মাদারীপুরে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ৬৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে বনিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম তুষার ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল বের করেছেন বিক্ষুব্ধ ব্যবসায়ী ও তাদের স্বজনরা। শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে শহরের পুরান বাজার এলাকায় মিছিলটি বের করেন তারা। ঘন্টাব্যাপী চলা মিছিলটি পুরান বাজার এলাকার কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মুচিবাড়ি এলাকায় এসে তুষার ভূঁইয়ার একটি কুশপুত্তলিকা দাহ করেন।
এসময় মিছিলকারীরা মনিরুল ইসলাম তুষার ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দিতে থাকেন এবং ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো মাদারীপুরের পরিবেশক মেসার্স লুবনা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মনিরুল ইসলাম তুষার ভূঁইয়ার পন্য বিক্রয় বন্ধ রাখা ও সকল গোডাউন সিলগালা করার দাবী জানায়।
এসময় ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা জানায়, তারা দীর্ঘদিন ধরে বনিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম তুষার ভূঁইয়ার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেসার্স লুবনা ট্রেডার্সের সাথে ব্যবসা করে আসছেন। চলতি বছরের বাজেটে সিগারেটের দাম বৃদ্ধি পাবে এমন অজুহাতে আগে থেকেই তুষার ভূঁইয়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ৩৫ জন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৬৮ কোটি টাকা অগ্রিম নিয়ে নেয়। তবে জুন মাসের মধ্যে ব্যবসায়ীদের ওই টাকার সিগারেট বুঝিয়ে দেয়ার কথা বললেও তিনি তা দেননি। এদিকে সিগারেট না দেয়ায় টাকা ফেরত চাইতে গেলে তুষার ভূঁইয়া ব্যবসায়ীদের আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে হুমকি দেন এবং গত ০৩ জুলাই পুরান বাজারের ব্যবসায়ী সাখাওয়াত হাওলাদার ও মনির হাওলাদারের বিরুদ্ধে ২৩ কোটি টাকা পাওনা দাবী করে মাদারীপুর আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। তবে মামলাটি গত ১৭ সেপ্টেম্বর খারিজ করে দেয় আদালত। এদিকে ব্যবসায়ী মনির হাওলাদার, সাখাওয়াত হাওলাদার, রাসেল মোল্লা ও ওবায়দুর রহমান ৩০ কোটি টাকা পাওনা দাবী করে তুষার ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে আদালতে উল্টো আরেকটি মামলা দায়ের করেন। যা এখনো চলমান আছে।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী সাখাওয়াত হোসেন হাওলাদার বলেন, তুষার ভূঁইয়ার কথায় আমি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের থেকে কাছ থেকে ৯ কোটি টাকার মতো এনে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা দেই। কিন্তু সে আমাকে সিগারেট দেয়নি উল্টো সে টাকা আত্মসাৎ করার জন্য আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়। মামলাটি আদালত খারিজ করে দিলে সে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে আমার বিরুদ্ধে আরো মামলা দেয়ার হুমকি দিচ্ছে। সে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে আমার বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়ার পথে অপহরণ করে আমার কাছ থেকে ডকুমেন্টসগুলো নেয়ার চেষ্টা করছে। আমি আমার পাওনা টাকা ফেরতের পাশাপাশি তুষার ভূঁইয়ার বিচারের দাবী জানাই।
আরেক ব্যবসায়ী মনির হাওলাদার বলেন, তুষার ভূঁইয়া ব্যবসায়ীদের টাকা আত্মসাৎ করার জন্য আমাদের দুই ব্যবসায়ীর নামে ২৩ কোটি টাকার মামলা দিয়েছে সেই মামলা খারিজ হয়ে গিয়েছে। আমরা ৪ ব্যবসায়ী তার বিরুদ্ধে ৩০ কোটি টাকা পাওনার দাবীতে মামলা করেছি যা এখনো চলমান রয়েছে। আমরা আমাদের প্রাপ্য টাকা ফেরত চাই।
সুজন মোল্লা নামের আরেক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের ব্যবসায়ী ব্যবসার মূলধন ৬৮ কোটি আত্মসাৎ করার চেষ্টা করছে বনিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম তুষার ভূঁইয়া। টাকার জন্য আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এখন বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা। আমরা আমাদের টাকা ফেরত চাই, তুষার ভূঁইয়ার বিচার চাই।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বনিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম তুষার ভূঁইয়া বলেন, আমি উল্টো ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা পাবো। মামলা এখনো শেষ হয়নি, নিন্ম আদালত যে মামলাটি খারিজ করে দিয়েছে সেই মামলাটি নিয়ে আমি উচ্চ আদালতে যাবো।