়ের ক্ষয়জনিত সমস্যা সৃষ্টি করার পাশাপাশি ক্ষুধামন্দা, অম্লতা বা অ্যাসিডিটি, দাঁতের ক্ষয় বা মেদবৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কোমল পানীয়তে বেবহার করা হয় অতিরিক্ত মাত্রায় চিনি বা ক্ষতিকর উচ্চমাত্রার ফ্রুকটোজ কর্ণ সিরাপ। এই সিরাপ তৈরি হয় জেনেটিক্যালি মডিফাইড শস্য থেকে, যা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। মাত্রাতিরিক্ত চিনি হার্টের রক্তনালীতে প্রবাহ সৃষ্টি করে, যা হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম কারণ। কোমল পানীয় পান করে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের ওজন বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের শিশু ও বয়স্ক মানুষের মধ্যেও ওজন বাড়ার প্রবণতা মারাত্মক হয়ে দেখা দিয়েছে। উচ্চ মাত্রার ক্যাফেইন স্নায়ু উত্তেজক যা ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি করে। ক্যাফেইন রক্তচাপ ও আসক্তি বাড়ায়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইন গর্ভপাত, নির্দিষ্ট সময়ের আগেই প্রসব, কম ওজনের সন্তান প্রসব ও গর্ভস্থ শিশুর জন্মগত ত্রুটি ঘটানোর মতো জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। কোমল পানীয়তে এসপারটেম নামের এক ধরনের কৃত্রিম মিষ্টি ব্যবহার করা হয়, যা মস্তিষ্কের কোষের জন্য ক্ষতিকর। বর্তমানে শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধদের কাছেও কোমল পানীয় পান করা অনেকেরই নেশার মতো হয়ে গেছে, যা থেকে বেরিয়ে আসাটা অনেক কঠিন। তাই ধীরেধীরে এর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সরকারকে কোমল পানীয়র ক্ষতিকর দিক গুলো সম্পর্কে ব্যাপক ভাবে প্রচারণা চালাতে হবে। পাশাপাশি এর উপর ভ্যাটের পরিমাণ বাড়াতে হবে এতে করে জনগণ এসব কোমল পানীয় ক্রয় করা থেকে নিরুৎসাহিত হবে। সর্বোপরি সুস্থ থাকার জন্য কোমল পানীয় বর্জন করার কোন বিকল্প নেই।