গত শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের নতুন ছবি ‘পালান’। ১৯৮২ সালে মুক্তি পেয়েছিল মৃণাল সেন পরিচালিত ছবি ‘খারিজ’। চার দশক পর কৌশিকের ছবিতে সেই চরিত্রেই অঞ্জন দত্ত। ছবি মুক্তির পরে ‘পালান’ প্রসঙ্গে সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রি ব্যক্ত করেছেন অঞ্জন দত্ত। ফেসবুকে অঞ্জন দত্ত লিখেছেন, ‘পালান ছবিটি রিলিজ করেছে। অনেক ভালো ভালো রিভিউ বা প্রতিক্রিয়া বেরোচ্ছে। সেগুলো এখানে পোস্ট করার জন্য অনুরোধ আসছে আমার ফিল্মের টিমের কাছ থেকে। সেগুলো এখানে পোস্ট না করে, আপনাদের জানাচ্ছি যে অনেকেই খুব প্রশংসা করছে কৌশিক গাঙ্গুলির ছবিকে। প্রত্যেকে আমাকে আলাদা করে ভূয়সী প্রশংসায় পঞ্চমুখ। সেটা এখানে ফলাও করে বলার প্রয়োজন বোধ করছিনা কারণ আপনারা বুদ্ধিমান এবং নিজের প্রয়োজনে ফিল্ম টা দেখবেন বা দেখবেন না। তিনি বলেন, কিন্তু যে কাজের সঙ্গে আমি যুক্ত সেটার প্রচার করার দায় আমার ওপর থেকেই যায়। একজন প্রফেশনাল হয়ে সেই ব্যাপারে আমি উদাসীন হতে পারিনা। সেটা আমার নিজের ফিল্ম হোক বা কৌশিকের। অঞ্জন দত্ত বলেন, তাই লিখছি, কৌশিক ভালো ফিল্ম বানাবার চেষ্টা করে। বানায়। আপনারা সকলেই জানেন আমিও ভালো অভিনয় করার চেষ্টা করে এসেছি। আপনারা সবাই, সব কিছুই জানেন। এই জানা ভূয়সী যদি আপনারা দায়িত্ব নিয়ে ফিল্মটা প্রথম সপ্তাহে না দেখেন তাহলে সেই “থোর বড়ি খাড়া”। আমাদের ফিল্ম পরের সপ্তাহে ভালো শো টাইমিং পাবেনা। খারাপ কাজের রমরমা বাড়ছে। আরো বাড়বে। আপনারা সবাই বাংলা সিনেমা কে চুটিয়ে গাল দিয়ে যাবেন। আমিও দিয়েছি। আরো দেবো। আমাদের দুই পক্ষের আখেরে কোনো লাভ হবেনা। নিজেদের উঠে আসার পেছনের গল্প বলতে গিয়ে জনপ্রিয় এই গায়ক ও অভিনেতা বলেন, লাভ কখন হয় জানেন? যখন দর্শক ফিল্ম দেখে সোচ্চার গলায় বলে এটা ভালো বা একটা খারাপ। যখন দর্শকদের ভূমিকা দর্শক পালন করে। আমার গান বা কিছু ফিল্ম স্রফে শ্রোতা বা দর্শক দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। কোনো মিডিয়া বা কোম্পানি দেয়নি। গুচ্ছের মিডিয়ার স্তুতির প্রয়োজন পড়েনি সুমনের “তোমাকে চাই” কে যুগান্তকারী করার জন্য। বরং সুমন, নচিকেতা বা আমি শুরুর দিকে গুচ্ছের নিন্দা সহ্য করেছি মিডিয়ার কাছ থেকে। আমাদের গানের রেকর্ডিং কোম্পানি হোর্ডিং দূরে থাক, একটা পোস্টার পর্যন্ত ছাপায়নি। স্রফে বাঙালি শ্রোতা দায়িত্ব নিয়ে আমাদের দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল। সেই