‘একনা ঘরত থাকং তাও এবার তিস্তা নদীর ভাঙনত ভাঙি যাচ্ছে। মাটি-ঘাটি কিছু নাই বাহে, এবার কোনঠে গিয়ে থাকিম তাও জানং না।’-থর থর করে কেঁেপে কেঁপে কথাগুলো বলছিলেন কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের খিতাব খাঁ নামাপাড়া গ্রামের শতবর্ষী নারী মাইয়ো ওরফে সমস্ত বেওয়া। স্বামী আবদুস ছাত্তার বেঁেচ থাকাকালিন সময়ে দুই বার ঘরবাড়ি তিস্তা নদীর করাল গ্রাসে বিলীন হয়ে যায় বলে তিনি জানান। ভিটে মাটি যা ছিল তিস্তা নদীতে সব চলে গেছে। সবশেষ নামাপাড়ায় একটা ঘর তুলে জিবন যাপন করছিলেন তিনি। সেটাও আজ বিলীন হতে চলছে। তিস্তা নদীর কিনারে একটা মাটির চাপার উপর দাঁড়িয়ে আছে মাইয়োর এ ঘরটি। শুক্রবার(২৯সেপ্টেম্বর) দুপুরে ভাঙন কবলিত এলাকায় পৌচ্ছিলে শতবর্ষী মাইয়ো ওরফে সমস্ত বেওয়া একাই বিড়বিড় করে কথা গুলো বলছিলেন। শুধু মাইয়ো নয়, এমন শত মাইয়োর ঘর আজ নদীর কিনারায় দাঁড়িয়ে। মাইয়োর বাড়ির পাশে হারুন, বানু মামুদ, রশিদসহ প্রায় শতাধিক বাড়ি নদীর তীরে(কিনারায়) দাঁড়িয়ে আছে। সবাই আতঙ্কিত হয়ে আছে কখন তাদের ঠাঁই টুকু নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। অনেকে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে ঘর বাড়ী অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার। আবার অনেকে দুঃচিন্তায় ভূগছেন কোথায় গিয়ে উঠবেন। অনেকের সাথে কথা বলেও সুখবর পাইনি কেউ কেউ। এরইমধ্যে উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের খিতাবখাঁ, নামাভরট, সরিষাবাড়ী,গতিয়াসাম, বগুড়াপাড়া, বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের রামহরি, পাড়ামৌলা, চর তৈয়ব খাঁয় প্রবল ভাঙন দেখা দিয়েছে। গতিয়াশাম এলাকার বাসিন্দা কৃষক আবদুল মোমেন বলেন, আমন ধানের ফসলি জমি নদীতে চলে গেল। একদিকে ঘরবাড়ি বিলীন অন্যদিকে আবাদি জমি ভেঙে যাওয়ায় নদীর পাদের মানুষের দুঃখের শেষ নাই। নামাপাড়ার নদীর পাড়ের বাসিন্দা হারুন (৬০) বলেন, আমারও একনা ঘর নদীর উপর আছে। যেকোন মুহুর্তে ভেঙে যেতে পারে। রাতে ঘুমাতে পারি না। হঠাৎ করে নদীর তর্জন-গর্জন শুরু হয়। ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হিরা বলেন, নদীর পাড়ের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা, ঘুচবার নয়। প্রতিনিয়ত ভাঙছে নদী, সঠিকভাবে ঠাঁই হয় না কারো। অনেকে বাপ দাদার ভিটে নদীতে চলে গেলেও তবু নদীর পাড় ছাড়তে চায় না। ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আঃ কুদ্দুস প্রামানিক বলেন, সকাল না হতেই শুনতে হয় নদী ভাঙনের খবর। নদীর পাড়ের মানুষ খুব কষ্টে আছে, সেই সাথে আমরাও। সরকারের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত নদী যেভাবে ভাঙতে শুরু করেছে একমাসে প্রায় কোয়ার্টার কিলোমিটার পূর্বদিকে ঢুকে পড়েছে। পাশেই দুটি প্রাইমারি স্কুল। ভেঙ্গে গেলে ছাত্র-ছাত্রীরা কিভাবে পড়ালেখা করবে। রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাবেরী রায় বলেন, নদী ভাঙনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিশেষ কোন কাজ নেই। বিশেষ বিশেষ জায়গায় বালুর বস্তা ফেলে ভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থা করছে। সরকারের মহা পরিকল্পনা শুরু হলে নদী ভাঙন কমে যাবে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, কয়েকদিন ধরে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। বুড়িরহাট বাঁধসহ বিশেষ বিশেষ জায়গায় বালুর বস্তা দিয়ে ভাঙন থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।