শত কষ্টের মাঝে লেখাপড়া শিখে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন বাস্তবায়নে মাধ্যমিক পর্যায়ে অন্যের খেতে কাজ করে ও অনার্স পর্যায়ে প্রাইভেট পড়িয়ে চালিয়ে নিজের খোপড়া। শত বাধার সামনে এলেও থেমে যাননি তার লেখাপড়া। অবশেষে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের (বিজেএসসি) অধীন সহকারী জজ নিয়োগের ষোড়শ বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের (বিজেএস) চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। মোট ১০৪ জন প্রার্থী সহকারী জজ পদে সাময়িকভাবে উত্তীর্ণ ও মনোনীত হয়েছেন। তন্মধ্যে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরপুর দুর্গাপুর ইউনিয়নের ভাটপাড়া গ্রামের সুকেশ কুমার দাস ও অঞ্জনা রানী দাস দম্পতির ছোট ছেলে অমল কুমার দাস ৪৫ তম মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। দুই ভাই এক বোন ও মা-বাবাকে নিয়ে অমলদের পরিবার। পরিবারের কর্তা অমলের বাবা সুকেশ কুমার দাস কৃষিকাজ ও বাঁশের তৈরি নানা জিনিসপত্র তৈরি করে অনেক কষ্টের সংসার চালান। অভাবের তাড়নায় বড় ছেলে শ্যামল কুমারকে বাবা সুকেশ কুমার কালীগঞ্জ বাজারে স্টিল ফার্নিচারের মিস্ত্রির কাজ করতে পাঠান। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী অমল কুমার দাসের লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ ছিল অনেক বেশি। কালীগঞ্জ উপজেলার বেজপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০০৯ সালে মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় ৪.৬৯ পয়েন্ট পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে অমল ভর্তি হন শহীদ নুর আলী কলেজে। সফলতার সাথে তিনি ২০১১ সালে মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়ে উচ্চমাধ্যমিকপাস করে জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয় আইন অনুষদে ভর্তি হওয়ার সুযোগ লাভ করেন। এ সময় বাড়ি থেকে ঢাকায় যেয়ে লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে নেওয়া তার পরিবারের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব ছিল। বাড়ির গাছের তেঁতুল বিক্রি করা টাকা, গরুর দুধ বিক্রি করা টাকা, বোনের পালা মুরগির ডিম বিক্রির টাকা এবং ঢাকায় নিজের টিউশনি করানো টাকা দিয়েই চলেছে তার পুরো অনার্স পড়ার সময় টা।
সফলতার সাথে ২০১৭ সালে ৩.১৯(আউট অফ ফোর) পয়েন্ট পেয়ে অনার্স পাস করেন তিনি। অমল কুমার দাস নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে চেষ্টা করেন বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস এর সহকারী জজ পদে চাকরির জন্য। পরপর তিনবার পরীক্ষা দিয়ে চুড়ান্ত ভাবে মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হতে না পারলেও এবার তিনি সফল। প্রিলি, রিটেন ও ভাইভা পরীক্ষা দিয়ে ষোড়শ বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস এর ৪৫ তম মেধা তালিকায় নিজের স্থান অর্জন করে নিয়েছেন তিনি। অমল কুমার দাসের পিতা সুকেশ কুমার দাস বলেন, আমার ছেলের সাফল্যে আমি অত্যন্ত খুশি। ওর লেখাপড়ার জন্য আমরা অনেক কষ্ট করেছি। লেখাপড়ার প্রতি ওরও আগ্রহ ছিল খুব, যে কারণে আজ সে সফল।