গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে ইউএনও’সহ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপর হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। মোক্তারপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেনকে প্রধান করে দুই ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যসহ দলীয় ১৫ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞতা আরো ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। শনিবার দিবাগত রাতে আনসার সদস্য এনায়েতুল্লাহ বাদী হয়ে ২(১০)২৩ নং মামলাটি দায়ের করেন। উপজেলা প্রশাসন, থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কিছুদিন যাবৎ যাবত উপজেলার প্রধান গেইটের নির্মাণ কাজ চলমান থাকায় ওই গেইট দিয়ে গাড়ী চলাচল বন্ধ রয়েছে। ৩০ সেপ্টেম্বর জাতীয় কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষে কালীগঞ্জ উপজেলা শিল্পকলা একাডেমীর সামনে অনুষ্ঠান পালিত হচ্ছিল। সে সময় মোক্তারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন, আকরাম হোসেন ও জাকিরের নেতৃত্বে প্রায় ৮০/৯০টি অটোরিকশা নিয়ে প্রায় এক হাজারের অধিক নেতা-কর্মী দুপুরে উপজেলার ভিতরের ছোট গেইট দিয়ে অনুমোদন ব্যতীত প্রবেশ করে। এতে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছোট ছোট শিশুরা ভীতসন্তপ্ত হয়ে পড়ে। সে সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অটোরিকশাসহ নেতাকর্মীদের উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরের বাহিরে যেতে বলার জন্য (বাদীকে) নির্দেশ দেন। সে সময় বাদীর সাথে আনসার সদস্য আকরাম হোসেন, রেজানুল ইসলাম, সহকারী প্রোগ্রামার ব্যানবেইস উজ্জ্বল কুমার শীল, অফিস স্টাফ নাহার আক্তার, বিআরডিবি হিসাব রক্ষক লিটন আহমেদ এবং অফিস স্টাফ আনোয়ার হোসেনসহ উপজেলার কয়েকজন সরকারী কর্মচারীদের নিয়ে মোক্তারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেনসহ অন্যান্য নেতা-কর্মীদের অটোরিকশা নিয়ে উপজেলা কম্পাউন্ডের বাহিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করি। কিন্তু তারা আমাদের কথায় কর্ণপাত না করায় বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করা হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজে উপস্থিত হয়ে ছোট ছোট শিশুরা ভীতসন্তপ্ত হয়ে পড়েছে জানিয়ে মোক্তারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেনসহ তার সঙ্গে থাকা নেতা-কর্মীদের অটোরিকশা নিয়ে উপজেলার ভেতর থেকে বাহিরে গিয়ে তাদের কর্মসূচি পালনের জন্য বললে চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তুলে উস্কানিমূলক কথা বলতে থাকে। সে সময় তার সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীরা উচ্চৈঃস্বরে হট্টগোল শুরু করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে ১০/১২ জন মিলে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ঘিরে ফেলে। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে তারা আক্রমণ করতে এগিয়ে আসলে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে আমিসহ উপস্থিত আনসার সদস্য এবং সরকারী কর্মকর্তারা এর প্রতিরোধ করতে গেলে তারা আনসার সদস্য আকরামকে আঘাত করে। সে সময় তারা উপস্থিত সরকারি কর্মচারী ও আনসার সদস্যদের কিল, ঘুষি, লাথি মেরে জখম করে। তখন পরিস্থিতি বেগতি দেখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিরাপত্তায় তাকে উপজেলা ভবনের ২য় তলায় নিয়ে যায়। সে সময় আসামি জাকির ও আক্রামের উসকানি মূলক কথা-বার্তায় অন্য আসামিরা উত্তেজিত হয়ে উপজেলা ভবন লক্ষ্য করে ইট-পাটকেলের টুকরা নিক্ষেপ করে ৮/১০টি জানালার গ্লাস ভেঙ্গে ফেলে। একপর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোবাইল ফোনে কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জকে জানালে থানা থেকে অফিসার ইনচার্জের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরে আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়। শনিবার দিবাগত রাতে আনসার সদস্য এনায়েতুল্লাহ বাদী হয়ে মোক্তারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন (৪৮), ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য মো. জাকির হোসেন (৪৭), রামচন্দ্রপুর এলাকার আকরাম হোসেন (৪৮), উপজেলা যুবলীগের সদস্য সিদ্দিকুর রহমান (৪৩) ও মো. কাজল (৩৪), ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মো. কামাল হোসেন ফরাজী, বড়গাঁও এলাকার সাবেক মেম্বার ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. আবদুল হেকিম ফরাজী, ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল ফকির (৪৫), চেয়ারম্যানের ভাই মো. কালাম (৩৫), বড়গাঁও এলাকার মেম্বার জাহাঙ্গীর ফরাজী (৪৬), বড়গাঁও এলাকার রুবেল পালোয়ান (৩২), ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মনির হোসেন পাঠান (৩৮), ২নং ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হাসান (২৮), মোক্তারপুর এলাকার সবুজ মেম্বারের ছেলে এবং নোয়াপাড়া এলাকার মেম্বার সিরাজুল ইসলাম (৪৫) এর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ২৫ জনের বিরুদ্ধে বে-আইনী জনতাবদ্ধে অনধিকার প্রবেশ করে সরকারি কর্মচারীদের মারপিট, সরকারি সম্পদের ক্ষতি সাধন এবং উস্কানির দায়ে ১৪৩, ৪৪৭, ৩৩২, ৩৫৩, ৪২৭, ১১৪ এবং ৩৪ ধারায় কালীগঞ্জ থানায় ২(১০)২৩ নং মামলা দায়ের করেন। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ ফায়েজুর রহমান বলেন, উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপর হামলা ও ভাংচুর অভিযোগে ১৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে রাতভর অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। দ্রুতই আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।