ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া (৯০) আর নেই। গত শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ঢাকার এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন (ইন্নাল্লিাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ওঁর ছেলে মাইনুল হাসান তুষার ও উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি (সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে জটিল কিডনি রোগে ভুগছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিয়মিতই ওঁর শাররীক অবস্থা ও চিকিৎসার খোঁজখবর রেখেছেন। মৃত্যুকালে তিনি দুই মেয়ে ও এক ছেলে রেখে গেছেন। ওঁর বড় মেয়ে ছালমা সুলতানা পাপড়ি কানাডা প্রবাসী। পিতার অসুস্থতার খবরে এক মাস আগেই দেশে এসে পাশে ছিলেন। আর ছোট মেয়ে ছামিয়া সুলতানা ঢাকায় আছেন। প্রথম জানাযা আজ সকাল ১১টায় সংসদ ভবনের উত্তর প্লাজায়, দ্বিতীয় জানাযা বাদ আছর নিজ উপজেলা সরাইলের অন্নদা সরকারী উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠ, তৃতীয় জানাযা বাদ মাগরিব অরূয়াইল আবদুস সাত্তার ডিগ্রী কলেজ মাঠ, চতুর্থ ও শেষ জানাযা বাদ এশা নিজ গ্রাম পরমানন্দপুর গ্রামে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা জানিয়েছেন পরিবার। এরপর পারিবারিক কবরস্থানে পিতা প্রয়াত হাজী মুকসুদ আলীর কবরের পাশেই উনাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হবে।
পারিবারিক সূত্র জানায়, এই বছরের গত ১ ফেব্রƒয়ারির জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করেছিলেন আবদুস সাত্তার। এই জয়ে এমপি পদে জয়লাভের ডাবল হেট্রিক করেছিলেন তিনি। তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে পরাজয় বরণ করেননি। কিন্তু নানা নাটকিয়তা ও ইতিহাস রয়েছে। কয়েকটি কারণকে সামনে এনে একসময় বিএনপি’র সাথে আবদুস সাত্তার ৪৩ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করতে বাধ্য হন। দলীয় সিদ্ধান্তে তিনি গত বছরের ১১ ডিসেম্বর সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। ২৯ ডিসেম্বর তিনি দল থেকে পদত্যাগ করেন। ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র ক্রয় করেন। ওই রাতেই আবদুস সাত্তারকে বিএনপি থেকে বহিস্কার করা হয়। বিষয়টি নিয়ে সর্বত্র আলোচনা সমালোচনার ঝড় ওঠে। গত ১ ফেব্রƒয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে স্বতন্ত্র নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ৬ষ্ট বারের মত জয়লাভ করেন। এর আগে আবদুস সাত্তার কুমিল্লা জেলা বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা সহসভাপতি ছিলেন। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় থাকালে ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন কুমিল্লা-১ আসনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করেন। তখন থেকেই সাত্তার নিজের এলাকার মানুষের সেবায় নিয়োজিত হন। পরে (১৯৯০) পঞ্চম, (১৯৯৬, ১৫ ফেব্রƒয়ারি) ৬ষ্ট, ও (১৯৯৬) সপ্তম সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করেন। ২০০১ সালে জোটের কারণে মনোনয়ন না পেলেও টেকনোক্রেট কোটায় সাত্তারকে ভূমি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। মন্ত্রী ছিলেন ২০০৬ সাল পর্যন্ত। ২০০১ সালের ১০ অক্টোবর থেকে ২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল পর্যন্ত আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ছিলেন সাত্তার। বিএনপি’র সেই সময়ে আবদুস সাত্তার বিভিন্ন মেয়াদে ভূমি, মৎস্য বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। ভূমি প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে তাঁর বিরূদ্ধে নানা অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ ওঠেছিল। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর তিনি ছিলেন একেবারেই নির্বিকার। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি জয়লাভ করেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবদুস সাত্তার কখনো পরাজিত হননি। সাত্তার দীর্ঘ ১৮ বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপি’র সভাপতি ছিলেন। সাংগঠনিক ভাবে বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টার দায়িত্বও পালন করেছেন। জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সম্পাদক ছিলেন। শিক্ষাগত যোগ্যতা, পারিবারিক ঐতিহ্য ও রাজনৈতিক পরিপক্কতায় এগিয়ে থাকা আবদুস সাত্তার এলাকায় সকলের কাছেই জনপ্রিয় ছিলেন। তার বিরূদ্ধে কোন মামলাও নেই। অভিজ্ঞ এই রাজনীতিবিদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর, আওয়ামী লীগ নেতা শহিদ বুদ্ধিজীবীর সন্তান অ্যাডভোকেট সৈয়দ তানবির হোসেন কাউসার, সরাইল সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ মৃধা আহমাদুল কামাল, সরাইল মহিলা কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিষদের সভাপতি মো. মাহফুজ আলী, মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ বদর উদ্দিন, সরাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. আইয়ুব খান ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মাহবুব খান।