টাকার মান নির্ধারণ হয় টাকার ক্রয়ক্ষমতা দিয়ে। দ্রব্যের দামের সাথে টাকার মানের সম্পর্ক বিপরীত। দ্রব্যের দাম কমলে টাকার মান বাড়ে, বিপরীত-ক্রমে দ্রব্যের দাম বাড়লে টাকার মান কমে। যেকোনো রাষ্ট্রের অর্থের আন্তর্জাতিক মূল্যের নির্ধারিত হয় তার যোগান এবং চাহিদার ওপরে নির্ভর করে। টাকার মান কমে যাওয়ায় ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমছে। বাড়ছে পণ্যের দাম। সব মিলে অর্থনীতিতে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। আর এটা দিন দিন বেড়ে জীবনের ওপর নানা রকমভাবে প্রভাব ফেলছে। মূল্যস্ফীতি জানা গেলে বোঝা যায় যে কোন নির্দিষ্ট সেবা বা পণ্যের জন্য আগের তুলনায় একজন মানুষকে কত টাকা বেশি খরচ করতে হচ্ছে, এবং তা তার জীবনযাত্রার ওপর কতটা প্রভাব ফেলছে। মূল্যস্ফীতি হলে খাদ্যদ্রব্য, পোশাক, বাড়িভাড়া, নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিসের দাম বেড়ে যায়। মানুষকে এসব সেবা বা পণ্য কিনতে আগের চেয়ে বেশি টাকা খরচ করতে হয়। আয়ের পরিবর্তন না হলে তখন মানুষ এগুলো প্রয়োজনের চেয়ে কম কিনতে বাধ্য হন। তাদের সঞ্চয় কমে যায় এবং অন্যান্য খাতের খরচ কমিয়ে ফেলতে হয়। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে সীমিত এবং নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর ওপর। কারণ জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে অনেক দ্রব্য তাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। মূল্যস্ফীতি অনেক সময় একেকজনের ওপর একেকভাবে প্রভাব ফেলে। একটি দেশের বাজারে পণ্যের মজুদ এবং মুদ্রার পরিমাণের মধ্যে ভারসাম্য থাকতে হয়। যদি পণ্যের তুলনায় মুদ্রার সরবরাহ অনেক বেড়ে যায় অর্থাৎ দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক অতিরিক্ত মাত্রায় টাকা ছাপায় তখনই মুদ্রাস্ফীতি ঘটে। ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য নির্ধারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপ কমানোর পর থেকে প্রতিদিনই কমছে টাকার মান, বাড়ছে ডলারের দাম। ডলারের দাম বৃদ্ধি মানেই নিজস্ব মুদ্রার দাম কমে যাওয়া। ডলারের দাম বেড়ে গেলে বেশি খরচে অপরিশোধিত তেল আমদানি করতে হয়। তেলের দাম বাড়লে শাকসবজি, ভোজ্য তেল ও খাদ্যশস্যসহ প্রয়োজনীয় পণ্যের পরিবহন খরচও বেড়ে যায়। ফলে, সেসব পণ্যের দামও বাড়ে। এটি সাধারণ মানুষের ওপর প্রভাব ফেলছে। সরকার কর বাড়িয়ে দিলে কিংবা নতুন নতুন কর আরোপ করলে মানুষের ব্যয়যোগ্য আয়ের পরিমাণ কমে যাবে। ফলে বাজারে আসা অতিরিক্ত মুদ্রা বেরিয়ে যাবে। এ ছাড়া সরকার বিভিন্ন অনুৎপাদনশীল খাতে খরচ কমিয়ে অন্যদিকে বাজারে চাহিদা মতো পণ্যের সরবরাহ বাড়াতে উৎপাদনশীল খাতে ভর্তুকি বাড়িয়ে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। মুদ্রাস্ফীতির সময় বাজারে দ্রব্যের যোগান বাড়াতে আমদানির পরিমাণ বাড়াতে হবে। এতে মুদ্রাস্ফীতির চাপ কমতে পারে। এজন্য মুদ্রাস্ফীতির সময় সরকারকে আমদানি শুল্ক কমাতে হবে।