মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বরিশালে আক্রমণের পূর্বে রাতের আধাঁরে ডাকাতের বল্লমের আঘাতে নিহত ব্যক্তিকে প্রতারনার মাধ্যমে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভূক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধাগ্রহণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে রাষ্ট্রীয় অর্থে অতিসম্প্রতি তার কবরটিও পাকা করা হয়েছে। ঘটনাটি জেলার গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর গ্রামের। শহীদ মুক্তিযোদ্ধার খেতাব পাওয়া মৃত সোনামদ্দিন মিয়ার নাম শহীদ মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাতিল চেয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন গৌরনদীর বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ হক বীর বিক্রম। বিষয়টি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা আমলে নিয়ে জেলা প্রশাসককে সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। সোমবার (২ অক্টোবর) সকালে আবেদন করার সত্যতা স্বীকার করে বীর বিক্রম এমএ হক জানিয়েছেন, ১৯৭১ সালের ২৬ এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বরিশালে আক্রমণ করার পূর্বে বাটাজোরের তৎকালীণ চেয়ারম্যান সোনামদ্দিন মিয়ার বাড়িতে সংঘবদ্ধ ডাকাতরা আক্রমণ করে সবকিছু লুটপাট করে। ওইসময় ডাকাতের বল্লমের আঘাতে সোনামদ্দিন নিহত হয়। এমএ হক আরও বলেন, ওইসময় আমি ও উজিরপুরের সাবেক সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল ওয়াদুদ ডাকাতদের হাতে সোনামদ্দিনের নিহত হওয়ার খবর পেয়ে তৎকালীণ সময় সরেজমিন পরিদর্শন করেছিলাম। বীর বিক্রম আরও বলেন, অতিগোপনে মৃত সোনামদ্দিন মিয়ার মুক্তিযোদ্ধা সন্তানগণ সোনামদ্দিন মিয়াকে পাক হানদাররা হত্যা করেছেন মর্মে বিভিন্ন কৌশলে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্তি করিয়েছেন যাহার গেজেট নং-৪৮। পরবর্তীতে বাটাজোর এলাকার একটি সড়কের নাম “শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সোনামদ্দিন সড়ক” নামকরণ করে সাইনবোর্ড লাগানোর পর বিষয়টি স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের নজরে আসলে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। অতিসম্প্রতি রাষ্ট্রীয় অর্থে সোনামদ্দিন মিয়ার কবরটিও পাকা করন করা হয়। এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে ডাকাতের হাতে নিহত সোনামদ্দিন মিয়ার নামে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার গেজেট, সনদসহ সকল সুবিদা বাতিলের দাবী জানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন বীর বিক্রম এমএ হক। তিনি (বীর বিক্রম) আরও বলেন, যুদ্ধের সময়ে ডাকাতদের হাতে নিহত সোনামদ্দিন কোন যুদ্ধ করেননি। তারপরেও শহীদ মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তার নাম থাকায় রাষ্ট্রীয় অর্থে তার কবর সংরক্ষণ করা হয়েছে। যা আমরা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিনা। এজন্য তার গেজেট ও মুক্তিযুদ্ধের সকল সুযোগ সুবিধা বাতিলের জন্য আবেদন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সোনামদ্দিন মিয়ার ছেলে ইসমাত হোসেন রাসু বলেন, ১৯৭১ সালের ২৯ এপ্রিল দিবাগত রাতে আমাদের বাড়ির পাশের কর্মকার বাড়িতে স্বাধীনতা বিরোধীরা হানা দেয় এবং হামলা করে। ওই বাড়ির লোকজনদের ডাকচিৎকার শুনে আমার বাবা বের হলে তাকে (সোনামদ্দিন) স্বাধীনতা বিরোধীরা হত্যা করে। তিনি আরও বলেন, আমার বাবাকে যারা হত্যা করেছে তারা সবাই রাজাকার ও লুটার। এ বিষয়ে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবু আব্দুল্লাহ খান বলেন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে এ-সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলে জন্য একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।