দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকারকে টাকা ধার দিতে নতুন টাকা ছাড়ছে। যেটি পক্ষান্তরে মূল্যস্ফীতিকেই আরও বাড়িয়ে তুলবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া মানেই হচ্ছে নতুন করে ছাপানো টাকা বাজারে ছাড়া হচ্ছে। প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জাতীয় বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে প্রায় ২ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা। এর বড় অংশই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে মেটানোর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ব্যাংকিং খাতে যে অবস্থা চলছে, তাতে এখান থেকে টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই। সেক্ষেত্রে একমাত্র পথ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা ছাপানো। আর এ পরিস্থিতিতে টাকা ছাপালে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা আরও নাজুক হবে। ব্যবসাবাণিজ্যের খরচ যেভাবে বাড়ছে, তাতে সত্যিকারের ব্যবসায়ীদের টিকে থাকা অসম্ভব। এ অবস্থায় গার্মেন্ট শ্রমিকদের মজুরি অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানো হলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবে না। এ ছাড়া জবাবদিহি ছাড়া সুষ্ঠুভাবে বাজেট বাস্তবায়ন কঠিন। এদিকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ইতিমধ্যেই ব্যর্থতার অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিরুদ্ধে। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী অনেক দেশে গত এক বছরে মূল্যস্ফীতি কমে আসলেও বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি বেড়েই চলেছে। এমনকি অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়া শ্রীলঙ্কাও খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমাতে পেরেছে, যা বাংলাদেশ পারেনি। এখন আবার নতুন করে টাকা ছাপানো হলে, বর্তমানে অর্থনীতিতে যে সংকট চলছে, তা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। এ অবস্থা তৈরি হয়েছে মূলত টাকা পাঁচার, ব্যাংকের অর্থ লুটপাট ও দুর্নীতিসহ নানা কারণে ব্যাংক খাত দুর্বল হয়ে পড়ায়। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা ব্যাংক থেকে এভাবে ঋণ নেয়াটা কমাতে হলে সরকারকে রাজস্ব খরচ অন্তত এক লাখ কোটি টাকা কমিয়ে আনতে হবে। কিন্তু নির্বাচনের বছরে সেটিই বা কতোটা সম্ভব হবে, তাও হবে দেখার বিষয়। বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে জানা গেছে, মূল্যস্ফীতির দিক দিয়ে দেশ কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। প্রায় দুই বছর ধরে জিনিসপত্রের দামে সাধারণ মানুষ অনেকটা দিশাহারা। বিশ্ববাজারে জিনিসপত্রের দাম কিছুটা কমে এলেও ডলারের বাড়তি দামের কারণে এর সুফল পাঁচ্ছে না দেশের ভোক্তারা। সরকার যখন অন্য উৎস থেকে টাকা ধার না করে সরাসরি টাকা ছাপিয়ে খরচ মেটায়, তখন মূল্যস্ফীতিতে এর প্রভাব পড়ে। অতি মূল্যস্ফীতির এ সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের দফায় দফায় টাকা নিয়ে খরচ করার ফলে মূল্যস্ফীতির লাগাম টানা আরও কঠিন হবে। অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতির গুরুতর চাপ তৈরির হুমকি কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সতর্কভাবে এসব আর্থিক ব্যবস্থাকে মনিটরিং করতে হবে।