ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলাকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার সাথে যুক্ত করেছে মেঘনা সেতু। দেশের ব্যস্ততম এই মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন পারাপার হলেও গত কয়েক মাস ধরে সেতুর ল্যাম্প পোস্টে আলো না জ্বলায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এ পথে চলাচলকারী যানবাহন চালক ও পথচারীদের। অন্ধকারে সেতু এলাকায় বেড়েছে ছিনতাইয়ের ঘটনা, চুরি হয়ে যাচ্ছে সেতুর মূল্যবান মালামাল। চোর চক্রের অপতৎপরতা রোধ করতে না পেরে বাধ্য হয়ে আনসার নিয়োগ দেয়ার চিন্তা করছে সড়ক ও জনপথ। সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা যায় সবগুলো ল্যাম্প পোস্টেই বাতি আছে; কিন্তু কোনোটিতেই আলো জ্বলছে না। অন্ধকার গোটা এলাকা। হেডলাইটের আলোয় চলাচল করছে যানবাহন, অন্ধকারেই হেটে সেতু পার হচ্ছেন কয়েকজন মানুষ। সেতুর নিচের গজারিয়া অংশের বিস্তীর্ণ এলাকায় দেখা যায় মানুষের ছোট ছোট জটলা। কেউ বন্ধু-বান্ধবের সাথে আড্ডা দিচ্ছেন, কেউ আবার একসাথে মিলে সিগারেট, গাঁজা সেবন করছেন। এ সময় সেতু এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্বে কাউকে দেখা যায়নি। স্থানীয়রা জানায়, গত কয়েক মাসে এই এলাকায় বেড়েছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। আর সেতুর মালামাল চুরি করতে গড়ে উঠেছে সঙ্গবদ্ধ একটি চক্র। এই পথে এ নিয়মিত চলাচলকারী মোটরসাইকেল চালক হৃদয় আহমেদ বলেন, অল্প কিছুদিন আগে তিনি এবং তার বন্ধু মোটরসাইকেলে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলা থেকে গজারিয়া উপজেলায় আসছিলেন। পথিমধ্যে মেঘনা সেতুতে তারা মোটরসাইকেল থামিয়ে কিছুক্ষণ কথা বলার সময় অন্য আরেকটি মোটরসাইকেলে তিন যুবক এসে চাকু দেখিয়ে তাদের মোবাইল সেট এবং টাকা পয়সা দিয়ে দিতে বলে। তারা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ছুরি দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে যায় তারা। সন্ধ্যার পর এ পথে চলাচলকারী বিশেষ করে যারা হেটে সেতু পার হন তারা প্রায়ই ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন। বিষয়টি সম্পর্কে বালুয়াকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রিটু প্রধান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি অনেক বার কথা বলেছি। এ সেতুর নিরাপত্তায় কোনো লোক নেই। সেতুর মালামাল চুরি করতে গড়ে উঠেছে সংঘবদ্ধ একটি চোর চক্র। মালামাল চুরি করতে এসে বেশ কয়েক বার জনগণের হাতে চোর চক্রের সদস্যরা আটক হয়েছে। সেতুর সিঁড়ির লোহা, নাট বল্টু, পাইপ এমনকি উপরের পথচারী চলাচলের কংক্রিট ব্লক খুলে নিয়ে যাচ্ছে তারা।’ বাস চালক আবদুর রহিম বলেন, ‘রাতে আমরা লাইট জ্বালিয়েই চলাচল করি তারপরও সেতুতে আলো থাকা দরকার ছিল। সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে এত সুন্দর একটি স্থাপনা তৈরি করেছেন সেখানে আলো থাকবে না, এটা কোনো কথা?’ বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস বলেন, ‘মেঘনা সেতুকে কেন্দ্র করে সক্সঘবদ্ধ একটি চোর চক্র গড়ে উঠেছে। তারা সেতুর মূল্যবান মালপত্র চুরির পাশাপাশি ল্যাম্পপোস্টের বাতি এবং তার চুরি করে নিয়ে গেছে। সম্প্রতি সেগুলো ঠিকঠাক করলেও এখন আবার একটি ট্রান্সফরমার চুরি হওয়ায় আলো জ্বালানো যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় সিসিটিভি ক্যামেরাগুলোও বন্ধ। আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও সহযোগিতা চেয়েছি, কিছুতেই যেন কিছু হচ্ছে না। এখন সেতুর নিরাপত্তা ও মালপত্র চুরি প্রতিরোধে আনসার বাহিনী নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা করছি আমরা।’ উল্লেখ্য, যানবাহনের অত্যধিক চাপে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই লাইনের সেতুর কারণে যানজটের সৃষ্টি হওয়ায় ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে দ্বিতীয় মেঘনা সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করে সরকার। ২০২০ সালে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের সাত মাস আগে ২০১৯ সালের ২৫ মে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয় সেতুটি। ১২টি স্প্যানের ওপর নির্মিত দ্বিতীয় মেঘনা সেতুর দৈর্ঘ্য ৯৩০ মিটার, এ সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৭৫০ কোটি টাকা। ১৭.৭৫ মিটার প্রস্থের সেতুতে দেড় মিটার ফুটপাত রাখা হয়েছে।