গাজীপুরের কালীগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পরিচালনা কমিটির আহবায়ক, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে নিহত সাবেক এমপি শহীদ ময়েজউদ্দিন আহমেদের ৩৯তম শাহাদাৎ বার্ষিকী বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে পালিত হয়। বুধবার সকাল ৯টায় শহীদ ময়েজ উদ্দিন আহমেদের কন্যা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, এমপি, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক, শহীদ ময়েজ উদ্দিন আহমেদের ভাই আলহাজ্ব এস এম নজরুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আশরাফী মেহেদী হাসান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আবদুল মতিন সরকার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল গণী ভূইয়া, সাধারণ সম্পাদক এইচ এম আবু বকর চৌধুরী, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন পলাশ, কালীগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র মো. রবীন হোসেন, মোক্তারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলমগীর হোসেন, গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোতাহার হোসেন, তাসলিমা রহমান লাভলীসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ বনানী কবরস্থানে শহীদের কবরে শ্রদ্বাঞ্জলী অর্পণ ও শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
পরে ১১টায় কালীগঞ্জ উপজেলা শহীদ ময়েজ উদ্দিন আহমেদের স্মৃতিস্তম্বে শ্রদ্বাঞ্জলী অর্পণ শেষে ১২টায় উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে উপজেলা কার্যালয়, ২টায় কালীগঞ্জ পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের উদ্যোগে ঘোড়াশাল ফেরীঘাট ও উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের নোয়াপাড়া শহীদ ময়েজউদ্দিন আহমেদ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে মিলাদ মাহফিলে মেহের আফরোজ চুমকি, এমপি, অংশগ্রহণ করেন। এ সময় গরীব দুঃখী মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়।
এ সময় মেহের আফরোজ চুমকি, এমপি, বলেন, ১৯৮৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর গণতন্ত্র তথা ভাত ও ভোটের অধিকার রক্ষায় স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে গাজীপুরের কালীগঞ্জে নেতৃত্ব দেয়ার সময় কতিপয় সন্ত্রাসী তাঁর ওপর হামলা চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি শাহাদাৎ বরণ করেন। শহীদ ময়েজ উদ্দিন আহমেদ ১৯৩০ সালের ১৭ মার্চ গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের বড়হরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। একজন বিচক্ষণ আইনজীবী ও রাজনীতিক হিসেবে অত্যন্ত সাহসীকতার সঙ্গে তিনি এ ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দীর্ঘদিন বৃহত্তর ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, পরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ এবং ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে গাজীপুরের কালীগঞ্জ নির্বাচনী এলাকা থেকে যথাক্রমে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য এবং জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৭ সাল থেকে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ রেডক্রস (বর্তমানে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট) সোসাইটির নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। একাধারে বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতির (এফপিএবি) মহা-সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। শহীদ ময়েজ উদ্দিন আহমেদের রক্তে সিঁড়ি বেয়ে ধাপে ধাপে গড়ে উঠা প্রবল গণআন্দোলনে অবশেষে সামরিক শাসক ও শাসনের পতন ঘটে। গণতন্ত্রের জয় হয়। শহীদ ময়েজ উদ্দিন একজন দেশ প্রেমিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, প্রজ্ঞাবান রাজনীতিক, বিশিষ্ট সমাজসেবী ও সাধারণ জন কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ মানুষ হিসেবে চির স্মরণীয় হয়ে আছেন। মুক্তি যুদ্ধের সংগঠক হিসেবে গৌরবময় ভূমিকা পালন করায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তাঁকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করেছেন।