বর্তমানে আমাদের দেশে প্রতিনিয়তই বহু ধরনের দুর্ঘটনায় মানুষের প্রাণহানিসহ ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। এর মধ্যে অগ্নিজনিত দুর্ঘটনা অন্যতম। গত কয়েক বছরে এ দুর্ঘটনায় প্রাণহানিসহ সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। পুড়ে ছাই হয়েছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। বর্তমানে অগ্নি দুর্ঘটনা একটি সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অসতর্কতা এবং অসাবধানতার কারণে যেমন অগ্নি দুর্ঘটনা বাড়ছে, তেমনি অজ্ঞতার কারণে প্রাণ ও সম্পদহানির মাত্রাও কমিয়ে আনা যাচ্ছে না। বেশ কিছু কারণে দেশে বাড়ছে এই অগ্নি দুর্ঘটনা যার ভিতর মানহীন ও ঝুঁকিপূর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার অন্যতম। বর্তমানে পরিবহন ও রান্নার কাজে সিলিন্ডারের ব্যবহার দ্রুত বাড়লেও সিলিন্ডার নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি বাড়ছে না। ফলে দুর্ঘটনায় সম্পদ ও প্রাণহানির ঝুঁকি বাড়ছে। এক প্রতিবেদনে দেখা যায় ২০২২ সালে ৯০টি সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। একই বছর গ্যাসলাইন ও গ্যাস সিলিন্ডারের কারণে ৭৬৭টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। তাছাড়া বেশ কয়েকটি অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটেছে। দেশে আরেকটি অগ্নি দুর্ঘটনার কারণ হলো নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের ব্যবহার। দেশে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় নকল ও নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম। বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের বেশির ভাগই আমদানি করা। বাজারে বিক্রি হওয়া অধিকাংশ সুইচ, সার্কিট ব্রেকার, বৈদ্যুতিক তার বিএসটিআইয়ের সনদহীন। আবার আমদানিতে ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক থাকলেও তা সঠিকভাবে মানা হচ্ছে না। অসাধু ব্যবসায়ীরা নিম্নমানের পণ্য আমদানি করে দেদারে বিক্রি করছে। এই নিন্মমানের সরঞ্জাম ভারী বৈদ্যুতিক লোড নিতে পারেনা ফলে বিদ্যুতের ভারী লোড পড়লেই এইসব সরঞ্জাম শর্টসার্কিটের হয়ে অজান্তেই ভয়াবহ অগ্নি দুর্ঘটনার সৃষ্টি হয়। আবার দেখা যায় অগ্নি দুর্ঘটনা সংঘটিত হলে ঘিঞ্জি পরিবেশ, দুর্বল ব্যবস্থাপনা, সরু রাস্তা দিয়ে ফায়ারসার্ভিসের পৌঁছাতে কষ্টসাধ্য হয়ে পরে, বিল্ডিং গুলোতে অগ্নিপ্রতিরোধের ব্যবস্থা না থাকায় ও ঢাকার আশপাশে ও মধ্যের নদী-নালার পানিশূন্যতা কারণে উদ্ধারকার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ড থেকে প্রচুর পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়। তাই এখনি অগ্নি দুর্ঘটনা কমাতে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে। নগরীতে সিলিন্ডার প্রাত্যহিক জীবনের অংশ হয়ে গেছে। তাই সিলিন্ডার বন্ধ করা সম্ভব নয়। তবে নিরাপত্তার জন্য ব্যবহারের পর সিলিন্ডার বন্ধ রাখতে হবে। মানহীন ও ঝুঁকিপূর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সরকারকে গ্যাস সিলিন্ডার সরবারাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে জবাবদিহিতার ভিতর আনতে হবে। আমদানি করা সুইচ সকেট, সার্কিট ব্রেকারে বিএসটিআইয়ের মানচিহ্ন থাকা বাধ্যতামূলক করতে হবে। কেউ অনুমোদনবিহীন এসব পণ্য আমদানি ও বাজারজাত করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। বাসা বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বৈদ্যুতিক যে তার ও সুইচ লাগানো হয়েছে, তা নিয়মিত পরীক্ষা করে দেখতে হবে। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যাবেনা। ঘিঞ্জি এলাকার প্রতিটি গলিতে একটি করে জরুরি পানির লাইন রাখতে হবে যাতে করে আশেপাশের পুকুর বা ডোবা থেকে পানি না নেওয়া গেলে জরুরি লাইন থেকে নেওয়া যায়। সর্বোপরি অফিস আদালত, শিল্পপ্রতিষ্ঠানে খোলা আগুন ব্যবহার করা যাবেনা, জ্বলন্ত সিগারেট, ম্যাচের কাঠি যেখানে সেখানে ফেলা যাবেনা। আগুনের ঘটনা টের পেলে সঙ্গে সঙ্গে মেইন সুইচ বন্ধ করে দিতে হবে। আগুন লাগলে দ্রুত নিকটবর্তী ফায়ার সার্ভিস কেন্দ্রে খবর দিতে হবে। শুধু সচেতনতা বাড়ানো গেলেই অগ্নি দুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। এককথায় সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই।