জামালপুর জেলার ইসলামপুরের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী গুঠাইল বাজারে প্রতিহাটে সোনালী আঁশ (পাট) কেনাবেচা হয়ে থাকে প্রায় ৩ কোটি টাকা। গুঠাইল বাজার নৌবন্দর এবং বাইরোড় থাকায় দূরদূরান্ত চরাঞ্চল থেকে নৌকা যোগে অনেকেই বাইরোড়ে পাট নিয়ে আসে গুঠাইল হাটে। বর্তমানে পাটের ভরা মৌসুম চলছে। ইতোমধ্যে জমে উঠেছে পাটের হাট। নদীর ওপাড় থেকে সারি সারি নৌযানে কৃষকরা নিয়ে আসেন তাদের সোনালী ফসল পাট। প্রতি সপ্তাহে শুক্র ও সোমবার হাট বসে। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন পাইকাররা পাট কিনে কারখানা মালিকদের কাছে বিক্রি করে থাকেন। হাটের ইজারাদার জানান,প্রতি সপ্তাহে হাটের দিন প্রায় ১৩ হাজার মণ পাট কেনাবেচা হয়ে থাকে। যার বাজার মূল্য প্রায় তিন কোটি টাকার মতো। হাট ইজারাদার সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিম জামালপুরের বিখ্যাত হাট গুঠাইল বাজার সপ্তাহে দু-দিন সোমবার এবং শুক্রবারে হাট বসে থাকে। সূর্য উঠার সাথে সাথেই উপজেলার নদীর ওপাড়ের ৬টি ইউনিয়ন ছাড়াও পার্শ্ববর্তী জেলার গাইবান্ধার ফুলছড়ি, বগুড়ার সাকাটা দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার সানন্দবাড়ী, কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার প্রত্যান্ত অঞ্চলের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পাট বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন এ হাটে। গুঠাইল হাটের যমুনা নদী পথে সরাসরি নৌ চলাচল সচল থাকায় চরাঞ্চলের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত এ হাটে আনার কারণে জামালপুরের সর্ববৃহৎ পাটের হাট হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে।
গত শুক্রবার সকালে গুঠাইল পাট হাট ইজারাদার আরিফ মাহমুদ বলেন, ঐতিহ্যবাহী এ হাটে জামালপুর জেলা ছাড়াও আশপাশের জেলার বিভিন্ন পাইকাররা আসেন পাট কিনতে। গত সোমবার হাটে সাড়ে ৪ হাজার মণ পাট বেচাকেনা হয়েছে। তবে শুক্রবারের বড় হাট। এ হাটে পাট বিক্রি হয়েছে প্রায় সাড়ে ৮হাজার মণ। গড় হিসাবে যার বাজার মূল্য প্রায় তিন কোটি টাকার মতো।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ইসলামপুরে ১০ হাজার ৫শ ৪০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করা হয়েছে। তাতে উৎপাদন হয়ে ছিল ১৭ হাজার ৯শ ১৮ মেট্রিক টন। সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে আবাদ হয়েছে ৮ হাজার ৭শ ৫০ হেক্টর জমিতে। এ থেকে উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার ৭শ ৫০ মেট্রিক টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১ হাজার ৭ শ ৯০ হেক্টর কম জমিতে পাটের আবাদ করা হয়েছে। গত অর্থ বৎসরের তোলনায় প্রায় ২ হাজার ১শ ৬৮ মেট্রিক টন পাটের উৎপাদন কম হয়েছে। এ বৎসর পাটের দাম প্রতি মণ ১৮শ থেকে ২হাজার ৩শ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সূর্য উঠার সাথে সাথেই চাষীরা নৌকা যোগে অনেকেই স্থলপথে তাদের উৎপাদিত পাট নিয়ে গুঠাইল বাজারে এসেছেন বিক্রী করতে। বিভিন্ন জেলা থেকে আগত পাইকার ব্যবসায়ীরা এসেছেন। দরদাম করে পছন্দের পাট কিনে ট্রাক, ভটভটি গাড়ি দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। ফুলছড়ি উপজেলার পাট চাষী ভিক্কু মিয়া বলেন, গত বছর পাটের চাহিদা বেশ ভালো ছিল। ভাল দাম পেয়েছি। কিন্তু এ বছর পাটের চাহিদা কম দামও নেই। একবিঘা জমিতে পাট চাষ করতে যে পরিমাণ খরচ হয়েছে তাতে বর্তমান বাজারে পাট বিক্রি করলে খরচ তোলাই অসম্ভব হয়ে যাবে। এহন (এখন) কি আর করমু ট্যাহার (টাকা) দরকার তাই কম দামে পাট বেঁচে দিয়েছি। গুঠাইল বাজারে অন্তত ২৫ বছর ধরে পাটের ব্যবসা করছেন দেলোয়ার হোসেন (৫০)। তিনি বলেন, আমি নিজেও একজন পাটচাষি। এবারও ছয় বিঘা জমিতে পাট চাষ করছিলাম। একই সাথে পাটের ব্যবসা করি। অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি, পাট কেনাবেচা যদি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়, তাহলে কৃষক দাম পাবেন। লাভবান হবেন। বেশ কয়েক বছর ধরে কৃষক পাটের ভালো দাম পাইছেন। কিন্তু এ বছর কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।
মন্নিয়াচর এলাকার কৃষক সাহেব আলী বলেন, তিনি সাড়ে তিন বিঘা জমিতে পাট চাষ করছেন। পাট চাষে যে পরিশ্রম করি সেই টাকা পাই না। এ বৎসর অনাবৃষ্টি পানি সংটের কারণে পাট জাগ দেওয়ায় জন্য দূরে জলাশয়ে নিতে অতিরিক্ত খরচ হয়েছে। অথচ এ বৎসর পাটের দাম তোলনা মুলক ভাবে অনেক কম,তাই কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। শেরপুরের পাট ব্যবসায়ী আলম মিয়া জানান, মিল মালিকরা এখনো পাট কিনছেন না সে জন্যই পাটের দাম কম।
এ বিষয়ে উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান আকন্দ বলেন, পাট উৎপাদনের পরপরই সব কৃষক একসঙ্গে পাট বাজারে নিয়ে গেলে পাইকাররা তাদের ইচ্ছেমতো মূল্য দেন। তাই পাট চাষীরা যদি কিছুদিন ঘরে রেখে বিক্রি করেন, সে ক্ষেত্রে দাম ভালো পাওয়া যায়। তিনি আরও বলেন বাজারে পাটের দাম কম হওয়ায় বর্তমানে পাট উৎপাদনকারি কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।