সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে এক নারী দূষিত মাছ খাওয়ায় নিজের হাত-পা হারিয়েছেন। কথাটি শুনলেও অবাক লাগে কিন্তু বাস্তবে এমনটি হতে পারে। জানা গিয়েছিল, তেলাপিয়া মাছ রান্নার সময় সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ না করায় এমনটি হয়েছে। তেলাপিয়া মাছ যে বিষাক্ত বিষয়টি এমন নয়। কিন্তু খবরটি প্রচার হওয়ার পর দেশে অনেকের মধ্যেই উদ্বেগ বেড়েছে। গরীবের আমিষ বলে পরিচিত তেলাপিয়া মাছকে ঘিরেও এই উদ্বেগের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় জানা জরুরি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎসবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান জানান, 'ভিব্রিও ভালনিফিকস' ব্যাকটেরিয়া পানিতে থাকে, যা মানুষের দেহে সংক্রমিত হলে জীবনহানিও হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর প্রায় ৮০ হাজার মানুষ এই ব্যাকটেরিয়ায় সংক্রমিত হন। ঠা-া পানিতে এটি বংশ বিস্তার করতে পারে না। যে পানিতে ভিব্রিও ভালনিফিকস থাকে, সেখানে থাকা মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর শরীরেও এটি থাকে। জলজ প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর বা জীবনহানির কারণ না হলেও এটি মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। তাই মাছ রান্নার সময় সুসিদ্ধ করা দরকার। অর্ধসেদ্ধ মাছ বা ঠিকভাবে রান্না না করলে ক্ষতি হবে। অর্থাৎ সমস্যা তেলাপিয়াতেই নয়। যেকোনো মাছ বা সি ফুডের ক্ষেত্রেই তা হতে পারে। কখন বুঝবেন মাছ সঠিকভাবে রান্না হয়নি? ভিব্রিও ভালনিফিকস ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হলে খাওয়ার পর বমি, পাতলা পায়খানা, তীব্র পেটব্যথা ও জ¦র হয়ে থাকে। খাদ্যে বিষক্রিয়ার লক্ষণ এগুলো। ত্বক সংক্রমিত হলে আক্রান্ত স্থান লালচে হয়ে ব্যথা, গরম অনুভূতি, ফুলে কালচে হয়ে যেতে পারে। সংক্রমণ রক্তে ছড়িয়ে পড়লে জীবনহানির শঙ্কা তৈরি হয়। সাধারণত যাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বা লিভারের রোগ রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি। রক্তনালীতে রক্ত চলাচল কমে যাওয়ায় শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফোস্কা ও গ্যাংরিন হতে পারে। এমন রোগীদের সেপটিক শকে মৃত্যু হয়ে থাকে। প্রতিরোধে কি করবেন? কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে সহজেই ভিব্রিও ভালনিফিকস এড়ানো যায়। অবশ্য দেশে অনেকেই মাছ রান্নার আগে ভেজে নেয়। রান্নার সময় সতর্কতা জরুরি। মাছ অনেকে তরকারি রান্নার জন্য পুরোপুরি ভাজেন না। ওই ভাজা মাছ না খাওয়াই ভালো। ভালোভাবে ভেজে নিতে হবে। আর মাছ খাওয়ার পর এই সমস্যার লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।