প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা নীলফামারীর সৈয়দপুরে ৫০ আসনের একটি মেডিকেল কলেজ হবে। ইতোমধ্যে এটি নিয়ে বেশ কয়েক বার জড়িপ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এদিকে মেডিকেল কলেজ নির্মাণ নিয়ে সৈয়দপুরে কতিপয় বহিরাগত ব্যক্তি ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠেছেন। প্রবাদ আছে 'দাঁত থাকতে মানুষ দাঁতের মর্যাদা দেয়না'। সৈয়দপুরের প্রতিটি উন্নয়ন-অগ্রগতির ক্ষেত্রে এ প্রবাদটির বাস্তব প্রতিফলন লক্ষ্য করা গেছে। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সৈয়দপুরে একটি রেলওয়ে মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছেন। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় গড়ে উঠবে ৫০ আসনের মেডিকেল কলেজ ও ২৫০ শয্যার একটি হাসপাতাল। নিঃসন্দেহে সৈয়দপুরবাসীর জন্য এ এক অনন্য পাওয়া, দুর্লভ প্রাপ্তি। একটি উপজেলা শহরে মেডিকেল কলেজ ওই জনপদের মানুষের প্রত্যাশায় স্বপ্নেরও অতীত ছিল। যেটি বর্তমান জনবান্ধন সরকারের আমলে বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। এনিয়ে সৈয়দপুরসহ অত্রাঞ্চলের মানুষ আনন্দে উদ্বেল। কবে মেডিকেল কলেজের নির্মাণ কাজ শুরু হবে এজন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছেন তারা। অথচ এমন একটি জনগুরুত্বপূর্ণ স্হাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রেও বিরোধিতায় নেমেছেন সৈয়দপুরের স্বার্থান্ধ কিছু অর্বাচিন। নিজেদের দীর্ঘদিনের অবৈধ দখল হাতছাড়া হবে এই আশঙ্কায় তারা সরকার নির্ধারিত স্হানে মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার বিপক্ষে অবস্হান নিয়েছেন। বিরোধিতাকারী ওই গ্রুপটি হাসপাতালের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মিছিল-মিটিং সমাবেশ ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে চিঠি চালাচলি শুরু করে। তাতে মনগড়া যুক্তি ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ক্ষমতসীন দলের স্হানীয় বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মী ও পেশাজীবি সংগঠনের প্রতিনিধিদের কঠোর অবস্হান ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাধারণ মানুষের তীব্র সমালোচনার কারণে তারা পিছু হটেছে। বর্তমানে ওই গ্রুপটির মেডিকেল কলেজ বিরোধী কোন কর্মসূচি প্রকাশ্যে দেখা না গেলেও থেমে নেই তাদের অপতৎপরতা। তারা মেডিকেল কলেজের নির্ধারিত স্হানের বিরোধিতা করে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে আবেদন-নিবেদন অব্যাহত রেখেছেন। তাদের এই বিরোধিতা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশ্লেষকদের মতে, সৈয়দপুরসহ দেশের আরও পাঁচটি রেল বিভাগীয় শহরের হাসপাতালকে ঘিরে পিপিপির আওতায় মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। তবে অগ্রাধিকার তালিকায় আছে সৈয়দপুর রেলওয়ে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। তারা বলছেন, রংপুর বিভাগের লালমনিরহাট রেলওয়ে হাসপাতালকে ঘিরে মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার দাবি সেখানকার মানুষের। সেখানেও আছে রেলওয়ে হাসপাতাল ক্যাম্পাসসহ অব্যবহৃত রেলওয়ের বিশাল ভূসম্পত্তি। এছাড়াও ওই জনপদে রয়েছেন একজন পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী। তাই তাদের দাবি যে গুরুত্ব পাবে না সে কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। এ ক্ষেত্রে একই বিভাগের দুই জনপদের রশি টানাটানিতে সৈয়দপুরের প্রস্তাবিত রেলওয়ে মেডিকেল কলেজ যদি অন্যত্র স্থানান্তরিত হয় তাহলে হতাশা ছাড়া সৈয়দপুরবাসীর কোন গত্যন্তর থাকবে না। বিশ্লেষকদের মতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দৃষ্টি রয়েছে সৈয়দপুরের প্রতি। এর আগে জাতীয় সংসদ অধিবেশনের প্রশ্নত্তোর পর্বে কর্নেল (অবঃ) এ এ মারুফ সাকলানের (এমপি) জেলা সংক্রান্ত দাবির জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, এই মুহূর্তে জেলা করা সম্ভব না হলেও জেলার সমমর্যাদার সুযোগ সুবিধা ও অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে সৈয়দপুরে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রতিশ্রুতি রেখেছেন। তারই আগ্রহে একের পর এক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে সৈয়দপুরে। গত ২ আগস্ট রংপুরের বিভাগীয় সমাবেশে তারই প্রতিধ্বনি লক্ষ্য করা গেছে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে। তিনি অন্তত পাঁচবার সৈয়দপুরের কথা উল্লেখ করেছেন তাঁর বক্তব্যে। এছাড়াও সৈয়দপুর ইপিজেড, বিমানবন্দর আন্তর্জাতিকমানে উন্নীতকরণের কথা উল্লেখ করে রেলওয়ে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সৈয়দপুরে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (ঝঊচত) প্রতিষ্ঠার ঘোষণা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। ইতোমধ্যেই পাইপ লাইনে প্রকৃতিক গ্যাস সংযোগ এসেছে সৈয়দপুরে। এ থেকেই বোঝা যায় সৈয়দপুরের প্রতি বিশেষ দৃষ্ট রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। প্রকৃত অর্থে তিনি সৈয়দপুরকে তাঁর হৃদয়ে জায়গা দিয়েছেন। তবে সরকারের নীতিনির্ধারণী সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সৈয়দপুরকে গুরুত্ব দেওয়া হলেও এখানকার উন্নয়ন-অগ্রগতিতে পার্শ্ববর্তী জনপদের অনেকের গাত্রদাহ শুরু হয়। তাইতো রাজনৈতিক কুটচালে সৈয়দপুর ইপিজেড হয়ে যায় উত্তরা ইপিজেড। জেলার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন চেম্বার অব কমার্স এ- ইন্ডাস্ট্রি প্রতিষ্ঠায় সৈয়দপুরের ব্যবসায়ীরা ছিলেন অগ্রণী ভূমিকায়। পরে চেম্বারের আত্মপ্রকাশ ঘটলে এর কর্যক্রম প্রথমে শুরু হয় সৈয়দপুর থেকে। কিন্তু পরবর্তীতে এখানকার কিছু ব্যবসায়ী নেতার ষড়যন্ত্রের কারণে চেম্বারের কার্যক্রম নীলফামারী জেলা সদরে স্থানান্তরিত হয়। একইভাবে সৈয়দপুরে আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স এ- টেকনোলজি প্রতিষ্ঠার সময় এর কয়েকটি ফেকাল্টি এখান থেকে সড়িয়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র হয়েছে। যদিই সেনাবাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপে তা সম্ভব হয়নি। তারা আরও বলেন, উন্নয়ন ভাবনায় সৈয়দপুরের মানুষের অবস্হা হয়েছে 'চূন খেয়ে মুখ পুড়েছে,তাই দই দেখলেও ভয়' এর মত। অতীতে সৈয়দপুর অনেক 'সম্ভাবনা' বঞ্চিত থেকেছে এখানকারই অপরিণামদর্শী কিছু অর্বাচিনের কারণে। সৈয়দপুরবাসীর বহু প্রতাশিত রেলওয়ে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালর ক্ষেত্রে যেন তেমনটি না হয় সেজন্য সজাগ থাকতে হবে সবাইকে। কারণ এর বিরুদ্ধে ঘরে-বাইরে ষড়যন্ত্র থেমে নেই। তবে দুর্মুখোরা যতই ষড়যন্ত্র করুক না কেন সৈয়দপুর এগিয়ে যাবে প্রধানমন্ত্রীর নেক নজরে। ঘরে-বাইরের কোন ষড়যন্ত্রই অগ্রসর জনপদ সৈয়দপুরের উন্নয়ন-অগ্রগতি বিঘিœত করতে পারবেনা।