নীলফামারীর চারপাশ এখন সোনালী ধানের সবুজের সমারোহ। শরতে চলছে তালপাকা অসহ্য ভ্যাপসা গরম। মাঝে মধ্যে হালকা হাওয়ায় দুলছে দিগন্ত জোড়া আমন ধানের সবুজে সমারোহ ক্ষেত। গোটা জেলায় আমনের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। নীলফামারী সদর উপজেলার সংগলশী ইউনিয়নের সুবর্নখুলি গ্রামের কৃষক সুদেব রায় জানান, এবার আমনের ফলন ভাল হবে। কারণ কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেই। ফলে ধানের গাছ সবল আছে। সৈয়দপুর, কিশোরগঞ্জ, জলঢাকা, ডিমলা, ডোমার ও নীলফামারী সদর উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, এবার আমনের বাম্পার ফলনের চিত্র। গত বছরগুলোতে আমন মৌসুমে ছিল প্রবল বৃষ্টি। ফলে দেখা দিত বন্যা। চারা রোপনের পর ওই প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয়ায় কৃষকের ফসল পানিতে তলিয়ে গিয়ে নষ্ঠ হয়ে যেত। শেষ সময়ে আর কৃষক ফসল রোপন করতে পারতেন না। ফলে ওই সকল জমিতে পরবর্তী সময়ে অন্য ফসল লাগাতো তারা। কিন্তু এবার কোন ধরনের বন্যা নেই। নেই অন্য কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ। তাই চারা রোপণের পরই মাঝে মাঝে হালকা বৃষ্টি হওয়ায় রোপনকৃত চারা সবল হয়ে উঠছে। আর কৃষকের নিবিড় পরিচর্যায় তা দ্রুত বেড়ে ওঠছে। গোটা জেলায় সবুজে ছেয়ে গেছে আমন ধানের ক্ষেত। আর দিগন্ত জুড়ে সবুজের মাঝেই উঁকি দিচ্ছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন। সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম ও রফিকুল ইসলাম জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। সময় মত বৃষ্ঠি না হওয়ায় প্রথমের দিকে ক্ষেতে সেচ দিয়ে ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে। তবে এখন প্রায়ই সময় বৃষ্টি হচ্ছে। কৃষকরা কোন জমি খালি রাখেনি। ক্ষেতের অবস্থা আপাতত ভালোই দেখা যাচ্ছে। আশা করছি ফলন ভাল হবে। কিশোরগঞ্জ উপজেলার চাঁদখানা ইউনিয়নের কৃষক এমদাদুল হক জানান, আমরা কৃষি অফিসের পরামর্শে আমন ধানের বীজ বপন ও চারা রোপণ করেছি। প্রথমে ২ বিঘা জমিতে ধান লাগার সময় তেমন বৃষ্টি হয়নি। তবে পরে বৃষ্ঠির দেখা মেলায় আমার সব জমিতে আমন লাগিয়েছি। বর্তমানে তা সবল আছে। গত বারের চেয়ে এবার হয়তো বেশি ফসল ঘরে তুলতে পারবো। জলঢাকা উপজেলার কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, তিনি ৪ বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছেন। নিজেই ক্ষেতের পরিচর্যা করেন তিনি। ফসল ভাল হয়েছে। ফলন ভাল হলে বেশী লাভবান হবেন তিনি। ডিমলা উপজেলার কৃষক লাজু হোসেন বলেন, আমি ২ বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছি। ফসল খুবই ভাল হয়েছে। তবে ফলন ভাল হলে তিনি গত বারের চেয়ে বেশী ফসল ঘরে তুলতে পারবেন বলে জানান। ডোমার উপজেলার কৃষক আহসান হাবিব জানান, তিনি ৩ বিঘা জমিতে আমন লাগিয়েছেন। ফলন ভাল হবে তিনি আশা করেন। নীলফামারী সদর উপজেলার কৃষক বিপুল হোসেন জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধান গাছের চেহারা যথেষ্ট ভালো। আশা করছি, ফলনও ভালো হবে। তিনি বলেন বিঘা প্রতি তার ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫ হাজার টাকা। তবে আশা করছেন প্রতি বিঘায় তিনি ধান পাবেন ২০ মন করে। এটি হলে তার দ্বিগুনেরও বেশী লাভ হবে। সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ধীমান ভুবন বলেন, এবার সৈয়দপুরে আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮২১০ হেক্টর। অর্জিত ৮২১২ হেক্টর। ডিমলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেঃ সেকেন্দার আলি জানান, এবার চলতি রোপা আমন মৌসুমে ২০ হাজার ৯শ ৩৮ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে। চাষ হচ্ছে হাইব্রিড, উফশি ও দেশি জাতের ধান। যা শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সক্ষম হবে। তিনি আরও বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ না থাকায় ক্ষেতের অবস্থা বেশ ভলো। ফলে এবার ধানের ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিশোরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ লোকমান হাকিম জানান,এবার লক্ষমাত্রা ১৪ হাজার, ৮শ ৮৫ হেক্টর। অর্জন হয়েছে ১৪ হাজার, ৯শ ৩৫ হেক্টর। ডোমার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, লক্ষমাত্রা ১৭ হাজার, ৯শ ৩৫ হেক্টর। অর্জন ১৭ হাজার ৯শ ৪০। জলঢাকা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন বহমেদ জানান, এবার জলঢাকায় আমনের লক্ষমাত্রা ২২ হাজার, ৯শ ২৩ হেক্টর। নীলফামারী কৃষি বিভাগের উপপরিচালক ড. এস এম আবু বকর সাইফুল ইসলাম জানান এবার জেলায় আমনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ, ১৩ হাজার, ৭শ, ৭২ হেক্টর এবং অর্জিত হয়েছে এটি।