বর্ষা মৌসুমে রাজধানীর জলাবদ্ধতা নাগরিক জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে। কেড়ে নিচ্ছে রাস্তাঘাটের আয়ু। জলাবদ্ধতার কারণে দেখা দিচ্ছে যানজট। অপরিকল্পিত নগরায়ণের ধকল সইতে হচ্ছে রাজধানী ঢাকার লাখ লাখ মানুষকে। দিনের পর দিন জলাবদ্ধ হয়ে থাকাও নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ রাজধানীর জলাবদ্ধতা কমাতে নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, সম্প্রসারণ, খাল সংস্কার, নর্দমা ও বক্স কালভার্ট পরিষ্কারের কাজে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা সত্ত্বেও এই বিপুল অর্থ ব্যয় জলাবদ্ধতা হ্রাসে কোনো ভূমিকাই রাখতে পারেনি। নগরায়ণের সব ক্ষেত্রে যে অব্যবস্থাপনার ছাপ রয়েছে তার খেসারত দিতে হচ্ছে নগরবাসীকে। জনগণের করের টাকায় দেশের পৌরসভাগুলোর মতো সিটি করপোরেশন, ওয়াসাসহ বিভিন্ন সংস্থায় এমন মহাপরিকল্পনা করা হয়েছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এগুলো কাগজে-কলমে থেকে যাচ্ছে। এসব মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হওয়ার পরিণতি দেখছে নগরবাসী। বেশি বৃষ্টি হলে ঢাকা শহরের নিচু এলাকায় পানি জমে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পর কোথাও ১২ ঘণ্টা, কোথাও ২৪ ঘণ্টা পানি জমে থাকছে। দেড় কোটি জন-অধ্যুষিত এই শহরে পানিনিষ্কাশনের নূন্যতম ব্যবস্থা এত বছরেও হলো না। নগরবাসীর এ দুর্ভোগ বলে দিচ্ছে, ঢাকা শহরের আসলে কোনো অভিভাবক নেই। নাগরিক সেবায় নিয়োজিত কোনো প্রতিষ্ঠানই দায়িত্ব পালন করছে না। তাই জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করে জবাবদিহির আওতায় আনা জরুরি। এবং জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হলে প্রাথমিক নালাগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে হবে। প্রাথমিক নালার সঙ্গে বড় নালাগুলোর সংযোগ নিরবচ্ছিন্ন থাকতে হবে। খালগুলোর মধ্যে নেটওয়ার্ক (সংযোগ) তৈরি করা ও ভবন তৈরিতে ৪০ শতাংশ ফাঁকা জায়গা রাখা নিশ্চিত করা জরুরি। সরকারি-বেসরকারি পুকুর এবং ঢাকার বর্ধিত এলাকায় উন্মুক্ত এলাকা, জলাধার ও সবুজ এলাকা সংরক্ষণে উদ্যোগ নিতে হবে। বন্যাপ্রবাহ এলাকায় আবাসন প্রকল্প হচ্ছে, সেগুলো বন্ধ করে বন্যাপ্রবাহ এলাকা রক্ষা করতে হবে। রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকার এবং দুই ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ ঘটিয়ে দ্রুত পানি নিষ্কাশন নিশ্চিত করতে হবে। মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কেও দায়িত্ব নিতে হবে। কেননা মহাপরিকল্পনা ছাড়া আধুনিক নগর গড়া সম্ভব নয়।