ক্ষমতা ছিলো বাঙালি শ্রোতাদের। তিনি বলেন, কোনো দায় ছিলোনা বাঙালি দর্শকদের প্রতি শনিবার ইটিভি তে কৌশিক গাঙ্গুলি বা আমার টেলিফিল্ম নিয়মিত দেখে তা নিয়ে চর্চা করার। কিন্তু বাঙালী দর্শক চ্যানেল ঘুরিয়ে ইটিভিতে সেই টেলিফিল্ম গুলো দেখেছিল বলেই আমার সিনেমা বানাবার পয়সা পেয়েছি। এবং আমরা দুজনেই প্রতি নিয়ত কুচ্ছিত ফিল্ম বানাইনি। বাঙালি দর্শক নিজেরা আমাদের ভালো কাজ বেছে নিয়েছিলেন। খারাপ গুলো বর্জন করে, ভুলে গিয়ে আবার সুযোগ দিয়েছেন আমাদের আবার ভালো কিছু করতে। সমালোচক নয়। মিডিয়া নয়। দর্শক। বাঙালি দর্শক। তিনি আরো বলেন, খারাপ লাগলে প্রকাশ্যে বলতে হবে। ভালো লাগলেও অন্য দের দায়িত্ব নিয়ে হলে পাঠাতে হবে। সেই দায় আপনাদের। আমি এবং কৌশিক “বাংলা ছবির পাশে দাঁড়ান” মার্কা ন্যাকা, বোকা প্রচারে বিশ্বাস করিনা। আমি জানি আমার সহকর্মী প্রতিম দাশগুপ্ত, মৈনাক ভৌমিক, অতনু ঘোষ, সুব্রত সেন কিংবা আরো অনেকে এই “ন্যাকামি” তে বিশ্বাস করে না। আমরা বিশ্বাস করি বুদ্ধিমান দর্শক জানে “ভালো সিনেমার পাশে দাঁড়াতে হবে”। সেটা বাংলা হোক বা জাপানি ভাষায়। আমরা কেউই পারিনা সব সময় সত্যি ভালো কাজ করতে। পারিনা। আমরা কেউ সত্যজিৎ রায় বা মৃণাল সেনের মতো ট্যালেন্টেড নই। অঞ্জন দত্ত আরো বলেন, আমরা পপুলিস্ট ফিল্মমেকার যারা এমন সিনেমায় বিশ্বাস করে যা হল থেকে খরচ তুলে আনতে পারে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে সিনেমার বাজার মূর্খতা, মেলোড্রামা এবং খারাপ পারফরম্যান্সে ভরে গেছে। একজন বাঙালি হিসেবে আমি ব্যক্তিগতভাবে এটা নিয়ে লজ্জা বোধ করি। তিনি বলেন, তবুও, এমন মাঝে মাঝে আমরা আমাদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করি। আমরা চেষ্টা করি। যদিও অনেক কিছুই আমাদের বিরুদ্ধে যায়। অনেক অসুবিধা থাকে। তবুও চেষ্টা করি। তবে শেষটা আপনাদের ওপরেই নির্ভর করে কতটুকু আপনারা আমাদের দেবেন। হল থেকে বেরিয়ে, কোনো এক ছাতার পাবলিসিস্ট এর ক্যামেরার সামনে, দায় সারা ভাবে “ভালো লেগেছে” বলার কোনো প্রয়োজন শিক্ষিত বাঙালি কদিন দেয়নি। দেয়না। দেবেও না। এসব বোকা প্রচার উপেক্ষা করে, নিজের মত প্রকাশ করুন। ফোন আছে। গলা আছে। বিশ্বাস আছে। আধুনিক মানুষের বোধ আছে। সিনেমা প্রসঙ্গে শেষ লাইনে বলেন, ধন্যবাদ। সিনেমাটি দেখুন এবং মন থেকে কথা বলুন। আমাদের জানান যদি ভুল থাকে কোনো। কোথায় ভালো হয়েছে সেটাও বলুন। আপনাদের আওয়াজ পরিবর্তন আনতে পারে।